রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপগ্রামীণ ব্যাংকের দিকে সরকারের নজর দেয়া উদ্দেশ্যমূলক

গ্রামীণ ব্যাংকের দিকে সরকারের নজর দেয়া উদ্দেশ্যমূলক

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত এতসব প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে সরকার বার বার কেন দুর্নীতিমুক্ত গ্রামীণ ব্যাংকের দিকে নজর দিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের পর প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেক ভালো চলছে- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেছেন।

বুধবার ড. ইউনূসকে একজন বড় মাপের রাজনীতিবিদ আখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, “পদত্যাগ করার পর থেকেই তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে লেগেছেন, কর্মীদের উস্কানি দিয়ে রাস্তায় নামিয়েছেন।” আর গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস নয়, প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষার জন্যই সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী।

তবে, গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। ব্যাংকটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়ার সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সংসদে অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও যে গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ ভাগ মালিকানা গরিব নারীদের, সেই ব্যাংককে ধ্বংস করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের মালিকানা কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হলে গ্রামীণ ব্যাংকের বিশেষত্ব আর থাকবে না, নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে গ্রামীণ ব্যাংককে বর্তমান কাঠামোয় চলতে দেয়া উচিত। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দেবে বলে জানান মওদুদ আহমদ।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান সরকার গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের দেয়া সুপারিশের বেশ কয়েকটিকে সরকারের অদ্ভূত অগ্রাধিকার বলে অভিহিত করেছেন। দেশের একটি ইংরেজ দৈনিকে প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, কমিশন ব্যাংকটি গঠনের উদ্দেশ্যই বুঝতে পারেনি। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য কমিশনের সুপারিশকৃত  শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী অথবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড না থাকে, তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের একজন বোর্ড সদস্য হওয়ার জন্য কেন এটি প্রয়োজন হবে। তাছাড়া শিক্ষিত লোকদের পরিচালনায় দেশের অন্যসব ব্যাংকে যেখানে দুর্নীতি ও ঋণ খেলাপীর বোঝা রয়েছে সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মহিলাদের পরিচালনায় অনেক সুষ্ঠুভাবে, দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলেও রেহমান সোবহান উল্লেখ করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের চলমান সঙ্কট নিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, সরকার গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের সুপারিশ যথার্থ নয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতসহ নৈরাজ্য দুর্নীতি চলছে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকে এ ধরনের ঘটনা নেই। তাই গ্রামীণ ব্যাংক বাদ দিয়ে যেসব খাতে বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানের দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো সারাবিশ্বে সমাদৃত ও স্বীকৃত। এ কাঠামোর অনুকরণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাংক গড়ে তোলা হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংকটির কাঠামো যেমন আছে তেমনই থাকা উচিত এবং এ কাঠামোর গ্রামীণ ব্যাংকই বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে।

আন্তর্জাতিক মহলে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা এবং স্বীকৃতির কথা তুলে ধরে ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও ক্ষমতায়নে জন্য পরীক্ষিত একটি পদক্ষেপ হলো গ্রামীণ ব্যাংক। এখানে ৮৪ লাখ মহিলা কাজ করছে কিন্তু কোনো দুর্নীতি নেই। অন্যদিকে, সারাদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো অনিয়ম-নৈরাজ্যে ভরপুর। সরকার সেগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বার বার গ্রামীণ ব্যাংকের দিকে নজর দিচ্ছে। এজন্য সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফেরদৌস আরা বেগম।

তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক শুধু ব্যাংকই নয়, নারীর ক্ষমতায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই যে, ব্যাংকের সদস্যরাই পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এমন সব ব্যবস্থা নিয়ে চমতকার কাঠামোয় গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে উঠেছিল। ব্যাংকটির কাঠামো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে শিগগিরি সরে আসতে সরকারের প্রতি আহবান জানান ফেরদৌস আরা বেগম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ