শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনভোটাধিকার হাইজ্যাক হয়ে যাক সেটা কোনভাবে মেনে নিব না : ড. কামাল

ভোটাধিকার হাইজ্যাক হয়ে যাক সেটা কোনভাবে মেনে নিব না : ড. কামাল

চট্টগ্রাম অফিসঃ (বিডিসময়২৪ডটকম)

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০০৮ সালে আমরা ভালো নির্বাচন আদায় করেছি। আজকে ২০১৪ তেও সেরকম একটা নির্বাচন চাই। না হলে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের ভোটাধিকার হাইজ্যাক হয়ে যাক সেটা কোনভাবে মেনে নিব না।  বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর লালদিঘী ময়দানে নাগরিক ঐক্য ও গণফোরাম আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

গণফোরামের দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মোমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন, বিকল্প ধারার সাধারণ সম্পাদক মেজর(অব.) আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক সাংসদ এস এম আকরাম। ড. কামাল বলেন, সব জায়গায় দলীয়করণ হচ্ছে। প্রশাসনে নজীরবিহীনভাবে পদন্নোতি হয়েছে। এত যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের দায়িত্ব দেওয়ার জায়গা নেই।

বিচার বিভাগের নিয়োগ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হচ্ছে। ৬১ জন জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের দেড়’শ বছরের ইতিহাসে এধরণের নজির নেই। জনস্বার্থে কোন কিছু হচ্ছে না। সবকিছু দলীয় বিবেচনায় হচ্ছে।

সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু হবে—প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভাপতি বলেন, এরশাদের পতনের সময় মওদুদ আহমেদও সংবিধানের দোহাই দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে খালেদা জিয়াও সংবিধানের দোহাই দিয়েছিলেন। কিন্তু সংবিধানের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। জনগণ যা চায়, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকার দলনিরপেক্ষ না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। সরকার না চাইলেও তাদের প্রভাব প্রশাসনে থেকে যায়।

তিনি  বলেন, ২২ জানুয়ারি পারেনি, বর্তমান সরকারও একা কোনো নির্বাচন করতে পারবে না।
ড. কামাল বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায়। কারণ, জনগণ মনে করে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। তাই সরকারের দলীয় মনোভাব বাদ দিয়ে জনগণের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে।

গণফোরামের এই নেতা বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ ও আট কোটিরও বেশি ভোটার, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। তারা কখনোই কোন সংঘাত চায় না।

ড. কামাল বলেন, আমি নিজেও এ সরকারকে ভোট দিয়েছি কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসমুক্ত হয়নি। প্রতিটি সেক্টরে দূর্নীতিতে ভরে গেছে। কিন্তু যারা দুর্নীতি করেছেন, অন্যায় করেছেন, তাদের ব্যাপারে আইনের কার্যকর প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি না।

যেমন, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির ব্যাপারে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন কমিটি কিছু প্রস্তাব করেছিল। অনিয়মকারীদের চিহ্নিত করে বলেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে আরও গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা হলো।

ড. কামাল হোসেন বলেন,  আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত একটি বহুদলীয় টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে এবং অর্থবহ করতে হলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচনের নামে এখন কালোটাকার দৌরাত্ম্য চলে। নির্বাচনে প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে জয়ী হন।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন সীমা বেঁধে দিয়েছে, কেউ ১৫ লাখ টাকার বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। এ জন্য জনগণের রায়ের প্রতিফলন থাকে না। গণতন্ত্রকে সত্যিকারভাবে অর্থবহ করতে হলে এই কালোটাকার বিরুদ্ধে শক্তভাবে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 আবদুল মান্নান বলেন, স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে মধ্যে দু’ দশক ক্ষমতার দখলের উত্থান পতন ছিল। ২২ বছর ছিল লুঠপাটের যুগ।  নামে গণতান্ত্রিক থাকলেও মানুষ এ সময়ে সুশাসন পায়নি। তিনি বলেন,  ভালো লোকের সরকার না হলে উন্নয়ন হয় না। শুধু সড়ক নির্মানের নাম উন্নয়ন নয়। শিক্ষার হার বাড়াতে হবে, চাকরি নিশ্চিত করতে হবে, মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে, কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলেই উন্নয়ন হয়েছে বলা যায়। আবদুল মান্নান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি একটি ষড়যন্ত্র। বিকল্প ধারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত নির্বাচনে যাবে না।

 মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,  নির্বাচনের মাঠে এক পক্ষ নিয়ে খেলার যে পাঁয়তারা করছেন শেখ হাসিনা তা ভুলে যান। একক নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে।

 মান্না বলেন, নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমার মন্ত্রীদের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে বলতে পারবে না তারা কখনো দূর্নীতি করেছে। ক্ষমতায় আসার সাড়ে চারবছর পর জনগণ পাঁচ আঙ্গুল তুলে বলছে আপনার মন্ত্রীসভার সবাই দূর্নীতিবাজ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর দূর্নীতির কথা আমরা বলছি না বিশ্ব ব্যাংক বলছে। মান্না বলেন, শেখ হাসিনা বিভিন্ন জায়গায়্ উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছেন। তার কথা বিশ্বাস করবেন না। মান্না বলেন, গায়ের জোরে যে নির্বাচন করার কথা বলছে সরকার, তা আমরা মানবো না।  গায়ের জোর কাটিয়ে অতীতে কেউ ঠিকেনি, শেখ হাসিনাও ঠিকবে না। এসময় তিনি কোকো ও তারেক রহমানের দূর্নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি তাদের দূর্নীতির কোন জবাব দিতে পারেনি।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন’শ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। প্রধান মন্ত্রী মার্কা দেখে ভোট দেওয়া ঘোষণার উত্তরে মান্না বলেন, যে মার্কার পেছনে লুকিয়ে আছে দাগী আসামী তাদের পেছনে জনগন দৌঁড়াবে না। যাদের পিঠে গণদূর্বৃত্তয়ানের চাপ নেই তাদেরই বেছে নেবে। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হচ্ছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, তৃতীয় রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক শক্তির বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ