শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়মণ্ডপে কোরআন রাখা ব্যক্তি শনাক্ত, নাম ইকবাল

মণ্ডপে কোরআন রাখা ব্যক্তি শনাক্ত, নাম ইকবাল

কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তার নাম ইকবাল হোসেন (৩৫)। সে কুমিল্লার সুজানগর এলাকার নূর আহমেদ আলমের ছেলে। ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজে এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজনভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তিনি কিছু একটা নিয়ে মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন। আবার ঘন্টাখানেক পর তাঁকে কিছু একটা কাঁধে নিয়ে রাস্তায় সন্দেহভাজনভাবে ঘুরতে দেখা যায়। আর এই এক ঘণ্টার মধ্যে মন্দিরের চিত্র পরিবর্তন হয়। তবে মন্দিরে ভেতরে কোন সিসি ক্যামেরা না থাকায় ভেতরে অই সময় কি ঘটেছে তা জানা যায়নি। পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আগামীকাল এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবে পুলিশ। জানা যায়, ইকবাল হোসেনের বাবা একজন মাছ ব্যবসায়ী। কিন্তু কেন , কাদের জন্য তিনি এই কাজটি করেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে এখনও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, শনাক্ত ইকবাল হোসেন কোথা থেকে ওই কোরআন শরীফটি সংগ্রহ করেন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাও বের করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে কোরআন রাখা হয়। সে সময়ই সরিয়ে নেওয়া হয় হনুমানের হাতে থাকা গদা। গদা নিয়ে চলে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

ফুটেজে দেখা যায়, রাত ২টা ১০ মিনিটে দারোগাবাড়ির মসজিদ থেকে কিছু একটা হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন এক যুবক। তার গতিবিধি সন্দেহজনক। এর এক ঘণ্টা ২ মিনিট পর আরেকটা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুমিল্লার নানুয়াদীঘি অস্থায়ী মণ্ডপের উত্তর-পূর্বদিকের রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন ওই ব্যক্তি। তার কাঁধে ছিল হনুমানের হাতে থাকা গদা।

ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করে। গত ১০ বছর আগে বিয়ে করেন ইকবাল। জেলার বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করে। তার এক ছেলে হয়। পরে পাঁচ বছর পরে ইকবালের ডিভোর্স হয়। তারপর ইকবাল জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে বিয়ে করে। এ সংসারে তার এক ছেলে এক মেয়ে। ইকবালের স্ত্রী-সন্তান এখন কাদৈর গ্রামে থাকে।

ইকবালের মা আমেনা বেগম আরো জানান, ইকবাল নেশাগ্রস্ত হয়ে নানানভাবে পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার করতো। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে হাঁটে। গোসলখানার দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করে। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতে ভালোবাসতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেত। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিলো। ইকবাল পঞ্চম শ্রেণি পাস। ১০ বছর আগে বন্ধুদের সাথে অন্য পাড়ার আরো কিছু ছেলের সঙ্গে মারামারি হয়। এ সময় ইকবালকে পেটে ছুরিকাঘাত করে। তখন ইকবালের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

ইকবালের মা আমেনা বেগম বলেন, তারপর থেকে অপ্রকৃতস্থ ইকবাল। তার চলাফেরার কারণে বিভিন্ন সময় চুরির অপবাদে তাকে স্থানীয়রা মারধর করতো বলে আক্ষেপ করতো। ভালো ক্রিকেটও খেলতে পারতো ইকবাল। ইকবালের মা আমেনা বেগম আরো জানান, তিনি কাউন্সিলরের মাধ্যমে জানতে পারেন ইকবাল পূজামণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা নিয়ে আসেন।

ইকাবালের ছোট ভাই রায়হান জানান, ইকবাল কারো প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারে। তার বোধ বুদ্ধি এমন না। সে মণ্ডপ পছন্দ করতো না। ইকবালকে খুঁজতে পুলিশের সঙ্গে গত শুক্রবার থেকেই আছেন। ইকবাল ভালো কোরআন তেলওয়াত করতে পারে।  তবে রায়হান ও তার মা আমেনা বেগম জানান, তার ছেলে যে অন্যায় করেছে, যদি তা সত্য হয় তাহলে যেন তার শাস্তি হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ