শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদটপকুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানির বাণিজ্যিকভাবে ১০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু

কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানির বাণিজ্যিকভাবে ১০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে।এটি দেশী প্রকৌশল,প্রকিউরমেন্ট ও নির্মাণ (ইপিসি) ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মিত প্রথম কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশী প্রথম ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড বিদ্যুৎ নির্মাণ করেছে।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ১০৯মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২১শেফেব্রুয়ারি কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর ১৭ মাসের মধ্যে সিঙ্গেল সাইকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। আগস্টের প্রথম থেকে এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে কম্বাইন্ড সাইকেলের উৎপাদন শুরু হবে বলে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তখন উৎপাদন ৫৪ মেগাওয়াট বাড়বে বলে তারা জানান।

এ নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও এলাকা থেকে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ৪০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানির পাশেই রয়েছে পিডিবির দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট।এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ২০১মেগাওয়াট।এরপাশে রয়েছে এনার্জিপ্রিমা ও বারাকাতুল্লাহ নামে দুটি বেসরকারি বিদুৎকেন্দ্র। এ দুটির উৎপাদন সক্ষমতা ৯৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বারাকাতুল্লাহ ২০০৯ সালে ও এনার্জিপ্রিমা ২০১২ সালে চালু হয়। তবে উৎপাদনক্ষমতার দিক থেকে নবনির্মিত কুশিয়ারাই সর্ববৃহৎ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও ইউনিয়নের মইনপুর এলাকায় ১৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। সরকারের সঙ্গে ২৫ বছরের এ চুক্তি অনুযায়ী ২২ মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। আর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে ২২ বছর।ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে অনেক দ্রুততম সময়েই এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম দেশীয় (ইপিসি) ঠিকাদারের মাধ্যমে একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এ দেশের প্রকৌশলীরা সিঙ্গেল সাইকেল চালু করলেন। এছাড়া দেশে এই প্রথম এত অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলো। পাশাপাশি আমরা দেশে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত গ্যাস ইন্সুলেটেড সুইচইয়ার্ড (জিআইএস) ও ইন্সুলেটেড ফেসবাসডাক্টের (আইপিবিডি) সমন্বিত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি।

তিনি আরো বলেন, দেশী ইপিসি ঠিকাদারের বদলে বিদেশী প্রতিষ্ঠান এ কাজ করলে নির্মাণ ব্যয় ও সময় অনেক বেড়ে যেত। এছাড়া জবাবদিহিতারও তেমন সুযোগ থাকত না। দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাজ করায় ব্যয় প্রায় তিন ভাগ কমে গেছে। সময়ও কম লেগেছে। আগামীতে আরো দেশী প্রতিষ্ঠান এ কাজে এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা যায়, গ্যাসভিত্তিক কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানিতে গ্যাস সরবরাহ করছে জালালাবাদ গ্যাস। প্রতিদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। উৎপাদিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়ার জন্য সাড়ে চার কিলোমিটার ২৩০কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনও নির্মাণ করেছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।নবনির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায়, সিঙ্গেল সাইকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। পাশাপাশি চলছে কম্বাইন্ড সাইকেলের নির্মাণকাজ। ৮০ জন প্রকৌশলীসহ মোট ৯৫০ জন কর্মী এখানে কাজ করছেন। প্রকল্পের ইপিসি ব্যয় ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগের সিলেট কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানি থেকে নতুন করে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে সিলেটের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। সিলেটে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ