শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......৬ চোরাই পথে আসছে মসলা : রাজস্ব ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকা

৬ চোরাই পথে আসছে মসলা : রাজস্ব ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

দেশের ছয়টি সীমান্তপথ দিয়ে চোরাই পথে ভারত, মায়ানমার ও নেপাল থেকে চট্টগ্রামে আসছে মসলা। এ কারণে প্রতি বছর সরকার এ খাতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার শুধু খাতুনগঞ্জে চোরাই পথে আসা মসলার পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ বলে জানা গেছে। এতে বৈধ পথে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেওলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে না পেরে প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
গতকাল রোববার খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা না গেলে ভবিষ্যতে মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শূন্যে পৌঁছাবে বলেও তারা জানান। খাতুনগঞ্জের প্রায় তিনটি সিন্ডিকেট চোরাই পথে এসব পণ্য আনায় সক্রিয় আছে। তাদের অধীনে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক বিভিন্ন স্থানে চোরাই পথে মসলা আনয়নের কাজ করছে।
আমদানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনির ছাগলনাইয়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়া বাজার, বগুড়া, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর, হিলি বন্দর ও নোয়াখালীসহ প্রায় ছয়টি পথ দিয়ে চোরাই পথে আসে মসলাজাতীয় বিভিন্ন পণ্য। এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এরকম অসাধু ব্যবসায়ীরা চোরাইপথে পণ্য এনে বিভিন্ন বাজারে তা পৌঁছায়। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় এদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আসছে। এতে বছরে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জানা যায়, চট্টগ্রামে বছরে মসলার চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টন। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে আমদানি করা হয় প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ১৫ মেট্রিক টন, ২০১১-১২ অর্থ বছরে আট হাজার মেট্রিক টন। সর্বশেষ চলতি অর্থ বছরে তা নেমে দাঁড়ায়  মাত্র আড়াই হাজার মেট্রিক টন। আমদানিকারকরা অভিযোগ করেন, চাহিদার তুলনায় বৈধ পথে আমদানি হওয়া সামান্য পণ্য দিয়ে কীভাবে এতবেশি চাহিদা পূরণ হচ্ছে? অবৈধ পথে মসলা আসছে বলেই বৈধ পথে আমদানির পরিমাণ এতবেশি কমেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এবং খাতুনগঞ্জ ট্রেড এণ্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ সগির আহমদ  বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে চোরাই পথে আসা পণ্যের পরিমাণ ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বৈধ পথে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।’
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে কি করা যেতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, রাজস্ব বোর্ড, জেলা প্রশাসক, ডিবিসহ বিভিন্ন মহলে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এর কোনো আশু সমাধানে এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেননি। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। সেইসাথে অবৈধ পথে পণ্য আনয়নের সাথে জড়িতদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে। বাজারে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে না পেরে ইতিমধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের একজন খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের খান জাহান আলী লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী মো. ইয়াছিন বলেন, ‘আমদানির পরিমাণ বর্তমানে ১০ ভাগের এক ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। যে দামে পণ্য ক্রয় করি তার কম দামে বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি না হওয়ায় কিছু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। চোরাই পথে পণ্য আসার কারণেই এমনটি হচ্ছে। এ কারণে চলতি বছর আমার প্রায় সাত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
বৈধপথে মসলা আমদানি করে ক্ষতির কথা জানিয়ে জাফর মার্কেটের অপর আমদানিকারক মেসার্স মিনহাজ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. ওসমান চৌধুরী বলেন, ‘বাজারে চোরাই পথে আসা পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অতীতের তুলনায় আমদানির পরিমাণ কমেছে অনেক বেশি। ৪-৫ বছর আগে কোরবানি ঈদের সময় শুধু জিরা আমদানির পরিমাণ ছিল ৮০ থেকে ১০০ টন যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টনে। বাজারে একদিকে চোরাই পথে আসা পণ্যের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণও। বৈধপথে আনা পণ্যের চেয়ে চোরাই পথে আসা পণ্যের দাম থাকে কম। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে পণ্য গুদামে পড়ে থাকে। আর এতে অতিরিক্ত ক্ষতির আশঙ্কায় কেনা দামের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতে হয়। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই গুণতে হয় বেশি।’
আমদানিকারকরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন চোরাই পথে পণ্য আমদানি বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা আরো বেশি উৎসাহী হচ্ছে। এ কারণে অতীতে শুধু জিরা, এলাচি চোরাই পথে আসতো। তবে বর্তমানে লবঙ্গ, জায়ফল, জৈত্রিক, পোস্ত প্রভৃতি মসলা জাতীয় পণ্য ছাড়াও অন্য পণ্যও আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজসেই চোরাই পথে পণ্য আসার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ