সোমবার, মে ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়রোববার উত্থাপিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধন বিল

রোববার উত্থাপিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধন বিল

দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে রোববার উত্থাপিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ‘সংবিধানের (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক রোববার বিলটি সংসদে উত্থাপন করবেন। এরপর বিলটি যাচাই-বাছাই শেষে সংসদে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করা হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এ বিলটি জমা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের পর সংসদে কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে। আনীত বিলে কোনো বিচারপতির ‘অসদাচরণ বা অসামর্থ্য’ সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণ আইন করে সংসদ নিয়ন্ত্রণ করার শর্ত সংশোধিত প্রস্তাবে রাখা হয়েছে। এর আগেই চলতি অধিবেশনে বিলটি পাস হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ১৮ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত বিল মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়। এর পরপরই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, এ অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে।

এদিকে, সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, কোনো বিচারপতির অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে ‘তদন্ত ও প্রমাণ’ আইন করে সংসদ নিয়ন্ত্রণ করার শর্ত সংশোধিত প্রস্তাবে রাখা হয়েছে। এই সংশোধনীর আলোকে ৩ মাসের মধ্যে আরেকটি আইন হবে, যাতে অভিযুক্ত বিচারককে অপসারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে। পৃথক এই আইনটির মাধ্যমে বিচারকদের অসামর্থ্য, অসদাচরণ ও অভিযোগ সম্পর্কে কীভাবে তদন্ত হবে, সংসদ কীভাবে প্রস্তাব নেবে এবং রাষ্ট্রপতি কোন প্রক্রিয়ায় তা অনুমোদন করবে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে।

বাহাত্তরের সংবিধানে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের অনুমোদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের যে বিধান ছিল, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটিই আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের বিধি বাদ পড়ে যাবে।

বাহাত্তরের সংবিধানে এই ৯৬ অনুচ্ছেদটি থাকলেও জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এক সামরিক ফরমানে  ৯৬ অনুচ্ছেদটি সংশোধন করে এ ক্ষমতা জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে অর্পণ করা হয়। এটি ১৯৭৮ সালে জাতীয় সংসদের অনুপস্থিতিতে করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সংবিধানেও অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে রয়েছে। বিলটি পাস হলে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার সমর্থনে সংসদে প্রস্তাবক্রমে এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে বিচারককে অপসারণ করা যাবে।

তবে কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এ ছাড়াও কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরযুক্ত চিঠি দিয়েও পদত্যাগ করতে পারবেন। নবম সংসদেও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। পরে ২০১১ সালে এ বিষয়টি ফের উঠে আসে। এরপর ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। তখন থেকেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠতে থাকে।

প্রসঙ্গত, ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান দিবস। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল।  এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকেই এটি কার্যকর হয়েছিল। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানে মোট ১৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে। আর ৭ সেপ্টেম্বর সংসদে উত্থাপন করা হবে ষোড়শ সংশোধনী।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ