শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়জার্মানির গোলযজ্ঞ, লজ্জা, কান্না ও শোকে বিদায় নিল স্বাগতিকরা

জার্মানির গোলযজ্ঞ, লজ্জা, কান্না ও শোকে বিদায় নিল স্বাগতিকরা

লজ্জা, হতাশা, বিস্ময়, কান্না ও শোক বুকে নিয়ে বিদায় নিল স্বাগতিক ব্রাজিল। ইউরোপের দৈত্যখ্যাত জার্মানির রোবটিক নৈপুণ্যে উড়ে গেল ব্রাজিলিয়ানদের হেক্সা জয়ের স্বপ্ন। পুরো ব্রাজিল এখন শোকের নগরীতে পরিণত হয়েছে। চারদিকে হাহাকার। প্রতিটি শহরের কোনায়-কোনায় শোকের মাতম। এই মাতমে পুরো বিশ্বের ব্রাজিল ভক্তদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরাক্রমশালী দলটি। ১৯৫০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের পর উরুগুয়ের কাছে বিশ্বকাপ হারিয়েছিল তারা। আর গতকাল জার্মানির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল। লজ্জায় মাথা কাটা গেল ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। গতকাল বেলো হরিজন্তের স্তাদিও মিনেইরোতে জার্মানি ৭-১ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২০০২ সালের পর এই প্রথম ফাইনালে উঠল। ব্রাজিল এত বড় ব্যবধানে কখনও হারেনি, বিশ্বকাপে তো নয়ই। উরুগুয়ের কাছে তারা ১৯২০ সালে কোপা আমেরিকায় ৬-০ গোলে হেরেছিল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে স্বাগতিক কোনও দেশ এতগুলো গোল হজম করেনি। ব্রাজিলের ব্যাপারেই এমন ঘটনা ঘটল! তবে লজ্জা একটু কমাতে পেরেছেন অস্কার অন্তিম মুহূর্তে গোলটি (৯০ মি.) করে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এত বড় ব্যবধানে হারেনি কোনও দল। সবমিলে ব্রাজিল বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও দাপট নিয়ে ফুটবল খেলেছে জার্মানি। একের পর এক আক্রমণ করেছে। ব্রাজিল খেই হারিয়ে ফেলেছে। তারা সহজ সুযোগ পেলেও গোল করতে পারেননি। জার্মানি আবারও চড়াও হতে থাকে এবং আন্দ্রে শুরলে ৬৯ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দেন। দলের ষষ্ঠ গোলটি তিনি করেন। ব্রাজিল ১৯৫৮ সালের সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়েছিল ৫-২ গোলে। জার্মানি থেমে থাকেনি। শুরলে আবারও জেগে ওঠেন। আর দলের সপ্তম গোলটি করেন তিনি ৭৯ মিনিটে।
ব্রাজিলের রোনালদো জার্মানির বিপক্ষে ১৫তম বিশ্বকাপ গোল করে রেকর্ড গড়েছিলেন। আর সেই ব্রাজিলের বিপক্ষে মিরোস্লাভ কোসা ১৬ গোল করে রোনালদোর রেকর্ড ভেঙে দিলেন। কোসা এখন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ব্রাজিল ১৯৩৮ সালে পোলান্ডের বিপক্ষে ৫ গোল হজম করেছিল। আবারও সেই লজ্জা তারা পেয়েছে।
মাত্র ২৯ মিনিটের মধ্যে ব্রাজিল ৫ গোল হজম করেছে। প্রথমার্ধেই ব্রাজিলের ফাইনাল আশা শেষ হয়ে যায় মূলত। ব্রাজিল গোলরক্ষক হুলিও সেজার চিলির বিপক্ষে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন এই মাঠে। তিনি হয়েছিলেন নায়ক। আর সেই মাঠেই গতকাল তিনি খলনায়কে পরিণত হয়েছেন। অবশ্য দোষ তার পুরোটা নয়। পুরো ব্রাজিলকে নিয়ে খেলেছে জার্মানি। রক্ষণভাগ যেন জার্মান-ঝড়ে উড়ে গেছে। অবশ্য খেলার শুরুটা হয়েছিল চমৎকার। দুই দলই আক্রমণ করে খেলছিল। ১১ মিনিটে জার্মানির টমাস মুলার কর্ণার থেকে আসা বল ভলি করে ব্রাজিলের জালে বল পাঠিয়ে দেন। এটি ছিল চলমান বিশ্বকাপে তার পঞ্চম গোল। আর বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে এটি ছিল তার ১০ম গোল।
২৩ মিনিটে কোসা রেকর্ড ভাঙা গোলটি করেন। জার্মানি ২৩ থেকে ২৯ মিনিটের মধ্যে ৪টি গোল করে। কোসার পর গোল করেন টনি ক্রুস (২টি- ২৪ ও ২৬ মি.) ও সামি খেদিরা (২৯ মি.)। জার্মানি যখন একের পর এক গোল করে চলেছে ততক্ষণে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সমর্থকরা। দলের পরাজয় মেনে নিতে পারেননি তারা। ব্রাজিলের অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা নিষিদ্ধ ছিলেন কার্ড হজমের জন্য। তার বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন দান্তে। ইনজুরির জন্য নেইমার ছিলেন না। তার বদলে এসেছিলেন বার্নার্ড। আর পাওলিনহোর বদলে ছিলেন লুইস গুস্তাভো। জার্মান কোচ জোয়াকিম লো দলে কোনও পরিবর্তন আনেননি। তবে জার্মানদের আক্রমণভাগে ছিলেন মিরোস্লাভ কোসা। নেইমারকে ছাড়া অসহায় বোধ করছিল ব্রাজিল। আর সেটা দেখা গেছে মাঠে। খেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই সেটা প্রমাণিত হয়েছে।  নেইমার হয়তো গ্যালারিতে আসতে পারেননি। আবার মাঠেও নামতে পারেননি। কিন্তু তিনি ছিলেন। পুরো গ্যালারিতে নেইমারের জার্সি, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছিল। ব্রাজিলের ডেভিড লুইজ ও গোলরক্ষক হুলিও সিজার নেইমারের জার্সি নিয়েই জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন। যেন নেইমার দ্বাদশ খেলোয়াড়!
ব্রাজিল ও জার্মানি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল। যদিও তারা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বাধিক ম্যাচ খেলা দল। ব্রাজিল ১০৩ ও জার্মানি ১০৫তম ম্যাচটি খেলে ফেলেছে। তবে জার্মানি ২০০২ সালের ফাইনালে ২-০ গোলে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল। সেই ম্যাচে হারের প্রতিশোধ নিতে পেরেছে তারা।
এই ম্যাচে নামার আগে ব্রাজিল নিজেদের মাটিতে ৪২টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল। তারা সর্বশেষ হেরেছিল ২০০২ সালের আগস্টে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। ব্রাজিল আসলে বিশ্বকাপের শেষ চারে থেকেছে ১১ বার। আর এটি ছিল তাদের অষ্টম সেমিফাইনাল (পূর্বে ফরম্যাট অন্যরকম ছিল)। জার্মানি রেকর্ড টানা চতুর্থ সেমিফাইনালে উঠেছিল। আর উঠেই চমকে দিল তারা। জার্মানি এই ম্যাচের আগে ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরাজিত ছিল (বিশ্বকাপসহ)। কোসা ২৩তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। জার্মানির লোথার ম্যাথিউস ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন। আর ২৩টি ম্যাচ খেলেছেন এর আগে পাওলো মালদিনি। এ ছাড়া কোসা প্রথম খেলোয়াড় যিনি ৪টি সেমিফাইনাল খেলেছেন।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ