বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়এমপিদের গাড়িতে ব্যবহৃত স্টিকারের মনোগ্রামসহ ডিজাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

এমপিদের গাড়িতে ব্যবহৃত স্টিকারের মনোগ্রামসহ ডিজাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও এমপিদের গাড়িতে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা স্টিকারের মনোগ্রামসহ ডিজাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। ভুয়া এমপিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ এবং সংসদের ইমেজ রক্ষায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন স্টিকার সরবরাহ করা হবে। এদিকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে এমপিদের জন্য নির্ধারিত স্টিকার অপরাধীসহ বাইরের লোকদের কাছে সরবরাহকারী সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এ অভিযোগে সংসদ সচিবালয়ের ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল সুপারভাইজার মৃণাল কান্তি মণ্ডলকে স্পিকারের নির্দেশে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জড়িত অন্যদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। সংসদ সচিবালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ভুয়া এমপিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। তারা সচিবালয়সহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ‘সংসদ সদস্য’ ও ‘সংসদ সচিবালয়’ লেখা স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে অবাধে বিচরণ এবং চাকরির তদবিরসহ বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এ ছাড়া এসব গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও চালানো হচ্ছে। আর এসব ভুয়া এমপিকে প্রতারণার কাজে সাহায্য করে আসছে খোদ সংসদ সচিবালয়েরই কিছু অসাধু কর্মচারী। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে তারা সরবরাহ করছে সংরক্ষিত এসব স্টিকার।
বিশেষ এই স্টিকারগুলো সংসদ সচিবালয় থেকে কিভাবে বাইরের লোকদের হাতে গেল স্পিকারের নির্দেশে এ নিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু হয়। একইসঙ্গে এই অপকর্মে সংসদ সচিবালয়ের কারা জড়িত তাদের শনাক্ত করার কাজও শুরু হয়। অবশ্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ বিষয়টি আগেই অবগত থাকায় অভিযুক্ত একজনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্পিকারের তৎপরতা সত্ত্বেও সংসদ সচিবালয়ের সংঘবদ্ধ একটি চক্র স্টিকার বিক্রি বন্ধ করেনি। হিসাব অনুযায়ী ৩৫০ এমপি, সংসদ পরিবহন পুলের ৬৩টি ও পরিবহন পুলের প্রায় ১০০টি গাড়ির জন্য মোট ৫১৩টি স্টিকার থাকার কথা। অথচ রাজধানীসহ সারাদেশে রয়েছে অন্তত ৯ হাজার স্টিকারসহ গাড়ি। এমপিদের পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত সহকারী, দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনের গাড়িতেও ব্যবহার হচ্ছে স্টিকার। এমনকি ভাড়ায় খাটানো গাড়িতেও স্টিকার লাগিয়ে আদায় করা হচ্ছে সুবিধা। গাড়িতে এসব স্টিকার ব্যবহার করে ঘটানো হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ। অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান হচ্ছে হরহামেশা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি সচিবালয়ে প্রবেশ পথে এ ধরনের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়ি আটক করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এর কয়েকদিন আগে সংসদ চত্বরে আটক করা হয় আরেকটি ভুয়া স্টিকারযুক্ত গাড়ি। এর আগে রাজধানীর গুলশান এলাকায় সংসদ সদস্যের ভুয়া স্টিকার লাগানো গাড়ি থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদ সদস্য লেখা গাড়িতে জাল টাকাসহ সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশের রাস্তায় পুলিশের হাতে আটক হন যশোরের সাবেক এমপি আলী কদরের ছেলে। গত সরকারের শাসনামলে আলোচিত সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ফারুক ৭৫ লাখ টাকাসহ ধরা পড়েছিলেন সংসদ সদস্য লেখা গাড়িতে। ২০১১ সালে জানুয়ারিতে যশোর-১ আসনের এমপি আফিল উদ্দীনের সংসদ সদস্য লেখা গাড়ি থেকে অস্ত্রসহ আটক করা হয় পাঁচ সন্ত্রাসীকে। আর কক্সবাজারের এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য স্টিকারযুক্ত গাড়িতে করে মাদক ও ইয়াবা চোরাচালানের অভিযোগ অনেক পুরনো।
গোয়েন্দা তথ্যমতে, মাদকের ১০টি চালানের মধ্যে ৩টির ক্ষেত্রেই গাড়ির স্টিকার লাগানো থাকে। রাজধানীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর নেতৃত্বাধীন অন্তত ৩০টি চক্র রয়েছে যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ফাঁকি দিতে স্টিকারযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করে। এ ছাড়া সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে সচিবালয়সহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে সহজে প্রবেশ করে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেয়। আর রাস্তায় তো এ ধরনের স্টিকারযুক্ত গাড়ি রাস্তার রাজা। এমপির গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করে এমন সাধ্য কার বাপের এমনটাই বললেন সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে কর্মরত এ ট্রাফিক সার্জেন্ট। নাম প্রকাশ না করার মিনতি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের স্টিকার লাগানো গাড়িগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম-কানুনের ধার ধারে না। তবুও কিছুই করার থাকে না পুলিশের। ভুয়া এমপিদের এমন দৌরাত্ম্যে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সংসদ সচিবালয়। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে মন্ত্রী-এমপিদেরও। এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে সংসদ সংশ্লিষ্টদের ভাবনার শেষ নেই। আপাতত স্টিকারের ডিজাইন ও মনোগ্রাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যুক্তিযুক্ত আরো কোনো ফর্মুলা পেলে পরে তাও বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদ সচিবালয় এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সংসদের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের মনোগ্রামযুক্ত স্টিকারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন স্টিকারের সঙ্গে পুরনো স্টিকারের কোনো মিল থাকবে না। এতে করে ভুয়া এমপিদের সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তবে আরো যুক্তিযুক্ত কোনো পরামর্শ পেলে পরে তাও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
  • বিষয়:
  • UMo
আরও পড়ুন

সর্বশেষ