বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়মানুষের আস্থা অর্জন করা গেলে ব্যবসায় উন্নতি নিশ্চিত : খলিলুর রহমান

মানুষের আস্থা অর্জন করা গেলে ব্যবসায় উন্নতি নিশ্চিত : খলিলুর রহমান

kds Khalilদেশের খ্যাতিমান শিল্পপতি, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেছেন, বিশ্বাসই ব্যবসার মূল ভিত্তি। মানুষের আস্থা অর্জন করা গেলে ব্যবসায় উন্নতি নিশ্চিত। পারিবারিকভাবেই ব্যবসার পরিবেশ পেয়েছি আমি। পরিবারের সবাই আমাকে বিশ্বাস করতেন বলেই তাঁদের বিশ্বাসের কোনো অমর্যাদা করিনি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এলএনজির কোনো বিকল্প নেই । যত দ্রুত গ্যাস সমস্যার সমাধান হবে ব্যবসা শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য তা ততই মঙ্গল। যদি সময় মতো নিজেদের তৈরি করা না যায় তা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

যে ক’জন প্রজ্ঞাবান শিল্পোদ্যোক্তার হাত ধরে চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ব্যাংকসহ প্রায দুই ডজন শিল্পখাতে বিনিয়োগ রযেছে কেডিএস চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হচ্ছে বন্দর। কাজেই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব সত্যিকারভাবে উপলদ্ধি করার সময় এসেছে।

খলিলুর রহমান চট্টগ্রামের শিল্পখাতের অন্যতম প্রানপুরুষ। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, কেডিএস গার্মেন্টস, সাইন্দার গার্মেন্টস, এইচ এন এ্যাপারেলস, মুন এ্যাপারেলস, কেএনএস এন্টারপ্রাইজ, কেডিএস এ্যাপারেলস, কেডিএস ক্যুইলটিং, স্টার এ্যাপারেলস, মডার্ন এ্যাপারেরস, কেডিএস হাইটেক গার্মেন্টস, কেডিএস কোয়ালিটি এ্যসুরেন্স সেন্টার, কেডিএস ওয়াসিং প্ল্যান্ট, কেডিএস টেক্সটাইলস মিলস, কেডিএস স্ক্রিন প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কেডিএস লজেস্টিক, কেডিএস পলি এন্ডাস্ট্রিজ, কেডিএস প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, কেডিএস প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কেডিএস লেবেল প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কেডিএস কটন পলি থ্রেড ইন্ডাস্ট্রিজ, কেআইওয়াই স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, কেওয়াই স্টিল মিলস, কেওয়াইসিআর কয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, কেডিএস ইনফরমেশন টেকনোলজিস, স্টিল এক্সেসোরিজ, মেসার্স এ এইচ সিন্ডিকেট, মেসাস সেলিম এ্যান্ড কো:, কেডিএস আইডিআর রহমান এন্ড কো: (ফসিল এ্যান্ড পটিয়া সিএনজি)।

চট্টগ্রামের পটিয়ার ছেলে মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের জন্ম ১০ এপ্রিল ১৯৪৫। বাবা মৃত আলহাজ আবুল খায়ের। মা মৃত আলহাজ ফাতেমা বেগম। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত জেদি ছিলেন হাস্যোজ্বল এই মানুষটি। ভাবনার আকাশটা পরিস্কার ছিলো বলে চলার পথে কখনো কোথাও রুদ্ধ হয়নি তাঁর পথ। তিনি বলেন, আমার চিন্তাশক্তি আমার লক্ষ্যের প্রতি নিবেদিত। ফলে আমি যা ভেবেছি তাই করেছি এবং তাতেই সফল হয়েছি।

বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করা চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এই শিল্পোদ্যোক্তা ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছেন কমার্সিয়াল ইমপোর্টেন্ট পারসন (সিআইপি) হিসেবে। তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেই ব্যবসার পরিবেশ পেয়েছি আমি। পরিবারের সবাই আমাকে বিশ্বাস করতেন বলেই তাঁদের বিশ্বাসের কোনো অমর্যাদা করিনি।

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক আগেই কেডিএস গ্রুপের সুনাম ছড়িয়েছে বহির্বিশ্বে। পোশাক খ্যাতের শিল্প বিপ্লবের কারণে দেশের সীমানা পাড়ি দিয়ে নোঙর তুলেছে ইউএসএ, কানাডা, ইউরোপ, স্কানডিনাভিয়া কান্ট্রিস, সাউথ এশিয়া, সাব কন্টিন্যান্ট, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, থাইল্যান্ড, জার্মানী, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, মালওয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, দুবাই, মোজাম্বিক, ঘানা, মালয়, তানজানিয়া, সিয়েরা লিয়ন, ঘাবন নাইজেরিয়া, ফারিস্ট এবং মধ্যপ্রাচ্য।

শিল্পকারখানার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও তিনি চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, খলিলুর রহমান মহিলা কলেজ, খলিল মীর ডিগ্রি কলেজ, খলিলুর রহমান গার্লস হাইস্কুল, তরতলা বেলখাইন মোহাম্মদি হাইস্কুল, খলিলুর রহমান শিশু নিকেতন, খলিলুর রহমান কালচারাল একাডেমি, উত্তর খরগ্রাম সাবেরিয়া খলিলিয়া ইসলামীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা, সাইন্দার গাউসিয়া তৈয়্যেবিয়া দেলোয়ারা বেগম সুন্নিয়া আলীম মাদ্রাসা, সাইন্দার আল হাজি আবুল খায়ের সুন্নিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। এছাড়া তিনি এস এ নূর হাইস্কুল, হাফেজুর রহমান গার্লস হাইস্কুল এবং সালেহ নূর কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য। চট্টগ্রামে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো, নতুন নতুন শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি করাসহ নুতন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বিশেষ ভুমিকা রেখেছেন তিনি।

তরুণ ও অনভিজ্ঞ শিল্পোদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে তিনি গড়ে তুলেছেন একাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পটিয়া সমিতি, চট্টগ্রাম; বাংলাদেশ সিআর কয়েল ম্যানুফেকচারিং এক্সপোর্টস এসোসিয়েশন ও প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স লি:।

এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নাশন্যাল ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক লি:, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক লি:, স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার নর্দার্ন জেKalil-KDSনারেল ইন্স্যুরেন্স এবং বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
বিজিএমইএ-এর সাবেক প্রথম সহসভাপতি, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনেটইনার ডিপো এসোসিয়েশন (বিআইসিডিএ) সহ-সভাপতি ছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর এই শিল্পোদ্যোক্তা। একাধারে যমুনা ফিউচার পার্ক রিসোর্ট ও প্রগতি ইন্সুরেন্স লিমিটেডের পরিচালকও তিনি।

পরপোকারী এই শিল্পপতি মনে করেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হচ্ছে চট্টগ্রাম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম একটি আধ্যাত্মিক ও পবিত্র শহর। উদ্দেশ্য স্বচ্ছ হলে যেকোন ব্যক্তির পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে চোখ-কান খোলা রেখে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করতে হবে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিজ দেশ ছাড়াও পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ সম্মাননা কর্ম উদ্যমি এই মানুষটিকে। পণ্যের গুনগত মানের জন্য ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯২, ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০০, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে তিনি সম্মাননা পান স্পেন থেকে। একইভাবে স্ট্রাটেজি পার্টনার হিসেবে আউটস্ট্যান্ডিং পারফরমেন্স ও পণ্যের মান সন্তোষজনক রাখায় তাঁকে ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০০, ২০০১ ও ২০০২ সালে সম্মাননা পান আমেরিকা থেকে।

তিনি ‘কে মার্ট কর্পোরেশন’ থেকে সম্মাননা পান ২০০৯ সালে। এছাড়া ট্রেড লিভার ক্লাব স্পেন থেকে পরপর পাঁচবার সম্মাননা দেওয়া হয় খলিলুর রহমানকে। একইভাবে ওয়ালমার্ট কানাডা এবং ইউকে থেকে তাঁকে সম্মাননা দেয়া হয় ২০০৪, ২০০৫, ২০০৯ এবং মাদ্রিদ থেকে সম্মাননা পান ১৯৯২ সালে।

পোশাক রপ্তানিতে প্রেসিডেন্ট গোল্ড ট্রপি পান ১৯৮৫, ১৯৮৭, ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১ এবং ২০০২ সালে। বাটেক্সপো এ্যাওয়ার্ড পান ১৯৯৯ ও ২০০২ সালে, কাফেক্সপো সম্মাননা পান ২০০৯ এ। এছাড়া গুণী এই ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময় সম্মাননা জানান শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, জনতা ও যমুনা ব্যাংক ।

ভাটিয়ারী গল্ফ ক্লাব, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন লায়ন্স ক্লাব, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, সিনিয়র্স ক্লাব, জিরি জনকল্যাণ ট্রাস্ট এবং মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ সিআই শিট এ্যান্ড জিপি এসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ