সোমবার, মে ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাতের সাহসিকতায় গভীর সমুদ্রে নৌকা ডুবিতে ভাসতে থাকা ১২...

ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাতের সাহসিকতায় গভীর সমুদ্রে নৌকা ডুবিতে ভাসতে থাকা ১২ জন জেলে উদ্ধার

তীব্র দাবদাহের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়। এরই মধ্যে সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় হটাৎই দমকা হাওয়ার কবলে পরে ১০-১২ জন জেলেসহ দুইটি মাছ ধরার নৌকা ডুবে যায়। দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে উত্তাল সমুদ্রে ভাসতে থাকে জেলেরা। প্রাণশক্তি যখন প্রায় শেষ তখনই ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাতের। একে একে সবাইকে নিজ নৌকায় তুলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাদের বাঁচান ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত।

ঘটনাটি ৭মে যখন দেশের সকল নৌ ও সমুদ্র বন্দরে জারি ছিল স্থানীয় সতর্কতা সংকেত। আবহাওয় অধিদপ্তর জানায় তখন সব নৌযানকে বলা হয় নিরাপদে চলাচল করতে। হঠাৎ দমকা হাওয়াসহ বর্জ্য বৃষ্টির কবলে পরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্রবন্দর। এই বৈরী আবহাওয়ায় চট্টগ্রাম বাঁশখালী উপকূলের কাছাকাছি এসে ঝড়ের কবলে পড়ে মাছ ধরার বেশ কয়েকটি ট্রলার। ডুবে যায় ফিশিং বোট।

ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাতের এই সাহসী পদক্ষেপের মুঠোফোনে ধারণকৃত ভিডিও ছড়িয়ে পরে নেট দুনিয়ায়। সেখানে দেখা যায় কেউ কাঠ, কেউ বা পানির বোতল ধরে উত্তাল সমুদ্রে ভাসছিলেন। ঢেউ এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে তারা কোনদিকে যাচ্ছেন তা বুঝতেই পারছিলেন না। জানা যায় নৌকা দুটি ডুবে যাওয়ার পর প্রায় তিন ঘন্টা ধরে সমুদ্রে ভেসেছিলেন তারা। মৃত্যু যখন কপট হাসি হাসছিল একটু সামনেই তখনই চোখে ভেসে উঠে হাসনাতের নৌকা।

ভিডিওতে ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাতকে চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় বলতে শোনা যায়, ‘‘এক এক করে সবাই নৌকায় আসো, পেছনে ইঞ্জিন তাই সাবধানে আসো” কেবল উদ্ধার করেই দায়িত্ব শেষ করেননি ক্যাপ্টেন হাসনাত। উদ্ধারকৃত জেলেদের সবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থাও করেন তিনি। বর্তমানে উদ্ধারকৃত সবাই সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পরলে সবাই ক্যাপ্টেন হাসনাতের এই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ক্যাপ্টেন হাসনাত বলেন, সকালে ৭ টার দিকে হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ঝড় থাকে। আমার একটা প্রোগ্রাম ছিল। আমরা মূলত মাদার ব্যাসেলে গিয়ে বড় জাহাজ চিটাগাংয়ে নিয়ে আসি। এমনই একটা প্রোগ্রাম ছিল আমর। সকাল ৭টার আগে রওনা হওয়া কথা থাকলেও ঝড়ের কারণে দেরী হয়। সমুদ্র কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমরা রওনা দেই। বোটে করে যাচ্ছিলাম জাহাজের (মাদার ব্যাসেলের) দিকে। জাহাজটা তখন কুতুবদিয়া থেকে আসছিল। একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট আছে যেখান থেকে জাহাজে উঠি। বাঁশখালী উপকূলের কাছাকাছি গেলে দেখতে পাই- পানির উপর হাত। কাছে গিয়ে দেখি বোট উল্টে গেছে। জেলেরা কাঠের বোট এবং কাঠ ধরে ভেসে আছে। পরে তাদেরকে উদ্ধার করলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই দেখি আরেকটা বোট। সেই বোটটিও উল্টে আছে। সেখানেও ৪/৫ জন ভেসে আছে। সব মিলিয়ে দুইটা বোট থেকে ১২ জন জেলেকে সবাইকে ভালোভাবে উদ্ধার করতে পেরেছি। জেলেদের আমরা পরে ডাঙ্গায় নামিয়ে দিয়ে কাজে যাই।

উদ্ধার হওয়া লোকজন মৎস শিকারি। ঝড়ের কবলে পরে তাদের বোট ডুবে যায়। আর সেই সময় থেকেই তারা প্রায় দুই আড়াই ঘণ্টা ভেসে ছিল। প্রচুর নোনা পানি খেয়েছে। যখন উদ্ধার করি তখন তাদের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। এদের মধ্যে একজন সাঁতার জানতো না। সে প্রচুর লবণ পানি খেয়েছিল। বমি করছিল। প্রথমে তাকে নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম কিন্তু পরে সে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ