রবিবার, মে ১২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনমুফতি ইজহার-হারুনের অবস্থান জানতে পুলিশের ব্যাপক অনুসন্ধান

মুফতি ইজহার-হারুনের অবস্থান জানতে পুলিশের ব্যাপক অনুসন্ধান

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও তার পুত্র হারুন ইজহার গোপনে গা ঢাকা দেয়ার পর এদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেছে।  এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) শহীদুল্লাহ ও মাদ্রাসায় তল্লাশি চালানোর সময় থাকা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিকভাবেে এ বিষয়ে জানতে চান ।

  ‘দিনে পালাবার সুযোগ দিয়ে রাতে তল্লাশি!’ শীর্ষক একটি নিউজ সোমবার রাতে ে প্রকাশিত হয়। ে ওই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশের উর্ধ্বতন মহলে এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

 এদিকে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার  বলেন,  মাদ্রাসাটির ছাত্রবাসে কি ধরণের বিস্ফোরণ ঘটেছে এটা বুঝতে পুলিশের একটু দেরি হয়ে যায়। এর ফাঁকে আসামীরা পালিয়ে গেছে। তবে আসামীদের ধরতে সম্ভাব্য সব স্থানে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

 বিশেষ একটি সূত্র হেফাজত নিয়ন্ত্রিত অপর একটি মাদ্রাসায় মুফতি ইজহার অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত করেছে।

 এর আগে সোমবার রাতে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসা ঘিরে তিন ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসময় জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বহুল আলোচিত মুফতি ইজহার ও তার ছেলে হারুন ইজহারকে আটকের চেষ্টা করা হলেও তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

দিনভর মুফতি ইজহার মাদ্রাসার ভেতরে প্রকাশ্যে অবস্থান করলেও পুলিশ তাকে আটক বা হেফাজতে নেয়নি।

তবে পুলিশ মাদ্রাসা থেকে পাঁচজনকে হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরির কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে। এরা হলেন, মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক তফসির আহমেদ (৫০), হেফজখানা শিক্ষা (আরবি) বিভাগের শিক্ষক মো.এছহাক (৩৩), হাদিস মাধ্যামিক বিভাগের শিক্ষক আব্দুল মান্নান (২৬) এবং কিতাব বিভাগ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (২৪) ও বোর্ডিং সুপার মনির হোসেন (৫৫)।

মুফতি ইজহারুল ইসলামকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগের বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো.শহীদুল্লাহ  বলেন, ‘কাউকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার প্রশ্নই আসেনা। আপনাদের এ অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। মাদ্রাসার উপর আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। কেউ পালিয়ে থাকতে পারবেনা। বোমা বানানোর সঙ্গে যারা জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।’

এর আগে সোমবার সকাল ১১টার দিকে নগরীর লালখান বাজারে মুফতি ইজহারুল ইসলাম পরিচালিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মাদ্রাসার ছাত্রসহ পাঁচজন আহত হয়।

ঘটনার পর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার বোমা বিস্ফোরক দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে প্রথমে সীসাযুক্ত মার্বেল ও কাঁচের টুকরা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পুলিশ সীসাযুক্ত মার্বেল পাবার পরও সেখানে বিস্ফোরকের আলামত উদ্ধারের বিষয়টি চেপে যাবার চেষ্টা করেন।

পুলিশ মাদ্রাসায় গেলেও মুফতি ইজহারুল ইসলাম মূল ফটকের সঙ্গে লাগানো বৈঠকখানায় বসে দীর্ঘক্ষণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুর দেড়টার দিকে  প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়।

এসময় মুফতি ইজহার দাবি করেন, ল্যাপটপের চার্জার বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি কোন ধরনের বোমা বানানোর কথা অস্বীকার করেন।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবারও মাদ্রাসায় গিয়ে মুফতি ইজহারুল ইসলামকে তার বৈঠকখানায় নামাজ পড়তে দেখা গেছে। এসময়ও তার বৈঠকখানার সামনে পুলিশের কোন নজরদারি দেখা যায়নি।

এর মধ্যেই পুলিশ ওই কক্ষ থেকে তিনটি তাজা হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধার করেন। সিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম আরও হ্যান্ডগ্রেনেড থাকার তথ্য পুলিশকে দেন। পুলিশ মাদ্রাসায় অভিযান চালানোর তোড়জোড় শুরু করেন। এরপরই মূলত বদলে যায় দৃশ্যপট।

ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দেখা গেছে, পুলিশ অভিযান চালানোর জন্য ফোর্স জড়ো করতেই প্রায় আধঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। এর মাঝে নির্বিঘ্নে আত্মগোপনে চলে যান মুফতি ইজহার। এর আগে দুপুরেই মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যান হারুন ইজহার।

সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে প্রায় ১০ প্লাটুন পুলিশ পুরো মাদ্রাসা ঘিরে অভিযান শুরু করে। প্রথমেই মাদ্রাসার শ্রেণীকক্ষে অভিযান শুরু করলেও বৈঠকখানার যেখানে দীর্ঘক্ষণ মুফতি ইজহারুল ইসলাম বসেছিলেন সেখানে পুলিশের কেউ যাননি।

রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত পুলিশ মাদ্রাসার সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে প্রতিটি ভবন, ছাত্রাবাস, মুফতি ইজহারের বাসায় অভিযান চালায়। মুফতি ইজহারের বাসা থেকে ১৮ বোতল পিউরিক এসিড জব্দ করা হয় বলে জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ হাজারী।

এদিকে দীর্ঘসময় মুফতি ইজহারুল ইসলামের উপর কোন নজরদারি না রাখার বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো.শহীদুল্লাহ  বলেন, ‘আমরা বিস্ফোরণটি কিভাবে ঘটেছে সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিধ্বস্ত কক্ষটিতে বিস্ফোরকের আলামত পাবার পরই আমরা আর দেরি করিনি। সাথে সাথে অভিযান শুরু করেছি।’

নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফ  জানান, আটক পাঁচজনকে খুলশী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য, মাদ্রাসাটির পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও তার ছেলে হারুন ইজহারের বিরুদ্ধে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হন পিতা-পুত্র। এছাড়া মুফতি ইজহারের আরেক ছেলে মুসা বিন ইজহারও জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ