বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউরোজা এলেই দাম বাড়ে

রোজা এলেই দাম বাড়ে

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

রমজানের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। রমজান আসলে সারা পৃথিবীজুড়ে যখন বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক চলে মূল্যছাড়ের ছড়াছড়ি, তখন আমাদের দেশে শুরু হয় পণ্যের দাম বাড়াবাড়ির প্রতিযোগিতা। রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইফতারসামগ্রীর দাম নিয়ে এখানে শুরু হয় উৎকন্ঠা। প্রতিবছর নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নিয়ে এই উৎকন্ঠার সৃষ্টি হলেও তা নিরসনে নেয়া হয় না কার্যকর কোন ব্যবস্থা। বিশেষ করে কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, গাজর, বেগুন, টমেটো এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ইতোমধ্যেই এসব পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণে পৌঁছেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে কোন পক্ষের কোন ধরনের পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
কৃত্রিম সংকটের কারণে ইফতারির উপাদনগুলোর দাম বেড়ে যায় জানিয়ে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি মাহবুবুল আলম সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। আমাদের দেশে এসব পণ্যের কোনো সংকট নেই। প্রতিবছর রমজান আসলে কাঁচামরিচ আর বেগুনে যেন গজব নাজিল হয়। প্রশাসনকে যৌথ মনিটরিং জোরদার করে কী কারণে এমন সংকট হচ্ছে, তা বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইফতারসামগ্রীর মধ্যে কাঁচামরিচের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনগুণে। খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা দামের কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দামে। টমেটোর দাম বেড়ে দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে। ৪০ টাকা দামের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দামে। তাছাড়া ৫০ টাকা বেড়ে ধনেপাতা ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, ১০ টাকা বেড়ে গাজর ৫০ টাকা, ১০ টাকা বেড়ে ক্ষীরা ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হঠাৎ করে এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন বাজারের আড়তদার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাঁচামরিচের পুরো চাহিদা মেটানো হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। অনেক জায়গায় এবার জলাবদ্ধতার কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে। যার কারণে দামও বাড়ছে। তবে এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী একটি স্িনি্ডকেটও কাজ করে। প্রতিবছর রমজানের আগে এই সিন্ডিকেট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে কাজির দেউড়ি বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ কামাল বলেন, আমদানি করা না হলে পণ্যের দাম কমবে না। প্রতিবছর কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এবছরও রমজানের ১০ দিন আগ থেকে দাম বাড়া শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে যদি এসব মনিটরিং বা আমদানির ব্যবস্থা নেয়া না হয় তবে দাম কমবে না। তাছাড়া রমজানের আগে পুরো মাসের বাজার একসাথে করার একটা ঝোঁকও আছে। সেটারও কিছুটা প্রভাব পড়ে।
মূলত রোজার দুই তিন দিন আগে থেকে পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায়। যার কারণে এ সময়ে কিছু পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এসময়ে এসে একেক বছর একেক পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বাড়ে। তবে প্রায় প্রতি বছর রমজানের সপ্তাহখানেক আগে থেকে ইফতারির উপকরণসমুহের দাম বেড়ে যায়। চাহিদা আর যোগানের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হলেও আসলে কি কারণে দাম বাড়ে তার কোনো সঠিক অনুসন্ধান নেই কারো কাছে। তবে বাজার বিশ্লেষকদের দাবি, কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতিবছর রমজানের আগে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাঁচামরিচ আর বেগুন দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে। এসব পণ্য বিদেশেও রফতানি হয়। আর রমজান আসলে রফতানি বন্ধ থাকার পরও সংকট তৈরি হয়। সিন্ডিকেট ভাঙা গেলে দেশবাসী এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জোবায়ের আহমেদ বলেন, কাঁচামরিচ, বেগুন ইত্যাদির দাম বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু এখানে আমার দায়িত্বের আওতায় কিছু নেই। প্যাকেটজাত দ্রব্যছাড়া খোলা দ্রব্য ভোক্তা অধিকার আইনে আমরা কভার করতে পারি না। এটা নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। আসলে আমাদের মধ্যে দেশ আর মানবতাবোধের অভাব রয়েছে। এ সবের ছিটেফোঁটাও থাকলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা থাকত না।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা ও বৃষ্টি দাম বাড়ার কারণ হলেও দৃশ্যত কারণ রমজান। রমজান সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়। তাছাড়া সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও রমজানের এসব সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই। অন্যদিকে মরিচ, বেগুন, ধনেপাতাসহ রমজানে চাহিদা থাকে, এমন পণ্য আমদানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব পণ্য আমদানি করা গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, প্রশাসন আমাদের সাথে অঙ্গীকার করেছিল বাজার মনিটরিং করবে। কিন্তু তারা নিয়মিত এটা না করায় ব্যবসায়ীরা আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। অথচ কোনো পণ্যেরই সংকট নেই আমাদের। এ অবস্থায়ও রমজানকে ঘিরে যে সব পণ্যের চাহিদা, সেসবের দাম বেড়ে গেছে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করার মাধ্যমে এর সমাধান করা যেতে পারে। আমরা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নিয়মিত তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, রংপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচামরিচের ফলন হয় বেশি। আমন আবাদের পর চরাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে মরিচ চাষ করেন। তাছাড়া বেগুন, ধনেপাতা, গাজরের ফলনও মেটানো হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। অন্যদিকে প্রতিবছর দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বেগুন, ধনেপাতা, গাজর ও কাঁচামরিচ বিদেশে রফতানি হয়। রমজান আসলে অবশ্য এসব পণ্যের রফতানি বন্ধ করে দেয় সরকার। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ