বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনআগামী সংসদ নির্বাচনে মোছলেম-ছালামের একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

আগামী সংসদ নির্বাচনে মোছলেম-ছালামের একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। নগর ঘিরে তার রাজনীতি, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ) আসন থেকে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশী। এই আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন ও সহ–সভাপতি কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামও দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী। দলীয় মনোনয়নের তালিকায় এই তিন জনের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। সিডিএ চেয়ারম্যান ছালামের রাজনীতি ও উন্নয়ন নিয়ে নগরীতে সরব থাকলেও ওপারের বোয়ালখালীর রাজনীতির সঙ্গে তেমন সখ্যতা নেই। তবে সমাজনীতিতে কিছুটা সখ্যতা রয়েছে।

গত রবিবার বোয়ালখালী উপজেলার গোমদ–ী ফুলতলী এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন আবদুচ ছালাম। একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে ব্যাপক নেতাকর্মীর সমাগম ছিল। অনুষ্ঠানে দুই নেতা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে একে অপরের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন। ছালাম তার বক্তব্যে মোছলেম উদ্দিনকে মামা সম্বোধন করে বলেন, ‘আমার মামা মোছলেম উদ্দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা পেলে আমি অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করবো। আর আমি দলীয় প্রতীক পেলে মামা আমার জন্য কাজ করবেন, তা প্রকাশ্যে জানতে চাই।

ছালাম তার বক্তব্যে নাম উল্লেখ না করে সাংসদ বাদলকে লক্ষ্য করে বলেন, নৌকা টিকিট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের দূরে রেখেছেন। নৌকার সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা–ের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। উন্নয়নের চাবিকাঠি এমপিদের হাতে। জন–প্রত্যাশিত উন্নয়ন করতে না পারলে তার দায়ভার কে নেবে ? তা তো সরকার নেবে না। সভায় মোছলেম উদ্দিনও ছালাম মনোনয়ন পেলে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘নৌকা নিয়ে যে আসবেন, আমি তার জন্য কাজ করবো। মোছলেম উদ্দিন চট্টগ্রাম–৮ আসনের বাসিন্দা হলেও পাশের পটিয়া সংসদীয় আসন থেকে দুইবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। ১৯৯৬ ও ২০০১ এর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৮ আসন থেকে দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছিলেন। কিন্তু ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদকে আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে পরাজিত করে জয়ী হন মঈনউদ্দিন খান বাদল। নির্বাচনে আগে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ মোছলেম উদ্দিন ও আবুল কালামের সমর্থিত অংশ নৌকা বিজয়ে একাট্টা হয়ে কাজ করেছিল। নেতাকর্মীদের ঐক্যে ৩৫ বছর পর এই আসনে ‘নৌকা প্রতীক’ জয়ী হয়। কিন্তু সরকার গঠনের পর সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদলের সাথে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর বোয়ালখালী উপজেলা হাসপাতালের বর্ধিত অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদলের ওপর ক্ষোভ ঝারেন মোছলেম উদ্দিন ও আবুল কালাম। পরবর্তীতে মোছলেম–কালামের মধ্যে ফের ফাটল ধরে। তার সুযোগ নিয়ে এমপি বাদলের সঙ্গে কালাম গ্রুপের সখ্যতা গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি ফের দুই ভাগে ভাগ যায়। দুই গ্রুপের মধ্যে শাপে–নেউলে সম্পর্ক। দুই গ্রুপকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃ প্রতীম সংগঠনগুলোর মধ্যে দুটি করে কমিটি রয়েছে। দলীয় কার্যক্রমও আলাদাভাবে চলে আসছে।  ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাসদকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন আহমদ, আবদুচ ছালাম ও আবুল কালাম দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে মাহজোটের শরিক দল জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তিনি এবারও নৌকার মাঝি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী চার জনের মধ্যে  মোছলেম উদ্দিন ও আবদুচ ছালাম ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। দলীয় প্রতীক পাওয়া সাপেক্ষে একে অপরের জন্য নির্বাচনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ