শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়ব্রাজিল না জার্মানি ফাইনালে কে?

ব্রাজিল না জার্মানি ফাইনালে কে?

সেমিফাইনালে ওঠা একটা দল কোথায় আনন্দ করবে তা না, পুরো দলটাই যেন এখন দুশ্চিন্তায় কাতর। হতাশ। মাথা নুয়ে পড়া অবস্থা আর কি। -দলটা ব্রাজিল!
আর এ হতাশার কারণও আছে বেশ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে জিতে সেমিফাইনাল ঠিক হলেও সেই ম্যাচের পর থেকেই ব্রাজিলের শুধু চিন্তা আর দুশ্চিন্তা।
ইনজুরিতে নেইমারের পুরো বিশ্বকাপই শেষ। হলুদ কার্ডের খাঁড়ায় পড়ে সেমিতে নেই থিয়াগো সিলভাও। নেইমার যদি হন ব্রাজিলের এই দলের মাথা তাহলে পা হচ্ছেন থিয়াগো সিলভা।
সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে খেলতে হচ্ছে মাথা ও পা ছাড়াই!
এই দল দুশ্চিন্তা করবে না তো কে করবে? তারপর সেমিতে আজ প্রতিপক্ষ আবার জার্মানি। ‘হেক্সা’ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে আসা ব্রাজিলের দূরতম চিন্তায়ও ছিল না যে নেইমার এমনভাবে হারাতে হবে। সিলভাকে ছাড়াই সেমিফাইনাল খেলতে হবে। নিচের দিকে সিলভার বিকল্প না হয় আজ স্কলারি খুঁজে পাবেন। কিন্তু মাঝমাঠ এবং আক্রমণভাগ দাপিয়ে বেড়ানো নেইমারের মতো প্লেমেকার আর কই ব্রাজিলের এই দলে? কীভাবে একাদশ সাজাবেন সেমিফাইনালের আগে এ চিন্তায় ঘুমহীন স্কলারি।
এটুকু পড়ার পর ব্রাজিল সমর্থকদের মন হয়তো আরও ভারি হয়ে উঠতে পারে। তবে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অনেক উদাহরণ দেখেছে ফুটবল বিশ্ব।
আজ জার্মানির বিপক্ষে
সেমিফাইনালে সেটাই ব্রাজিলের জন্য বড় প্রেরণা হতে পারে। সাও পাওলোর পত্রিকা ‘ফোলহা দে’ দলের এমন দুর্দিনে দারুণ উত্সাহব্যঞ্জক একটা ছবি ছেপেছে। পত্রিকার পুরো এক পাতার প্রতিটি কলাম সাজিয়েছে মেরুদণ্ডের হাড়ের ছবি দিয়ে। আর মেরুদণ্ডের প্রতিটি কশেরুকার নাম দিয়েছে ব্রাজিল জাতীয় দলের একেকজন খেলোয়াড়ের নামে! নেইমার-সিলভা নেই তো কী হয়েছে? পুরো ব্রাজিল দলকে আজ একজোট হয়ে খেলতে হবে।
-আর ইতিহাস!সেটা তো ব্রাজিলের পক্ষে। বিশ্বকাপের মাঠে জার্মানি এর আগে মাত্র একবারই ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল। ২০০২ সালের ফাইনালের সেই ম্যাচে ব্রাজিলের জয় ২-০। সেটাই ব্রাজিলের শেষ বিশ্বকাপ জয়। সেই ফাইনালে খেলা কেউ আর নেই এখন ব্রাজিল দলে।
-ভুল হল! একজন আছেন-লুইস ফেলিপ স্কলারি!
ব্রাজিলের এই দলের সবচেয়ে বড় ‘শক্তি’ তো তিনি। নেইমারবিহীন আজকের সেমিফাইনালের জন্য হয়তো নতুন ফরমেশনে দলকে খেলাবেন ব্রাজিল কোচ। তার সামনে দুটি ফর্মুলা।
প্রথম ফর্মুলা : আগের ৪-২-৩-১ এ ফরমেশন ঠিক রেখে মাঝমাঠে আরও একজন আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় বাড়ানো। নেইমার আগের ম্যাচে যেভাবে প্লেমেকারের কাজ করতেন সেই দায়িত্ব পাবেন অস্কার। এ ভূমিকা অস্কারের জন্য নতুন কিছু নয়। গত বছর কনফেডারেশন কাপে তিনি এ পজিশনে খেলে ভালো সাফল্য পেয়েছিলেন। উেসর কেন্দ্রস্থলে অস্কারকে খেলালে ব্রাজিলের খেলায় আরও বেশি আক্রমণের ঝলক দেখা যেতে পারে। মাঝমাঠে ওপর-নিচে নেমে মিডফিল্ডারদের সহায়তা করা এবং দুই উইং দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ঢুকে পড়া-দুটিই বেশ ভালো সামাল দিতে পারেন অস্কার। এ সুযোগে দুই উইঙ্গার মাঝখানের ফাঁকায় জায়গা দিয়ে আক্রমণের আরও বড় জায়গা তৈরি করে নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, মাঝমাঠ থেকে একটু নিচে নেমে ম্যান মার্কিংয়ের দায়িত্ব সামাল দিতে বেশ পটু অস্কার। এ কৌশলে দলকে খেলাতে হলে স্কলারিকে মাঝমাঠে একজন বাড়তি খেলোয়াড় রাখতে হবে। আর মাঝমাঠে এ বাড়তি হিসেবে দেখা যেতে পারে চেলসিতে খেলা অস্কারের সতীর্থ উইলিয়ান। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের যাওয়ার ভালো দক্ষতা আছে উইলিয়ানের। এ পজিশনে বার্নার্ডকেও পরিকল্পনায় রেখেছেন স্কলারি।
দ্বিতীয় ফর্মুলা : নেইমারের জায়গা যেহেতু কেউ নিতে পারবে না, তাই চিরায়িত ৪-৩-৩ ফরমেশনে ফিরে যেতে পারেন স্কলারি। মাঝমাঠে ফার্নান্দিনহো, পাউলিনহো এবং নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা লুইস গুস্তাভো থাকছেন। আক্রমণভাগের একেবারে শীর্ষে থাকছেন ফ্রেড। তাকে ফাইনাল বল বাড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা পাচ্ছেন অস্কার ও হাল্ক। রামিরেস এবং মাইকনের মতো পরিশ্রমী মিডফিল্ডারও আছে স্কলারির রিজার্ভ বেঞ্চে। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত থাকতে পারেন-ব্রাজিল কিন্তু আজ মোটেও ‘বিউটিফুল’ ফুটবলের ধার ধারবে না। স্কলারির ফুটবল দর্শন বেশ পরিষ্কার-‘জিততেই হবে, সেজন্য রক্ত ঝরানোর প্রয়োজন হলেও তাই কর।’
আজকের সেমিফাইনালের অন্য দল তো জার্মানি, কিন্তু তাদের নিয়ে কোনো কথা নেই কেন?
থাকবে কেন? আজ তো দল নিয়ে জার্মানির কোনো সমস্যা নেই। রক্ষণভাগ, মাঝমাঠ এবং আক্রমণভাগ এমনকি রিজার্ভ বেঞ্চ-সব কিছুতেই দারুণ ফর্মে কোচ জোয়াকিম লোর দল। টানা চতুর্থবারের মতো সেমিফাইনালে খেলছে এবার জার্মানি। সমস্যা একদম নেই-বলাটা বোধহয় পুরোপুরি ঠিক হল না। পেছনের তিন সেমিফাইনালে জার্মানি মাত্র একবারই জিতেছে। আরেকটু পেছনের যাই। সব মিলিয়ে জার্মানি এখন পর্যন্ত ১৩ বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে। কিন্তু ফাইনালের টিকেট পেয়েছে মাত্র ৭ বার। সেমিফাইনাল বাধা পার করার জার্মানির এ মামুলি পরিসংখ্যানই আজ তাদের জন্য একটা সমস্যা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ