শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউনির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে থেমে থেমে ‘কৌশলী’ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি.....

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে থেমে থেমে ‘কৌশলী’ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি…..

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সময়সীমা ঘোষণার পরও শান্ত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সমঝোতার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলা হলেও আরো দুই মাস অপেক্ষা করবে দলটি। সমঝোতার ক্ষেত্র তৈরিতে আসন্ন সংসদ অধিবেশনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সাথে জাতিসঙ্ঘসহ কূটনৈতিক বলয়ের প্রচেষ্টাকেও বড় করে দেখা হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, সমঝোতা না হলে সঙ্ঘাত অনিবার্য। তবে এখনই বিএনপি সঙ্ঘাতে জড়াতে চায় না। সরকারের উসকানি সত্ত্বেও সতর্কভাবেই তারা পা ফেলবেন। মোক্ষম সময়ে জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে অব্যাহত আন্দোলনে নামবেন তারা। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে থেমে থেমে ‘কৌশলী’ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপিসহ দেশের প্রায় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পর থেকেই এই আন্দোলন চলছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে এই আন্দোলন কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দলটি।

দশম সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের ধোঁয়াশা বিরাজ করছিল। কিন্তু গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তা অনেকটা কেটে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী ২৪ জানুয়ারির আগে যেকোনো সময় জাতীয় নির্বাচন হবে। এই সময়ে সংসদ থাকবে, তবে কোনো অধিবেশন বসবে না। সরকার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীনদের অনড় অবস্থানের বিষয়টি আরেকবার পরিষ্কার হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও নাকচ হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর গত মঙ্গলবার ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিবপর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এখনো সমঝোতার পথেই হাঁটছে। সমঝোতার জন্য আগামী দুই মাসের সুযোগ রেখেই দলটি গণসংযোগমূলক কর্মসূচি দিয়েছে। প্রাথমিক এ কর্মসূচি চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে মাঠে থাকবেন খালেদা জিয়া। কোরবানি ঈদের পর চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় সমাবেশের পর আসবে নতুন কর্মসূচি। দলের নেতারা জানিয়েছেন, সমঝোতা না হলে ওই কর্মসূচি হবে কঠোর।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, সরকার নির্দলীয় সরকার দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে বলেই বিশ্বাস করছি। তা না হলে জনগণই তাদেরকে দাবি মানতে বাধ্য করবে। তিনি জানান, কোরবানির ঈদের পর নতুনভাবে দলের চেয়ারপারসন আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে অসহযোগ, অবরোধ ও লাগাতার হরতাল থাকতে পারে।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে জাতিসঙ্ঘসহ কূটনৈতিক উদ্যোগকেও সমঝোতার অংশ হিসেবে দেখছে বিএনপি। সঙ্কট নিরসনে কূটনীতিক-পর্যায়ের এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। একই সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের নানামুখী প্রয়াস চলছে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, বিএনপির দুইজন প্রতিনিধিও তখন নিউ ইয়র্কে যাবেন। মহাসচিব বান কি মুনের সাথে তাদের বৈঠক হবে। এ দিকে চলতি মাসের মাঝামাঝি জাতিসঙ্ঘের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রাজনৈতিক) অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সমঝোতার ক্ষেত্র তৈরিতে কূটনৈতিক উদ্যোগ ভূমিকা রাখতে পারে।

জানা গেছে, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকার নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা নিয়ে আরো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারে। বিএনপি এই অধিবেশনে অংশ নেবে। একই সাথে সরকারের অবস্থান চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দলের হাইকমান্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এসব জনসভায় জনমত নিজেদের পক্ষে আনার পাশাপাশি নির্বাচনমুখী বক্তব্য রাখবেন খালেদা জিয়া। স্থানীয়-পর্যায়ের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতিও থাকবে তার বক্তব্যে। আন্দোলনের কারণে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

১৮ দলীয় জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বৃহৎ জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টাও অব্যাহত আছে। জানা গেছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এসব দলকে একই প্লাটফর্মে আনার চেষ্টা চলছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব:) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আন্দোলন হবে নিশ্চয়ই। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি সঙ্ঘাত চায় না। সঙ্ঘাত এড়াতে সরকার নির্দলীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে কি না তা শেষ পর্যন্ত দেখতে চায় বিএনপি। না হলে আন্দোলন করেই দাবি আদায় করা হবে। তিনি জানান, আন্দোলন চলছে। কঠোর হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর। এ জন্য আরো কিছুটা সময় লাগবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ