শনিবার, জুন ১, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউনিয়মের তোয়াক্কা না করে এইচ টি ইমামের প্রতিষ্ঠানকে ৮ কোটি টাকা ঋণ...

নিয়মের তোয়াক্কা না করে এইচ টি ইমামের প্রতিষ্ঠানকে ৮ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিডিবিএল

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

একটি ঋণের জন্য যেখানে শত শত উদ্যোক্তা ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে মাসের পর মাস ঘুরছেন, সেখানে নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানকে আট কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। কেননা এই প্রতিষ্ঠানের ১০ ভাগ মালিকানায় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। আর এ কারনেই সোমবার ঋণটি মঞ্জুর করেছে ব্যাংকটি।

জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত পিপিএস প্ল্যাস্টিক এন্ড পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাস তিনেক আগে বিডিবিএলের কারওয়ান বাজার শাখায় ঋণের জন্য একটি আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন জনৈকা শায়লা শারমীন। আবেদনটি সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধান কার্যালয় যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা না করেই এইচ টি ইমামের প্রভাবে সোমবার ব্যাংকের ১০১তম পর্ষদ সভায় ঋণটি মঞ্জুর করেছেন বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে। আরো জানা গেছে, এই ঋণ অনুমোদনের জন্যই আজকের এই পর্ষদ সভা ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা কোন অনলাইন প্রত্রিকায় মন্তব্য দেই না। ঋণ আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পিপিএস প্ল্যাস্টিকের ১০ শতাংশ মালিকানা এইচ টি ইমামের। বাকি ৯০ শতাংশ মালিকানা অন্যান্য পরিচালকদের। এদিকে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে, পিপিএস প্ল্যাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কোন শিল্প-কারখানা এখনো স্থাপন করা হয়নি। কেবল কিছু জমি রয়েছে। যার মূল্য আবেদন কৃত লোনের চার ভাগের এক ভাগও না। মূলত জমি অতিরিক্ত মূল্যয়িত দেখিয়ে ব্যাংকের টাকাটি হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই ঋণ নেওয়ার জন্যও আবেদন করেছিলো। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনরর্থায়ন সুবিধা নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে ৮ কোটি টাকা মেয়াদী ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরের জন্য এই ঋণ দেওয়া হবে। আরো জানা গেছে, পিপিএস প্ল্যাস্টিক ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছে গত আগস্টে। ঋণ আবেদনের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও জমা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এত তাড়াহুড়া করে ঋণটি মঞ্জুর করার মূল কারন সরকারের শেষ সময়ে বাড়তি সুবিধা নেয়া।

এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুরেরর বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, প্রতিটি ব্যাংকেরই ঋণ আবেদন যাচাই কমিটি থাকে। নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালাও থাকে। সেসব নীতিমালা আলোকে কমিটি যদি প্রকল্পটিকে অর্থবহ মনে করে, তবে ঋণটি অনুমোদন করা যেতে পারে। অর্থবহ না মানে হলে, ঋণ মঞ্জুর করা উচিৎ হবে না।’ এব্যাপারে কথা বলতে এইচ টি ইম‍ামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে খোজ নিয়ে জানাগেছে, কৃষি ব্যাংক জিয়া পরিষদের সহ-সভাপতি ড. জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই রাজনৈতিক লেবাস পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)এর এমডি পদটি বাগিয়ে নেন। এই ব্যাংকে রাজনৈতিক নিয়োগ, চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ, রিয়েলস্টেট দূর্নীতি, অনৈতিক ঋণ সুবিধা, পরিবহন দূর্নীতি এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লুটোপাটে নেতৃত্ব দেন তিনি। আর এসব অপকর্মে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে। তিন বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত ড. জিল্লুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সাড়ে ৪ বছর ধরে আছেন বহাল তবিয়তে।  এইচটি ইমামের এ ঋণ শোধ করতেই তড়িঘড়ি করে এর অনুমোদনের ‍ ব্যবস্থা করেন ড. জিল্লুর রহমান।

সূত্র: ডিফারেন্ট নিউজকে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ