বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, শত শত ভারতীয়ের বাংলাদেশে আশ্রয়

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, শত শত ভারতীয়ের বাংলাদেশে আশ্রয়

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকশ মানুষ এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)। একই খবর জানিয়েছেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। কোচবিহার জেলার অন্তত দুটি এলাকা থেকে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ওই মন্ত্রী। বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার একটি গ্রামে রাস্তার উপর অপেক্ষা করছেন মেহেরবান বিবি ও আর্জিনা বেগমের পরিবার। তাঁদের আশা পানি নেমে গেলেই ভারতীয় অংশে নিজ গ্রামে ফিরে যাবেন। বাংলাদেশের লালমনিরহাট থেকে বিজিবি কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোরশেদ জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলো থেকে বন্যাক্রান্ত হয়ে ৫ থেকে ৬শ লোক এসেছেন। গোলাম মোরশেদ আরো জানান, যেহেতু তারা বিপদে পড়ে এসেছেন তাই মানবিক কারণে তাঁদের (ভারতীয় নাগরিকদের) ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়নি। এখানে এসে তাঁরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিজিবির ওই কর্মকর্তা আরো জানান, সীমান্তের ওই এলাকাটিতে বাংলাদেশের মোগলহাটা ও দুর্গাপুর গ্রাম। আর এর মধ্যে ভৌগলিকভাবে ঢুকে রয়েছে তিনটি ভারতীয় গ্রাম। ওই গ্রামগুলো আর ভারতের মূল ভূ-সীমান্তের মাঝে রয়েছে ধরলা নদী। এই নদীটির কারণেই গ্রামগুলো ভারতের মূল ভূ-সীমা থেকে বিচ্ছিন্ন অথচ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত। সীমান্তে কাঁটাতারও নেই সেখানে। ফলে বন্যাপ্লাবিত হওয়ার পর তারা আর খরস্রোতা ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে ভারতে যেতে পারেনি। তাই আশ্রয়ের খোঁজে চলে এসেছেন বাংলাদেশে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও একই কথা জানিয়েছেন। ওই মন্ত্রী আরো জানান, ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার জারিধরলা, দরিবস আর তুফানগঞ্জ গ্রামের পাশে বয়ে যাওয়া ধরলার প্রবল স্রোতের কারণে সেখান থেকে বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই তিন গ্রামের বন্যাদুর্গত মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ অংশে চলে গেছে।

কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বাসিন্দা সামিদুল হক তাঁর পরিবারসহ লালমনিরহাট সদর উপজেলায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানালেন, ধরলার প্রবল স্রোতে তাঁর ছনের বেড়া দেওয়া বাড়িটি ভেসে গেছে। ভেসে গেছে গবাদিপশু রাখার ঘরটিও। ফলে বাধ্য হয়েই পরিবার ও গবাদি পশুগুলোকে নিয়ে তিনি বাংলাদেশে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে কোচবিহার থেকেই নির্বাচিত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, জারিধরলা, তুফানগঞ্জ আর দরিবস এলাকায় প্রায় হাজার ছয়েক মানুষ থাকেন। নদীতে এমন স্রোত, যে এত লোককে উদ্ধার করে নিয়ে আসা অসম্ভব। ত্রাণও পৌঁছানো যাচ্ছে না। সেজন্যই ওই বন্যাদুর্গতরা বাংলাদেশের দিকে চলে গেছেন বলে জানতে পেরেছি। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আরও জানান, তুফানগঞ্জ এলাকার চরবালাভূত এলাকারও একই অবস্থা। হাজার চারেক মানুষ সেখানে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে এই গ্রামগুলো থেকে ঠিক কতজন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।

মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর এলাকার মানুষদের আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি। বিবিসির প্রতিবেদকের কাছে তিনি এই বিপদের দিনে তাঁর মানুষগুলোকে সাহায্য করায় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ পৌঁছে দিতে বলেন। এদিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বলেছে, ভারত থেকে কেউ বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য গেছে এই খবর তাদের জানা নেই। অথবা বিজিবিও তাদের এই খবর জানায়নি। এদিকে সর্বশেষ আজ বুধবার ভারত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে বিজিবি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বন্যার জল কিছুটা হলেও কমতে শুরু করেছে। তাই যারা বাংলাদেশের দিকে চলে গিয়েছিলেন, এমন কিছু মানুষ আবারও ফিরতে শুরু করেছেন। বিজিবির কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ   জানান, ৫০-৬০টি ভারতীয় পরিবার ছাড়া আশ্রয়প্রার্থী অনেক ভারতীয় নিজ গ্রামে ফিরে গেছেন। যারা এখনও আছেন তাঁদেরকে বিজিবির পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ