চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন ভোটাররা। নগরের কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে ভোটারদের সারি। ১৩ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন প্রার্থী। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ নৌকা প্রতীক নিয়ে এবং বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক এ আসনের জন্য লড়ছেন। প্রার্থী ছয় জন হলেও বরাবরের মত আওয়ামী ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশে পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সও কাজ করবে।
প্রসব বেদনা নিয়ে কোনও মাকে যদি শহরে আনতে হয় তবে হয় তিনি পথ থেকেই ফিরে যাচ্ছেন অথবা সেখানেই মারা যাচ্ছেন। এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কথা দিয়েছেন কালুরঘাট সেতু হবে। ওবায়দুল কাদের সাহেবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি আগামী এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কাজ দৃশ্যমান হবে।’ কালুরঘাট সেতুকে চট্টগ্রাম ৮ আসনের নির্বাচনী এলাকার সব চেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচনী প্রচারণায় এসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
মোছলেমের মত বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানও গুরুত্ব দিচ্ছেন কালুরঘাট সেতুকে। কালুরঘাটের সেতু নির্মাণে দুজনের সুর একই হলেও প্রচারণায় আর কিছুতেই মিল নেই চট্টগ্রাম-৮ আসনের এই দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর। মোছলেম উন্নয়নকে গুরুত্ব দিলেও সুফিয়ান বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠাই মূল কথা, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। তবে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন দুজনই।
১১ জানুয়ারি প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে আমার এলাকার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক-চুরি-ডাকাতি থেকে যাতে এলাকা মুক্ত থাকে সেই চেষ্টা করব। সুন্দর পরিবেশে সবাই যাতে মর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থানে থাকতে পারে সকল রাজনৈতিক দল, সকল মত ও পথের মানুষ যাতে থাকতে পারে সেই চেষ্টা থাকবে। কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর প্রতি বিভেদ, সাম্প্রদায়িক বিভেদ না করে যাতে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারি, সেটাই আমার প্রত্যাশা।
কালুরঘাটের পাশাপাশি বোয়ালখালীতে ইকোনমিক জোন করা, বোয়ালখালীতে গ্যাস সংযোগ দেয়ার গুচ্ছ গুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলছেন মোছলেম। ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বোয়ালখালীতে জৈষ্ঠপুরার করলডাঙা এলাকায় ইকোনমিক জোন করার প্রস্তাব দেব। সেখানে অনেক পাহাড়ি জায়গা আছে। সেই সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু দৃশ্যমান ও পুরো এলাকা মাদকমুক্ত রাখার জন্য কাজ করবো।
বোয়ালখালীকে উন্নয়নবঞ্চিত দাবি করে বিএনপি প্রার্থীর দিকে ইঙ্গিত করে মোছলেম বিভিন্ন পথসভায় বলেছেন, ‘এখানে ব্রিজ নির্মাণ খুব জরুরি। তিনি সরকারের সাথেও সম্পৃক্ত নয়। আমি জয়ী হলে যতটুকু সম্ভব অন্য কেউ জয়ী হলে এটা সম্ভব হবে না। আরেকজন যিনি প্রার্থী আছেন তিনি সে ব্যথা বুঝবেন না। কারণ তিনি ওই এলাকার মানুষ নন। আর তার পক্ষে সেতু করাও সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে মোট ১৭০টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে ৫৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যের সমন্বয়ে ১৪টি মোবাইল ফোর্স, ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৬টি টহল দল এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিতে ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমও রয়েছে। ১৭০টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৯৬টি কক্ষে চার লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫ ভোটার ভোট প্রদান করবেন। ভোটগ্রহণে নিয়োজিত রয়েছেন তিন হাজার ৭৫৮ জন কর্মকর্তা।