২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেটে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ছয় হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকার প্রাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ। নানা কারণে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের যে নির্ঘণ্ট প্রণয়ন করি তা বিশ্বব্যাংকের নির্ঘণ্টের সাথে সামঞ্জস্য ছিল না। আমরা এই প্রকল্পে অধিকতর বিলম্ব পরিহারের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে এর প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, “পদ্মাসেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ প্রমাণ বা খণ্ডনে এবং কানাডার মামলাও শেষ হতে আরো অনেক সময় লাগবে। সেজন্য আমাদের অপেক্ষা করা অনুচিত। আমাদের প্রত্যাশা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই মামলাটির দ্রুত রহস্য উদঘাটন করবে।”
তিনি বলেন, “জাজিরা সংযোগ সড়ক এবং সংশ্লিষ্ট নদী শাসনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।” বাজেটে মন্ত্রী বলেন, “৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসনের কাজটি সারা বিশ্বে শুধুমাত্র কয়েকজন ঠিকাদারই করতে সক্ষম। এজন্য পূর্ব-নির্ধারিত এইসব ঠিকাদারদের প্রস্তাব অতিসত্ত্বর আমরা আহবান করছি। তাই আমি মনে করি যে, এই দুই কাজের জন্য চুক্তি সম্পাদন সরকারের বর্তমান মেয়াদকালে সম্ভব হবে।”
তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য ভারতের অনুদান ২০ কোটি ডলার আমরা ব্যবহার করবো। আমি এও আশা করছি যে, এই প্রকল্পের জন্য ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এবং আরো কতিপয় উন্নয়ন সহযোগীর সমর্থন আমরা যথাসময় আদায় করত পারবো।”
পদ্মা প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি করলেও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়নের পর চলতি বছর জানুয়ারির শেষে তাদের না বলে দেয় সরকার।
এরপরই সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায়।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ও চীনসহ কয়েকটি দেশের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরে মালয়েশিয়া ও চীন।
মালয়েশিয়ার ২৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাবে বলা হয়, টোল আদায়ের মাধ্যমে ২৬ বছরে এই অর্থ তুলে নেবে তারা। লাভের ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫২০ কোটি ডলার মালয়েশিয়া নেবে। বাকি ৩০ শতাংশ বাবদ বাংলাদেশ পাবে ২১৯ কোটি ডলার।
অন্যদিকে স্পেয়ার এনার্জি ক্রিয়েশনস বেইজিং লিমিটেডের নেতৃত্বে কয়েকটি চীনা কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম পদ্মা সেতু নির্মাণে ১৯৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়।
তাদের প্রস্তাবে রাজি থাকলে প্রকল্প ব্যয়ের ২৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১৯৫ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের যোগান দেবে। বাকি অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে, যা মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ।
এ জন্য চীনা কনসোর্টিয়াম কোনো সুদ নেবে না। তারা টোলও তুলবে না। প্রতি মাসে ৮ দশমিক ১৫ মিলিয়ন বা বছরে মোটামুটি ১০ কোটি ডলার হিসাবে ২০ বছরে চীনা বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
গত দুই বছরে দেশে ও দেশের বাইরে নানা কারণে আলোচিত ছিল পদ্মা সেতু।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সড়ক যোগাযোগ ও রেলপথ খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে ১৮ হাজার ২৩২ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।