শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েচট্টগ্রাম বিভাগনুসরাতের খুনিদের পক্ষে না দাঁড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত আইনজীবীদের

নুসরাতের খুনিদের পক্ষে না দাঁড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত আইনজীবীদের

সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ‘নীতিগত সিদ্ধান্তের’ কথা জানিয়েছে ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতি। বুধবার জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে জজকোর্ট ভবনের সামনের রাস্তায় এক মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা আসে। এদিন নুসরাত হত্যার বিচারের দাবিতে শহরের ট্রাঙ্ক রোডসহ অন্যান্য সড়কে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাতে হাত রেখে মানববন্ধন তৈরি করেন। এ সময় আইনজীবীরা বলেন, নুসরাতের খুনিরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় এবং মামলাটি দেখভালের জন্য আইনজীবী সমিতি পক্ষ থেকে একটি প্যানেল গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া অভিযোগপত্রের দুর্বলতার কারণে আসামিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কোনো অবস্থাতেই পার না পায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতি আহ্বান জানান আইনজীবীরা। এ সময় সেখানে বক্তব্য দেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ স্বপন, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহমেদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সহিদুল ইসলাম সেলিম, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) কফিল উদ্দিন, এপিপি ফরিদ উদ্দিন হাজারী, আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ প্রমুখ।

বক্তারা এই মামলার ঘটনা ভিন্ন খাতের প্রবাহিত করা ও নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও সামজিকযোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মো. মোয়াজ্জেমেরও বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া সোনাগাজী বাজারের জিরো পয়েন্টে সোনাগাজীর বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বক্তারা নুসরাত জাহান রাফির খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে দ্রত বিচার কার্যক্রম শেষ করার দাবি জানান।

নুসরাত জাহান রাফি এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এস এম মুসার মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নুসরাত তৃতীয়।

গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। পরে এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে তিনি মারা যান। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাঁদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই নোমান মামলা করেন।

আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার ও জান্নাতুল আফরোজ।

এদিকে রোববার রাতে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। সেদিন বিকেল ২টা ৫৫ মিনিট থেকে দিবাগত রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা জবানবন্দি দেন তাঁরা। জবানবন্দিতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে তাঁরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।

এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় পিবিআইর হাতে আটক মো. শামীমকে রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে আনার কথা রয়েছে। এ মামলায়  পিবিআইর হাতে তিন নারীসহ ১৬ জন আটক রয়েছে। তার মধ্যে ১১ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ