শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনহেফাজতের ওলামা সম্মেলন আজ, পরিবর্তন আসছে নেতৃত্বে

হেফাজতের ওলামা সম্মেলন আজ, পরিবর্তন আসছে নেতৃত্বে

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

পরিবর্তন আসছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃত্বে। মতিঝিলের ঘটনার চারমাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন।’ সম্মেলনে গঠিত হবে সর্বোাচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম ‘মজলিশে শুরা কমিটি।’ পরিবর্তন আসবে কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে। তবে দলের আমীর ও মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসছেনা। কমিটিতে নতুন করে যোগ হতে পারে ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ)  চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী।
সমালোচিত,বিতর্কিত নয়, ইসলামিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বড় কওমী মাদ্রাসার প্রধানদের নিয়ে গঠিত হবে ২০ থেকে ২৫ সদস্যের ‘শুরা কমিটি’। ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে কমিটি পুনর্গঠন, ১৩ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষানীতি নিয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়েও আলোচনা হবে।দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীর পরিচালনাধীন ফটিকছড়ির বাবুনগর  আজিজুল উলুম মাদ্রাসায় আজ (শনিবার) সকাল ১০টা থেকে সম্মেলন শুরু হবে। ইতিমধ্যে সারাদেশ থেকে হেফাজতের  নেতারা হাটহাজারীতে এসেছেন সম্মেলনে যোগ দিতে।  হেফাজত নেতারা মনে করছেন শুরা কমিটি না থাকার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। দলের গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তে ছিল সমন্বয়হীনতা।হেফাজতের আলোচিত নেতা মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী ও আর একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে হেফাজতের নয়া কমিটিতে  না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। দলের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা রুহীর কারণে হেফাজতের সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রায় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন।  তাঁর বিরুদ্ধে হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কাছে খোলা চিঠিও দিয়েছেন  হাটহাজারী মাদ্রাসার সচেতন বিদ্রোহী শিক্ষক ও ছাত্ররা।হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জানিয়েছেন, সম্মেলনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মুল অধিবেশনে সারাদেশ থেকে আসা দায়িত্বশীলদের নিয়ে বৈঠক করবেন দলের আমীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। দ্বিতীয় অধিবেশনে সাধারণ কর্মীদের  নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিগত কয়দিন ধরে দলের আমীরের সাথে হাটহাজারী মাদ্রাসায় দফায় দফায় বৈঠক করেছেন হেফাজতের নীতি নির্ধারনী সভার সদস্যরা। ইতিমধ্যে শুরা কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির কোন পদে কারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের নামের তালিকা প্রস্ত্ততের কাজ শেষ হয়েছে। লালদিঘির পাড়ের মতো হাজারো লোক জড়ো করে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা। সারাদেশের জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক  গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবমিলিয়ে তিন থেকে চারশতাধিক আমন্ত্রিত হেফাজত নেতা সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সাম্ভবনা রয়েছে। তবে দ্বিতীয় অধিবেশন হাজারো কর্মী উপস্থিত থাকবেন।সম্মেলনে হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী দলের পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে নেতাদের অবহিত করবেন।  সম্মেলন থেকে নতুন শুরা কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও চট্টগ্রাম নগর কমিটির  দায়িত্বশীলদের নামের তালিকার ঘোষণা আসতে পারে।২০১০ সালে ১৯ জানুয়ারি   হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জন্ম। হাটহাজারী আল – জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফি দলটির প্রতিষ্ঠাতা। অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্নপ্রকাশ হওয়া এ দলটির মুল লক্ষ্য উদ্দেশ্য  সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শান্তিপুর্ন উপায়ে তার লক্ষ্য উদ্দেশ্যে ও নীতিকে সামনে  রেখে হেফাজতে ইসলাম কাজ করে যাচ্ছে। ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, দেশাত্ববোধক, শান্তিপুর্ণও অরাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে তাদের সকল কর্মসূচি জড়িত থাকবে।ইসলামের কটূক্তিকারী ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে  হেফাজতে ইসলাম আলোচিত হয়ে দেশজুড়ে। একের পর এক কর্মসূচি পরিচালনা করতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে দলটির কমিটি গঠন করা হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দলের আমীর  ও মাওলানা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় ১০০ সদস্যের হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি। মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামকে সভাপতি ও ইসলামী ঐক্যজোটের (আমিনী) নগর কমিটির সভাপতি মাওলানা  মুঈনুদ্দীন রুহীকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় ৮৩ সদস্যের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি। এছাড়া মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরিকে সভাপতি ও মাওলানা ছলিমুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৯ সদস্যের চট্টগ্রাম উত্তম জেলা কমিটি ও মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী ও মাওলানা জিয়াউল হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৩ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি গঠন করা হয়।২০১০ সালে জন্ম হওয়া হেফাজতে ইসলামের কোন দলীয় অবকাঠামো না থাকায় মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে অনভিজ্ঞ হেফাজতকে মতিঝিলের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।আল্লামা শাহ আহমদ শফী হেফাজতে আমীরের দায়িত্ব পালন করলেও মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচিতে  নেৃতত্বে দিয়েছেন দলের  সেক্রেটারি মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, পাঁচ নম্বর যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকারী ইসলামী ঐক্যজোটের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মুঈনুদ্দিন রুহী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুরা কমিটি বা সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটিতে ২৫ জন অভিজ্ঞ সমালোচিত নয় এমন প্রবীণ আলেমের  নামের তালিকা করা হয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোটের (একংশ) চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম ইতিপূর্বে গঠিত হেফাজতের কমিটিতে কোন পদে না থাকলেও নয়া কমিটিতে তিনি শুরা কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপুর্ন পদে আসতে পারেন। তবে তার ছেলে মুফতি হারুন বিন ইজহার সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদক ও মাওলানা মুছা বিন ইজহার চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ সাধারন সম্পাদক পদে রয়েছেন।হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী, মহাসচিব মাওলানা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী, সিনিয়ম নায়েবে আমীর মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, বতর্মান নায়েবে আমীর (ঢাকা) নুর  হোসাইন কাশেমী, মাওলানা মুফতি ওয়াক্কাস (যশোর), মুফতি আহমদ উল্লাহ (পটিয়া), বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা সলিম উল্লাহ (নাজির হাট), মুফতি জসিম উদ্দিনসহ ২০ জন আলেমের সমন্বয়ে শুরা কমিটি গঠিত হবার সাম্ভবনা রয়েছে। শুরা কমিটিতে চট্টগ্রামের ১২ জন, ঢাকার ৪ জন ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬/৭  জনের নাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।  ভবিষ্যতে দলের গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে তারাই পরামর্শ দেবেন।এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের আমীর ও মহাসচিবের পদে পরিবর্তন না আসলেও  কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব ও নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহীকে। দল থেকে রুহীকে বাদ দিতে অধিকাংশ হেফাজতে নেতা একাট্টা হয়েছেন।দলের আমীরের কাছে দেয়া খোলা চিঠিতে রুহীকে প্রশ্রয় দেয়ার পেছনে  হেফাজত আমীরের ছেলে দলের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীকেও দায়ী করা হয়েছে।খোলাচিঠিতে বলা হয়েছে, ৫মে শাপলা চত্বরের ঘটনার আগের দিন দুপুর একটায় মাওলানা রুহী পল্টনের একটি ভবনে গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সাথে বৈঠক করেছেন।  আনাস মাদানীর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘রুহীর সাথে আপনার যতই রহস্যময় ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক থাকুক তাকে যদি দল থেকে বহিস্কার করা না হয় তখন আপনার সকল কুকর্মের ও আত্মসাতের খতিয়ান জাতির কাছে তুলে ধরতে বাধ্য হবো। আমরা জানি রুহী আপনাকে জিম্মি করেছে।’ এভাবে  হেফাজতের আমির, মহাসচিব, সিনিয়র নায়েবে আমিরকেও অনুরোধ করে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে এ চিঠিতে।হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের ব্যাপারে সকল প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে।  দু’ভাগে বিভক্ত সম্মেলন সারাদিন ধরে চলবে। মূল অধিবেশনে সারাদেশ থেকে আসা আমন্ত্রিত দলের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত থাকবেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ হবে।  তিনি বলেন, হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন।  এ সম্মেলন ১৩ দফা বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি,কওমী মাদ্রাসার শিক্ষানীতির ব্যাপারে সরকারের অবস্থান, দলের কমিটির পুনর্গঠন-সম্প্রসারন, শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে নারীদের পর্দার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।  মাওলানা রুহীর বিরুদ্ধে  দেয়া খোলাচিঠির ব্যাপারে ইসলামাবাদী বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। তবে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে বলা উচিত। বাইরে লিখিত কোন কিছু বিলি করা কোনমতেই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ