আসন্ন জাতীয় বাজেট (২০২৪-২৫) উপলক্ষে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘শ্রমিকদের জন্য কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক ১৮ মে ২০২৪ ইং শনিবার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোল টেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, সভাপতি- এড.মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
লিখিত বক্তব্যে এড.ইসমাইল বলেন, জাতীয় বাজেটে শিল্প বাজেট, কৃষি বাজেট, স্বাস্থ্য বাজেট, শিক্ষা বাজেট, প্রতিরক্ষা বাজেট ইত্যাদি বাজেট থাকলেও আলাদাভাবে শ্রমিকদের জন্য কোন বাজেট বরাদ্দের খাত নেই। রেশনিং ব্যবস্থা চালুর জন্য গার্মেন্টস জিডিপির এই উন্নয়নের সুফল শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন বা অগ্রগতি ঘটায়নি। ব্যাপকভাবে বেড়েছে আয় বৈষম্য, স্বাস্থ্য বৈষম্য, শিক্ষা বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য ও খাদ্য বৈষম্য।
প্রধান অতিথি, শাহজাহান খান বলেন, বাজেটে শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা, চিকিৎসা, আবাসন ব্যবস্থার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া দরকার। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র অনেক সাবেক সভাপতি এখন সংসদ সদস্য, তাদেরকেও এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সংসদে কথা বলা উচিত। মালিক প্রতিনিধি ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা সংসদে রেশনিং ব্যবস্থা, চিকিৎসা, আবাসন ব্যবস্থার বিষয়ে মত বিনিময় করলে সংসদে উপস্থাপন করা সহজ হবে। এবারের সংসদ অধিবেশনে আমি এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরবো।
বিকেএমইএ, নির্বাহী সভাপতি, মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিশ্ববাজারে গার্মেন্টস শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এবং টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হলে শ্রমিক, মালিক ও জাতি সকলেই উপকার পাবে।
বিজিএমইএ, সহ-সভাপতি, নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতিযোগী দেশ সমূহ শিল্প ব্যবস্থা অগ্রগতির সহায়ক পলিসি বা নীতিমালা দিয়ে থাকে বাংলাদেশে শিল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঐরকম সহায়ক পলিসি না পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই কারণে জাতীয় বাজেটে রেশনিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য চাল, ডাল, তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রদান করা হলে শ্রমিক পরিবারে খাদ্য নিশ্চয়তা আসবে এবং শিল্পের অস্থিরতাও কমে আসবে। এতে করে বায়রদের সহায়ক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হলে অর্ডার আরও বৃদ্ধি পাবে।
সিপিডি, গবেষণা পরিচালক, ড.গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগে শুনতাম শিল্প বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে কিন্তু দেখতে পাচ্ছি শিল্প বেঁচে আছে কিন্তু শ্রমিকরাই বেঁচে থাকতে পারছে না। এখন শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে এই বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। জিডিপিতে যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান সেই শ্রমিকদের পিছনে রেখে বাজেট হতে পারে না।
কাজী আজিজুল ইসলাম, সিনিয়র বিজনেস এডিটর ৭১ টিভি বলেন, রাজনীতি কিনে নেতার সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু রাজনীতি করে নেতা হচ্ছে না। বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিফলন, অর্থনীতিটাই শ্রমিকদের সৃষ্টি করা। বাজেটে শ্রমিকদের বরাদ্দ করা মানবাধিকার দাবি।
বিলস, নির্বাহী পরিচালক, সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শ্রমজীবী মানুষের জন্য যে বরাদ্দ গুলো থাকা জরুরি সেটা আমরা দেখি না।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, শিল্পে শ্রমিকদের জন্য জাতীয় বাজেটের ১.৫% বরাদ্দ হলেই ১০ হাজার কোটি টাকা যোগার হয়ে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৭ লক্ষ ৫৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৭২-১৯৭৩ সনে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, বর্তমানে ৯৬৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭২ সালে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৩২% বর্তমানে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৬%। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের কোন নিজস্ব আবাসন নেই।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন- শ্রমিক নেতা- আবুল হোসেন, সালাউদ্দিন স্বপন, শহিদুল ইসলাম সবুজ, জলি তালুকদার, কাজী রহিমা সাথী, লাভলী ইয়াসমিন, শবনম হাফিজ, সুলতানা আক্তার, কে.এম মিন্টু, রাজু আহমেদ, নুরুল ইসলাম, মাহমুদ হোসেন এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।