শনিবার, মে ২৫, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনমনোনয়ন বাণিজ্যে রুখতে আ’লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীর মানববন্ধন

মনোনয়ন বাণিজ্যে রুখতে আ’লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীর মানববন্ধন

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে মানববন্ধন করেছে । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মনোনয়ন বাণিজ্য রুখতে সভাপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে এ মানববন্ধন করে। এসময় তারা অভিযোগ করেন টাকার বিনিময়ে জামায়াত সমর্থিত নেতাদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলেও । তাদের কেউ কেউ আবার তৃণমূলে সর্বোচ্চ ভোট পেলেও প্রার্থিতা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।

মানববন্ধনে ৬ নম্বর কাতারিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘তৃণমূলের ২২ ভোটের মধ্যে ১৪টি ভোট পেয়েছি আমি। কিন্তু টাকার বিনিময়ে নব্য আওয়ামী লীগারদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা এলাকায় কোনো যোগাযোগ রাখে না। আবার ওই ইউনিয়নে ৫ জানুয়ারির পূর্বের প্রতিটি নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ছিল।’ এছাড়া বাঁশখালীর ২ নম্বর সাধনপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘তৃণমূলের সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন না করে স্থানীয় সাংসদ তার মনগড়া লোককে সমর্থন করেছেন বলে শুনেছি। আমি এমপি সাহেবের কাছে দেখা করলে তিনি জানান যে, আমি সর্বাধিক ভোট পেলেও আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। আমি নিয়ম মোতাবেক প্রার্থী মনোনয়নের দাবি জানালে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

সাতকানিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি বলেন, ‘১১ নম্বর কালিহাস ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হাফেজ আহমেদ রাজকার সমর্থিত পরিবারের সদস্য। বর্তমানে সে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। একাত্তরে সে নিজেও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ছিল। টাকার বিনিময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুবুদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুসলেম উদ্দীন তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ধর্মপুর ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার সিদ্দিক আহমেদের পুত্র ইলিয়াস গত নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার তাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে টাকার বিনিময়ে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে এর নিন্দা জানাই। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাই, তাদের যেন মনোনয়ন দেয়া না হয়।

বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য সমাবেশের কথা থাকলেও কিছুই করা হয়নি। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তারা প্রার্থী নির্বাচন করেছে। আমার জানা মতে, ৩০-৪০ লাখ টাকা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করা হয়েছে।

বোয়ালখালী থানার কড়লডাঙ্গার আহল্লা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ বলেছেন, ‘টাকার বিনিময়ে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি, তিনি বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৫৫ নম্বর সাক্ষী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। সে থানার দালাল হিসেবে পরিচিত। তাদের বাবা, চাচারা আল বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

এছাড়া চন্দনাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা ফারুকী বলেন, ‘৫ নম্বর বড়মা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কিন্তু দুবাই প্রবাসী খোরশেদুল আলম টিটুর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ ও স্থানীয় এমপির ভাই মন্টু তাকে মনোয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলে সর্বসম্মতিক্রমে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কেন্দ্র থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, নেতাকর্মীদের অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ডাবলুকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ