ফরাসি অভিনেত্রী অদ্রে ততু ছিলেন আমার কাছে দেবীর মতো। তাঁকে কোনো দিন সামনে থেকে দেখব, ভাবিনি। কান উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থাপনা সামনে থেকে দেখলাম।’ মুঠোফোনের ওপাশ থেকে বলছিলেন জয়া। ফ্রান্সের কান নগরে তখন বাজছে বিদায়ের সুর। পর্দা নেমে গেছে ৬৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের। জয়া কথা বলছিলেন কানের একটি ট্রেন স্টেশন থেকে।
‘উৎসবের বড় বড় বিলবোর্ড সব নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ের আর আশপাশ এই কদিন রীতিমতো গমগম করছিল চলচ্চিত্র দুনিয়ার মানুষদের ভিড়ে। এখন চারদিক প্রায় চুপচাপ। দেখেই কেমন মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’ বলছিলেন জয়া আহসান।
২১ মে তিনি পৌঁছেছিলেন কানে। প্রায় সপ্তা খানেক সময় জয়া কাটিয়েছেন উৎসবের এই নগরে। কেমন লাগল শহরটা?
‘কান শহরটা খুবই ভালো লেগেছে। পাশেই সমুদ্র। সূর্য অস্ত যেতে যেতে রাত প্রায় আটটা বাজে। এখানে আসার প্রথম দিনেই খুব বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে শহরের পরিবেশটা দারুণ। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে মানুষজন। সবাই খুব বিনয়ী আর সদালাপী। এত দেশের এত বর্ণের সিনেমাপ্রেমী মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়েছে, কোথাও কোনো ঝুট-ঝামেলা নেই। মনে হয়েছে, এখানে সবাই সমান।’
জানা গেল, জয়ার কান উৎসব অভিজ্ঞতার বড় অংশ জুড়ে ছিল সিনেমা দেখা।
‘অনেক ছোটাছুটির মাঝে সময় কেটেছে। এর মধ্যে সিনেমা দেখেছি মন ভরে। রবার্ট রেডফোর্ড অভিনীত অল ইজ লস্ট দেখেছি। ভালো লেগেছে। রোমান পোলানস্কির ভেনাস ইন ফার দেখার সুযোগ পেয়েছি। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবি দেখাটা ছিল স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবিগুলো দেখানো হয় এই থিয়েটারেই। সমাপনী অনুষ্ঠানের দিন দেখেছি জুলু নামের একটা ছবি। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি খুনের ঘটনার পুলিশি তদন্ত নিয়ে ছবিটা।’
—কান মানেই সারা দুনিয়ার সামনের সারির নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভিড়। অদ্রে ততু ছাড়া কার কার সঙ্গে দেখা হলো এ যাত্রা? ‘উৎসব প্রাঙ্গণের ভেতরে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছিলাম, এর মধ্যে দেখলাম অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যানকে। খুব কাছ দিয়েই হেঁটে গেলেন। দেখা হয়েছে শ্যারন স্টোনের সঙ্গেও। অল ইজ লস্ট-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে রবার্ট রেডফোর্ডকে দেখেছি। তবে এর চেয়ে বড় অভিজ্ঞতা ছিল ইরাক, ইরান, রাশিয়ার মতো শুধু মানচিত্রের পাতায় দেখা অনেক দেশের নির্মাতা, কলাকুশলীদের সঙ্গে আলাপের সুযোগ।’ —বাংলাদেশে আপনি বড় তারকা। কিন্তু কানের মতো বিশ্ব আসরে শুধুই আমন্ত্রিত অতিথি। সেদিক থেকে কানের অভিজ্ঞতা কেমন?
‘শুরুতেই আমাকে অনেকে ভারতীয় বলে ভুল করছিলেন। তাঁদের সবাইকে বলেছি আমার দেশ বাংলাদেশ। অনেককে দেখেছি বাংলাদেশ সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারণা রাখেন। শাড়ির কারণেই সম্ভবত অনেকে ছবি তুলতে চাইছিলেন। বাংলাদেশি অভিনেত্রী হিসেবে রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফই) থেকে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এ ছাড়া একটা অনলাইন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছি।’
—এবারের মতো ফুরিয়েছে কানের মিলনমেলা। শেষ দিনে কোনো অপূর্ণতা কি থেকেই গেল? ‘পুরো উৎসবে বাংলাদেশকে খুব মিস করেছি। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে যখনই ছবির টাইটেল দেখানো শুরু হয়, সব দর্শক তুমুল জোরে তালি দিতে থাকেন। ইশ্! আমাদের কোনো ছবি যদি সেখানে থাকত! উৎসবের প্যাভিলিয়নে নানা দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তাঁদের নিজেদের সিনেমাকে তুলে ধরেন। সেখানে বাংলাদেশ থাকলে খুব ভালো লাগত। অনেক খুশির ব্যাপার হতো নিজের দেশের চলচ্চিত্র থাকলে।’ আলাপের ফাঁকে খুব সম্ভবত ট্রেন আসার সময় ঘনিয়েছে। ট্রেনে চেপে জয়া কান থেকে যাবেন প্যারিস। অগত্যা এ যাত্রা ফোন রাখতে হলো…।
কান উৎসবে জয়া
