শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদটপমুসলিম পরিবারের চার সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছেন জাস্টিন ট্রুডো

মুসলিম পরিবারের চার সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছেন জাস্টিন ট্রুডো

কানাডার অন্টারিও প্রদেশের একটি মুসলিম পরিবারের চার সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত সোমবার পার্লামেন্টে নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। ট্রুডো এই ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘অপরাধী ঘৃণা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে’ এ হামলাটি চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অন্য যেকোনো দিনের মতো সেদিন আর পরিবারটি ঘরে ফিরতে পারেনি। তাদের জীবনকে একটি হিংস্র, কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক সহিংস ঘটনার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড কোন দুর্ঘটনা নয়। তিনি কানাডার উগ্র ডানপন্থি দলগুলোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গতকাল মঙ্গলবার আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির সময়ে অন্য আরও অনেকের মতো সালমান আফজাল ও তার পরিবারের সদস্যরাও গত রোববারে সন্ধ্যার পর একটু হেঁটে আসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।

রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় তাদেরকে একটি ট্রাক এসে আঘাত হানে। এ হামলায় একজন শিশুসহ পরিবারের চারজন নিহত হন এবং একজন গুরুতর আহত হন। পুলিশের মতে, পূর্বপরিকল্পিত এই হামলার পেছনে ইসলামবিদ্বেষ কাজ করেছে। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি সেখানকার মুসলমানদের প্রায় চার বছর আগে কুইবেকের একটি মসজিদের ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনাটি মনে করিয়ে দিয়েছে। অন্টারিও’র লন্ডন শহরে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করা ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রী সেলমা তোবাহ (৩১) আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, ‘সবার মনে যে আবেগটি কাজ করছে তা হচ্ছে এই হামলার শিকার আমরা যে কেউই হতে পারতাম।

‘তারা সন্ধ্যায় সপরিবারে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই সন্ধ্যায় হাঁটতে যাই। আমি হিজাব পরি— আমার মা, বোন ও বন্ধুরাও পরে। বস্তুত, আমরা যে কেউই তাদের জায়গায় থাকতে পারতাম’, যোগ করেন তিনি।

লন্ডনের পুলিশ সাংবাদিকদের গত সোমবার জানিয়েছে যে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তিন প্রাপ্তবয়স্ক ও দুই শিশু একটি ‘ইচ্ছাকৃত’ হামলার শিকার হয়েছেন। পুলিশ প্রধান স্টিভ উইলিয়ামস জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্ম পালন করতেন বলেই তাদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। নিহতের পরিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য ও কানাডার গণমাধ্যমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে হামলায় নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। নিহতরা হলেন— সালমান আফজাল (৪৬), তার স্ত্রী মাদিহা (৪৪) ও তাদের মেয়ে ইউমনা (১৫) এবং সালমানের মা (৭৪)। হামলায় বেঁচে যাওয়া নয় বছরের শিশু ও সালমানের মায়ের নাম তাদের পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়নি। এ সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী ২০ বছর বয়সী লন্ডন-নিবাসী নাথানিয়েল ভেল্টম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারটি প্রথম ডিগ্রি হত্যাকাণ্ড ও একটি হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

লন্ডনের মেয়র এড হোল্ডার গত সোমবার এক বক্তব্যে বলেছেন যে এই হামলার কারণে তারা শহরে তিন দিনের শোক পালন করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই— এটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যার প্রচেষ্টা। এই হামলা সমগ্র লন্ডনবাসীর বিরুদ্ধে এবং এর মূলে রয়েছে বর্ণনার অযোগ্য ঘৃণা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তোবাহ আরও বলেন যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ইসলামবিদ্বেষ লন্ডনে কিংবা কানাডার জন্য কোনো নতুন ঘটনা নয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কুইবেক শহরে ২০১৭ সালে বন্দুকধারীরা ছয় মুসলমানকে মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় হত্যা করার পর ইসলামবিদ্বেষের প্রতি নিন্দা জানানো ও এই সমস্যাটির গভীরে প্রবেশ করার একটি প্রতীকী বিল কানাডার পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়। কিন্তু, এটি অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়। রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা বলেন যে এটি বাকস্বাধীনতাবিরোধী ও উগ্র ডানপন্থি দলগুলো ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির বিরুদ্ধে কানাডায় ‘ইসলামী শাসন’ প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনেন। তোবাহ জানিয়েছেন, কুইবেকের মসজিদে হামলার পর যেন একটি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এ ঘটনাটির আগে মুসলমানরা যেকোনো বিদ্বেষ বা সহিংসতার ঘটনায় ভাবতেন, ‘যদি কানাডায় এমন হয়? ‘তবে সে ঘটনার পর কানাডার মুসলিমদের কাছে আর কোনো কিছুকেই অসম্ভব বলে মনে হয়নি’, যোগ করেন তোবাহ।

সাম্প্রতিককালে কানাডার মুসলিমদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আলবার্টা প্রদেশের একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে লাঞ্ছনার অভিযোগ, গত সেপ্টেম্বরে টরন্টোর পশ্চিমে একটি মসজিদের কেয়ারটেকারকে ছুরিকাঘাতে হত্যাসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় সরকার উগ্র ডানপন্থি দলগুলোর সহিংসতার ঘটনাকে কঠোরভাবে দমন করার উদ্যোগ নিয়েছে। আইনজীবী ও লন্ডন-ভিত্তিক মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা নাওয়াজ তাহির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই পরিবারটিকে, সমগ্র কানাডিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়কে ও সার্বিকভাবে, সমগ্র কানাডাবাসীকে যে ভীতি আক্রান্ত করেছে, তা নজিরবিহীন। গত সোমবারে এক সংবাদ সম্মেলনে তাহির বলেন, ‘যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা মুসলিম।

সেলমা তোবাহও তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, ‘আপনি কীভাবে আপনার সন্তানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলবেন যে একজন তরুণ মুসলিম ও দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে তারা এখানে নিরাপদে থাকবে? কারণ এই মুহূর্তে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে এ ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ