শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নতুন স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে নবজাতক সেবা কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে আমেরিকার সহায়তা অব্যাহত থাকবে...

নতুন স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে নবজাতক সেবা কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে আমেরিকার সহায়তা অব্যাহত থাকবে – মজীনা

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

২১ হাজার পাঁচশ’। সংখ্যাটি বেশ বড়। কিন্তু সংখ্যাটি পছন্দ করেন না বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা। বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) পরিদর্শন শেষে শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। মজীনা বলেন, ২১ হাজার পাঁচশ’ সংখ্যাটি আমাকে বেশ নাড়া দেয়। কারণ, এটি হলো নবজাতক বাংলাদেশিদের সংখ্যা, যারা অক্সিজেনের অভাবে বা অ্যাসফিক্সিয়ায় চলতি বছর মৃত্যুবরণ করছে। আমার মতো কেউই এ সংখ্যাটি পছন্দ করবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি’র রিচার্ড গ্রিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন মিয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. এসএম জাকারিয়া স্বপন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন অনুষদের সদস্য, বিভিন্ন অফিস প্রধান ও সিনিয়র নার্সরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অ্যাসফিক্সিয়া নবজাতক মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ উল্লেখ করে মজীনা বলেন, বাংলাদেশ এই সংখ্যা কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০৩৫ সালের মধ্যে এই রোগে শিশু মৃত্যুহার নিঃশেষ করতে বাংলাদেশ মনোমুগ্ধকর কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে।

মজীনা আরো বলেন, লক্ষ্য থাকা এবং লক্ষ্য অর্জন করা ভিন্ন বিষয়। সেখানেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা শিশু জন্মের পর প্রথম মিনিটে জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৭ হাজারের বেশি ধাত্রী ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের সাধারণ, উদ্ভাবনীয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যা জন্মলগ্নে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট পাওয়া শিশুদের বাঁচাতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, তাই বলে আমাদের নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২৫ হাজারেরও বেশি সেবাদানকারীদের এই পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের নবজাতকদের প্রথম নিঃশ্বাস নিতে সহায়তা করতে আমেরিকা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। এই মেডিকেল বিশ্বাবিদ্যালয় শিশুদের নিঃশ্বাস নিতে সহায়তা করার উদ্যোগে আমেরিকা, ইউনিসেফ ও বাংলাদেশে অন্যান্য মিত্রদের অংশীদার।

এই বৈচিত্র্যময়, উদ্ভাবনী সরকারি-বেসরকারি অংশদারিত্ব প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে যে, বাংলাদেশে অ্যাসফিক্সিয়া হ্রাস পাবে কিংবা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবজাতকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত আইসিইউ পরিদর্শন করে বলেন, যেহেতু ৬০ শতাংশ মৃত্যু পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের জীবনের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে ঘটে, সেজন্য এ ধরনের কেন্দ্র শিশু মৃত্যু হার কমানোর জন্য অপরিহার্য।

আগামীতে শুরু হতে যাওয়া নতুন স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে এ ধরনের নবজাতক সেবা কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে আমেরিকার সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বুধবার সকাল আটটা ৫৮ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন মজীনা।

নবজাতকদের জন্য আইসিইউ (এনআইসিইউ), সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অটিজম ইন চিলড্রেন, সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার, হেল্পিং বেবিজ ব্রিডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেন্টার, নবনির্মিত আউটডোর, বিভিন্ন বিভাগ এবং বিভিন্ন প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মজীনা। এ সময় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) ডা. মো. শহীদুল্লাহ, অন্যান্য কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যত কার্যক্রম সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন।

প্রসঙ্গত, হেল্পিং বেবিজ ব্রিড, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউএসএআইডি’র আর্থিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মাধ্যমে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প।

এর লক্ষ্য নবজাতকের জন্ম পরবর্তী শ্বাসরুদ্ধতা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা। বিএসএমএমইউ ২০১০ সালে সফলভাবে পাইলট প্রকল্প শেষ করার পর ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী এ কার্যক্রম চালাচ্ছে।  ইতোমধ্যে, ৪৫টি জেলায় প্রশিক্ষণ শেষ করা ছাড়াও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৭ হাজার আটশ’ ৫৩ জন ডাক্তার, নার্স ও সিএসবিএকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোর ট্রেইনার ১২ জন, মাস্টার ট্রেইনার ৬৮ জন ও এক হাজার পাঁচশ’ ১৪ জন ট্রেইনার রয়েছেন।

নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য বাংলাদেশে প্রথম প্যালিয়েটিভ কেয়ার সার্ভিস ২০০৭ সালে শুরু হয় এবং ২০১১ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রূপ লাভ করে। বতর্মান বিএসএমএমইউতে প্রতিদিন বহির্বিভাগ সেবা ১৮ শয্যার ইনডোর সার্ভিস, ২৪ ঘণ্টা টেলিফোন সার্ভিস এবং একটি গৃহসেবা অবকাঠামো চালু রয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসক এবং রোগীদের পরিবারের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ