রবিবার, মে ১২, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউপাঁচশ কোটি টাকা জাতীয় নির্বাচনে

পাঁচশ কোটি টাকা জাতীয় নির্বাচনে

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনের জন্য সরকার কমিশনের জন্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও তা যথেষ্ট নাও হতে পারে বলে মনে করছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। এ জন্য বাড়তি টাকা চাওয়ার প্রস্তাব দেবে কমিশন।

কমিশন সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার যে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তা নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে আরও টাকা চেয়ে নতুনভাবে প্রস্তাব পাঠনো হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ৯৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। নির্বাচন পরিচালনা, প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন উপকরণ কিনতে ব্যয় হবে এই টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক টাকা ব্যয় হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ১৬৫ কোটি টাকার বেশি। এবার পাঁচশ কোটি টাকা কেন লাগবে, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোটার বেশি থাকবে। এ জন্য ভোটকেন্দ্রও হবে বেশি। আবার কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আবার ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মীদের পারিশ্রমিকও বেশি দিতে হবে। আবার আগে পারিশ্রমিক দেয়া হতো না অনেককে। আগামীতে তাদের তা দেয়া হবে। এসব কারণেই বাড়বে খরচ।

এখনও আগামী নির্বাচনের বাজেট চূড়ান্ত করেনি কমিশন। তবে খাতওয়ারি যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে প্রতিটি খাতেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বর নির্বাচনের চেয়ে বেশি খরচ ধরা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খরচ ধরা হয়েছে দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ধরা হয়েছে আরও বেশি।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের এক সভায় প্রস্তাবিত এই বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, প্রস্তাবিত এই বরাদ্দের কিছু খাত পরিবর্তনও হতে পারে।

খরচের পরিকল্পনা: আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোটকক্ষ প্রস্তুত, কেন্দ্র সংস্কারসহ নানা কাজে কেন্দ্র প্রতি তিন হাজার টাকা করে বরাদ্দ ধরা হয়েছে। গত নির্বাচনে এই বরাদ্দ ছিল অর্ধেক। আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থাকছে ৪৫ হাজার। বর্তমানে এই সংখ্যা ৩৮ হাজার। দুটি নির্বাচনেই অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্মাণ ও প্রতিটি অস্থায়ী কক্ষ ভাড়ার জন্য ১০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আগে এ খাতে ছিল তিন হাজার টাকা। সংসদ ও উপজেলা দুটি নির্বাচনেই অস্থায়ী ভোটকক্ষ ও অতিরিক্ত প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য ১ হাজার টাকা। আগে কেন্দ্র ও কক্ষের জন্য ছিল তিন হাজার টাকা।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রস্তাব রাখা হয়েছে যথাক্রমে তিন হাজার, দুই হাজার ও দেড় হাজার টাকা। গত নির্বাচনের সময় তা ছিল তিন ভাগের একভাগ।

ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য সাদা কাগজ, কার্বন কাগজ, বল পয়েন্ট কলম, মোমবাতির মতো পণ্য কিনতে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রতিকেন্দ্রের জন্য লাগবে চারশ টাকা। গত নির্বাচনে এই খাতে ব্যয় হয়েছে তিনশ টাকা। কমিশন থেকে নির্বাচনী এলাকায় মালামাল পাঠাতে বরাদ্দ দেয়া হবে ৪০ হাজার টাকা। গত নির্বাচনে তা ছিল ৩০ হাজার টাকা। জেলা সদর থেকে থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসে ব্যালট পেপারসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী আনা নেয়ার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। যা আগে ছিল ১০ হাজার টাকা।

রিটার্নিং কর্মকর্তার ডাক, ফ্যাক্স আপ্যায়ন ও আনুষঙ্গিক খরচ ধরা হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যা ছিল ৩৫ হাজার টাকা। রিটার্নিং কর্মকর্তার যানবাহন ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ দেড় থেকে তিন লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে যা ছিল ৭৫ হাজার টাকা। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার যানবাহন ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে তা ছিল ৪০ হাজার টাকা।

মাঠ পর্যায়ে কমিশনের মতবিনিময় বৈঠকের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে গড়ে ১০টি বৈঠকের জন্য ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনের সময় এই খরচ ছিল পাঁচ হাজার টাকা। এভাবে সব খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি আগে বরাদ্দ ছিল না, এমন অনেক খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন।

যেমন সাধারণ নির্বাচনে ইসি সচিবালয়ের জন্য নিজস্ব পর্যবেক্ষকের দুই দিনের জন্য ভিডিও ক্যামেরা ভাড়া বাবদ প্রতি পর্যবেক্ষক প্রতিদিনের জন্য সংসদ নির্বাচনে পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। গত নির্বাচনে এ ক্ষেত্রে কোনো বরাদ্দ ছিল না। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরিষ্কার করা, কুলি খরচ ও পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি ব্যালট বাক্সের জন্য ১০ টাকা হারে বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে কমিশন। আগে এ খাতে কোনো বরাদ্দ ছিল না ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ