বুধবার, মে ১৫, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউখালেদা-সিইসি ফোনালাপ : রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা

খালেদা-সিইসি ফোনালাপ : রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা। বলা হচ্ছে, সে বৈঠকে ১৮দলীয় জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিইসির ফোনালাপ হয়েছে। দূত মারফত নির্বাচন কমিশনে বিরোধী নেতা কিছু বার্তাও পাঠিয়েছেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও বিএনপির নীরবতা সে আলোচনাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।

গত রোববার রংপুর ও সোমবার রাজশাহীতে ১৮দলের দু’টি জনসভায় দেয়া বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে মেরুদণ্ড সোজা রাখা, চাপে থাকলে পদত্যাগ করার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি দলীয় সরকারের আনুগত্য দেখালে জনগণ ঘর থেকে বেরুতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সে সফরে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান নিজেও। কিন্তু উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা ফিরেই সেদিন বিকালে নির্বাচন কমিশনে ছুটে যান ড. মঈন খান। সেখানে সিইসির সঙ্গে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেন। কিন্তু বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে মুখ খোলেনি কোন পক্ষই।

এদিকে সিইসির সঙ্গে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এ সদস্যের দীর্ঘ বৈঠক নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দেয় রাজনৈতিক মহলে। নির্বাচন কমিশনের একটি অসমর্থিত সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বৈঠকে বিরোধী নেতার সঙ্গে সিইসির ফোনালাপ হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে ফিরে নিজের মোবাইলটিও বন্ধ রাখেন ড. মঈন খান। রাতে সাংবাদিকরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ও বিরোধী নেতার সঙ্গে সিইসির ফোনালাপের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে সরাসরি অস্বীকার করেননি। এতে রাজনৈতিক মহলে আলোচনাটি আরও দৃঢ়তা পায়।

এদিকে ফোনালাপের সত্যতা নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হলেও নির্বাচন কমিশন এবং বিএনপির কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি মিথ্যা নয়। সূত্র আরও জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে পেরেছে সরকার একদলীয় নির্বাচনের আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই গুরুত্বের সঙ্গে কমিশনকে সতর্ক করে কিছু বার্তায় পাঠায় বিএনপি। ড. মঈন খানের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করে বিরোধী নেতার সঙ্গে কথার আগ্রহ প্রকাশ করেন সিইসি। কিন্তু বিরোধী নেতাকে ফোনে পেতে কিছু সময় দেরি হয়। ফলে তাদের বৈঠকটি দীর্ঘায়িত হয়। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিইসিকে ফোনে সংযোগ ঘটিয়ে দেন ড. মঈন খান।

এ সময় খালেদা জিয়া সিইসিকে বলেন, সাংবিধানিক পদে আছেন, পদের মর্যাদা রক্ষা করুন। পদে থাকতে চাইলে মেরুদণ্ড সোজা রেখে দায়িত্ব পালন করুন। না পারলে পদত্যাগ করে চলে যান। জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের হাত-পা বাঁধা। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি। আমরাও চাই আগামী নির্বাচনটি যেন সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

সিইসিকে ফের খালেদা জিয়া বলেন, সকল দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন না। সাংবিধানিক পদে বসে সরকারের অনৈতিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন না। এ সরকারের সময় বেশি নেই, তারা আপনাদের শেল্টার দিতে পারবে না। এ সময় খালেদা জিয়া বিএনএফ-কে নিবন্ধন দেয়ার তোড়জোড়ের কারণ কি জানতে চান। সিইসি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে জানান, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে চাপ রয়েছে।

খালেদা জিয়া এ সময় সিইসিকে সাহস দিয়ে বলেন, মেরুদণ্ড সোজা রেখে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করলে জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন, ইতিহাসে নিজেদের নাম দেশপ্রেমিকের কাতারে রাখবেন নাকি আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। এখন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলছে, আপনাদের আচরণ দেখে সামনে কমিশনের প্রসঙ্গটিও যুক্ত করা হবে। ফোনালাপের এক পর্যায়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সংশোধিত আরপিও বাস্তবায়ন না করা ও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি না নিতে সিইসিকে সতর্ক করে দেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রথমবারের মতো বর্তমান সিইসির সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এদিকে বৈঠক প্রসঙ্গে গতকালও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি বিএনপি এবং নির্বাচন কমিশন কোন পক্ষই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ