বৃহস্পতিবার, মে ৩০, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রামে গ্যাসের জন্য হাহাকার : কেজিডিসিএলে চলছে বৈধ-অবৈধ সংযোগের রমরমা বাণিজ্য

চট্টগ্রামে গ্যাসের জন্য হাহাকার : কেজিডিসিএলে চলছে বৈধ-অবৈধ সংযোগের রমরমা বাণিজ্য

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে চলছে গ্যাসের হাহাকার। বিশেষ করে আবাসিক গ্রাহকরা গত এক সপ্তাহ ধরে প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাসের চাপ না থাকায় জ্বলছে না বাসাবাড়ির রান্নার চুলা। গ্যাসনির্ভর হোটেল-রেস্তরাঁগুলোরও ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার উপক্রম। এদিকে আবাসিক এলাকায় গ্যাসের হাহাকার চললেও চট্টগ্রামে সরবরাহকারী কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) চলছে অবৈধ সংযোগের রমরমা বাণিজ্য। আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগের সরকারি অনুমোদন দেয়ার পর থেকে যতটা না বৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে তারচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ দিচ্ছেন কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈধ-অবৈধ উভয় ক্ষেত্রেই গ্রাহকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মার্কেটিংসহ বিভিন্ন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই। ষোলশহর দুই নম্বর গেটে অবস্থিত কেজিডিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে এখন গ্যাস সংযোগের নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (সিইউএফএল) গ্যাস সরবরাহ দেয়া এবং নতুন গ্যাস সংযোগ চালু হওয়ার পর এক লাফে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। এছাড়া সাঙ্গু গ্যাসফিল্ড থেকেও এখন আর গ্যাস আসছে না। শীতের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে চাহিদা। মূলত এসবই চলমান গ্যাস সংকটের প্রধান কারণ। কেজিডিসিএলের ডিজিএম (ডিস্ট্রিবিউশন) রেজাউল করিম বলেছেন, সহসা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে বলে মনে হয় না। মার্চে সিইউএফএলএ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে তৈরি হয়েছে গ্যাসের সংকট। নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাস থাকছে না। কোনো কোনো স্থানে নিভু নিভু গ্যাস পাওয়া গেলেও কোনো কোনো স্থানে একেবারেই গ্যাসের দেখা মিলছে না। নগরীর বাকলিয়া, মিয়াখান নগর, সদরঘাট, জামালখান, বাদামতলী, রহমতগঞ্জ লাভলেইন, বাকলিয়া, নাসিরাবাদসহ নানা স্থানে গ্যাসের এ সংকট ও হাহাকার চলছে। গ্যাস না থাকায় অনেক বাসা-বাড়িতে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর পানিও সিদ্ধ করা যাচ্ছে না।
বাকলিয়ার একাধিক বাসিন্দা জানান, আগে ছিল বিদ্যুতের লোডশেডিং। এখন গ্যাসেরও লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যাচ্ছে গ্যাস। বিকেল সাড়ে ৪টায় আসে যেন ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে। ঘণ্টাখানেক থেকে আবারো রাত সাড়ে ১০টার দিকে আসে। দিনের পর দিন এ হাহাকার থেকে বাঁচতে কেউ কেউ স্টোভ কিনে রান্না সারছেন। কেউবা বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। যদিও মাস শেষে তাদের বিল গুনতে হবে।
এদিকে আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাসের সংকটে ভুগলেও কেজিডিসিএলে চলছে আবাসিক খাতে বৈধ-অবৈধ সংযোগের রমরমা বাণিজ্য। প্রতি চুলা সংযোগের বিপরীতে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে একেকটি ফ্ল্যাটবাড়িতে সংযোগ দিতে লাখ লাখ টাকায় চুক্তি করা হচ্ছে। সিরিয়াল ওভারটেক করেও দেয়া হচ্ছে শত শত সংযোগ। আবার কোনো সিরিয়াল ছাড়াই শত শত রাইজার অবৈধভাবে তুলে দিচ্ছেন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে কোম্পানির জিএম মার্কেটিং ফিরোজ আলমসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বে থাকা অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। গ্যাসের জোগান না থাকলেও সংযোগের নামে কেজিডিসিএলএ সংযোগের এ রমরমা বাণিজ্য এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
কেজিডিসিএলের ডিজিএম (ডিস্ট্রিবিউশন) রেজাউল করিম চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সিইউএফএলএ ডিসেম্বর থেকে সার উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিতে হচ্ছে। আবার জুলাই থেকে আবাসিক সংযোগ উন্মুক্ত করার সরকারি অনুমোদনের পর এক লাফে চট্টগ্রামে এক মাসে গ্রাহকসংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার থেকে সোয়া চার লাখে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা বাড়াও গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ বলে তিনি দাবি করেন। সহসা এ সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। সংকট থাকলেও সংযোগের রমরমা বাণিজ্য ও অবৈধভাবে শত শত রাইজার তুলে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের অনিয়ম রোধে তাদের ১০টি ভিজিল্যান্স টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ