স্টাফরিপোর্টার🙁বিডিসময়২৪ডটকম)
ছাত্রলীগ যুবলীগের টেন্ডার সন্ত্রাসে বিব্রত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামে রেলওয়ে, বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), সিটি করপোরেশন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্রই টেন্ডারবাজদের দৌরাৎেদ্য ভুক্তভোগীরা অসহায়। কর্ণফুলীর বালি বিক্রি থেকে শুরু করে রিকশা চুরির ভাগ-ভাটোয়ারায়ও ভাগ বসায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘ দিন বিদেশে পলাতক ছিলেন দেশে ফিরে সেই সন্ত্রাসীরাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। ‘ফোর স্টার’ ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপসহ নানা নামে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কায়েম করেছে এক বিকল্প প্রশাসন। এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, সার্বিক অবস্থা মনিটরিং করছে পুলিশ। কাউকেই দলীয় বিবেচনায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সন্ত্রাসীদের পুরনো তালিকার পাশাপাশি নতুন করে প্রভাব বিস্তারকারীদের নজরে আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মহানগর পুলিশের প্রায় দেড় যুগ নজরে আনা হচ্ছে। উল্লেখ্য, মহানগর পুলিশের প্রায় দেড় যুগ আগে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে উত্থিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় সংখ্যাধিক সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত। ইতোমধ্যে দুই দুই বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এই তালিকায় বড় কোনো সংস্কার আসেনি। দলের সম্মেলন থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কিংবা প্রকৃতির নৈসর্গিক পরিবেশে চা খানা, আড্ডাস্থল, অফিস পাড়া কোনোটাই বাদ যাচ্ছে না সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের তাণ্ডব থেকে। ক্ষমতাসীন প্রতাপশালীরা আবার যোগসাজশ করেছে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারকালীন প্রভাবশালী সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর সঙ্গে। কোথাও দলীয় নীরব ম“, কখনো প্রশাসনের কুম্ভকর্ণের ভূমিকায় ক্রমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো।
ক্ষমতাসীন দলের শুভার্থীরা বলছেন, দলে ‘চেইন অব কমান্ড’ না থাকায় এসব প্রতাপের লাগাম ধরা সম্ভব হচ্ছে না। আন্তঃকোন্দল ক্রমে উসকে দিচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নির্ভরযোগ্যরা জানান, সুবিধাভোগী দলের নাম ব্যবহারকারী সন্ত্রাসী টেন্ডারবাজদের প্রতাপে তৃণমূল পর্যায়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শীর্ষ নেতাদের অনেকের মতে বিশেষ করে মহানগরে দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়ায় ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীনতায় চলে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যে কারণে সন্ত্রাস-টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না দলটি। সোমবার রেলওয়ের কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে সৃষ্ট হামলায় দুজন নিহতের পর ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিয়ে নতুন করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। এর আগে গত ১১ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে বিলবোর্ড উচ্ছেদে গিয়ে ছাত্রলীগ নামধারী বিলবোর্ড সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে পড়েন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন। এরও প্রায় পাঁচ মাস আগে খোদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল মালেক জনিকে আন্দরকিল্লার দলীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেই হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাদের একটি অংশ। নিহত হয় জনি। এ ঘটনার পর কেন্দ্রীয় একজনসহ চার ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়। হত্যাকাণ্ডটির সাড়ে পাঁচ মাসেও আসামিরা একজনও গ্রেফতার হয়নি। বরং প্রকাশ্যে দলীয় ব্যানারে সক্রিয় দেখা গেছে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দুই নম্বর আসামি ফরহাদুলকে। জনির রক্তের দাগ না শুকাতেই সিআরবিতে আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর এখন দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা। রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য দীর্ঘদিন ধরে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হিসেবে বিদেশে পলাতক থাকা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর সম্প্রতি বেশ সক্রিয়। তার পাশাপাশি চট্টগ্রাম রেল সদরে টেন্ডার সন্ত্রাসে যুবলীগের শামীম, মশিউর ও ছাত্রলীগের লিমন গ্রুপের প্রতাপে সাধারণ ঠিকাদাররা অতিষ্ঠ। এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সন্দ্বীপে জলবায়ু ফান্ডের আওতায় বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার নিয়ে চলছে হরিলুট। হাটহাজারির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কথিত ছাত্রলীগ সমর্থিত টেন্ডার সন্ত্রাসীদের চাঁদা দাবির মুখে খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে। একই কারণে চবিতে বন্ধ জিমনেসিয়াম নির্মাণ কাজও। পাউবোর টেন্ডার সন্ত্রাসীরা জনৈক জহিরুল ইসলাম ও সাইফুল আলম প্রকাশ কালা আলমের মদদে চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব। এ দুই টেন্ডার সন্ত্রাসীর মদদে বিপথে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের স্থানীয় কজন। এদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে বিগত জোট সরকারের সুবিধাভোগী, কারাবন্দী বিএনপি নেতা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী অনুসারীদের। পাউবোতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান “িার, ইসরাইল ও সেলিম, সোহেলদের প্রতাপে দিশাহারা প্রকৃত ঠিকাদাররা।
এখানে শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ নয়, পাউবোর একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর পুত্র এবং একজন সাবেক প্রকৌশলীর নিকটাৎদীয়রাও জড়িত। এদিকে নগরীর খুলশী-পাহাড়তলীতে ভূমি দখল-বেদখলে মূর্তিমান এক ত্রাসের নাম ‘যুবলীগ নেতা’ মশিউর রহমান “িার। দীর্ঘ দিন পলাতক থাকা এ সন্ত্রাসী ফের সক্রিয় হয়ে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হয়েও পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরছে। বহুল আলোচিত শিল্পপতি জাকির হত্যার আসামি “িার ডেবার পাড়ে ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা, ভূঁইয়া গলিতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা প্রচেষ্টায় আসামি “িারের ওপর ক্ষমতাসীনরা অনেকেও অতিষ্ঠ। এদিকে তেল সেক্টরে টেন্ডার সন্ত্রাসে জড়িতদের মধ্যে দেবু, নাহিদ, সাজ্জাদের প্রতাপ, সিটি করপোরেশনে বিলবোর্ড সন্ত্রাসে পুরনোদের ছাড়িয়ে নিতে নতুন নিয়ম না মানা সন্ত্রাসী গ্রুপের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নামে কেউ চাঁদাবাজি টেন্ডার সন্ত্রাসে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছেন দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী অবশ্য বরাবরই শাসনের চক্ষুু দেখান যুবলীগ-ছাত্রলীগকে। তার মতে, টেন্ডার চাঁদাবাজরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কেউ হতে পারে না। ছাত্র ও যুব স্কোয়াড গঠনের মধ্য দিয়ে এসব সামাজিক সন্ত্রাস মোকাবিলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।