খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শেয়ার বাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা লুট করেছে। ডেসটিনির টাকা পাচার করেছে। জনতা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। অবৈধ অর্থমন্ত্রী বলেন এটা সামান্য ব্যপার। কিন্তু এখন স্বীকার করেছেন যে, ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। স্বীকার করেছেন যে ব্যবস্থাপনায় দলীয় পরিচয়ে লোক নিয়োগ করা ঠিক হয়নি।’ খালেদা জিয়া এ সময় বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী দেরিতে হলেও এই কথা স্বীকার করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ। কারণ আওয়ামী লীগের কেউ সত্য কথা বলে না।’
তিনি বলেন, ‘ এ সরকার বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াবে বলে কুইক রেন্টাল করেছে। ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়েনি। তারা দাবি করে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। কিন্তু উৎপাদন সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বাসা বাড়িতে নতুন সংযোগ দিতে পারে না। কিন্তু দফায় দফায় দাম বাড়ায়। তিনি বলেন, দেশে এখন সার উৎপাদন হয় না। সরকার বিদেশ থেকে সার আনে, কেননা এতে কমিশন পাওয়া যায়। কয়েকদিন আগে খবরে দেখলাম মসজিদ, এতিম খানা, মন্দিরের টাকা মেরে দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন।
এ সরকার টাকা দেখলে লোভ সামলাতে পারে না উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার মানুষের জন্য কাজ করে না, টাকা দেখলে নিজেদের লোভ সামলাতে পারে না। বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা নেয় কিন্তু কাজ করে না। রাস্তা করার নামে তারা কোটি কোটি টাকা নিয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ করছে না। খালেদা জিয়া এ সময় বলেন, ‘হাঁটি হাঁটি খাই খাই, যা পাই তাই খাই।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন খাল বিল পর্যন্ত ভরাট করে ফেলছে, বাড়ি ঘর দখল করে ফেলছে। কেউ কিছু বলছে না। খালেদা জিয়া এ সময় আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এসব লুটপাটের জন্য জবাব দিতে হবে। কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
খালেদা জিয়া আরও বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় হাসিনার নামে কত মামলা হয়েছিলো। আমাদের নামেও হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর নিজের ও দলের নেতাদের মামলা তুলে নিয়েছে। আমাদের মামলা তোলে নি। এখন ভয় দেখায় গ্রেফতারের। কিন্তু আমি গ্রেফতারের ভয় পাই না। ওয়ান ইলেভেনের সময় তারা আমাকে দেশের বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি যাইনি। এ দেশের মাটি ও মানুষকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
খালেদা জিয়া আরও বলেন, টিভিতে আমাদের কথা প্রচার পায় না। বিটিভি আওয়ামী লীগের টিভি। তাদের কথা ছাড়া প্রচার করে না।এখন বেসরকারি টিভিগুলোকেও আয়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন করার কথা বললেও স্বাধীন করা হয়নি। আজকে দেশে এক দলীয় শাসন কায়েম করেছে তারা। বিনা ভোটে নিবাচিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু জনগণ তা মানবে না। খালেদা জিয়া আরও বলেন, এ সরকার অনির্বাচিত সরকার, অবৈধ সরকার।
তিনি বলেন, ‘এ সরকার নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে। যার জন্য আজ দেশের আজ এ দুরাবস্থা। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। প্রতিদিন খুন গুম রাহাজানি হচ্ছে।’ আপনারা দেখেছেন, ‘এ সরকার কিভাবে ৠাবকে অন্যায় অত্যাচারের কাজে ব্যবহার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ৠাব আমরা গঠন করেছিলাম সন্ত্রাস দমনের জন্য। সন্ত্রাস দমনও করেছিলাম। কিন্তু তাদের দিয়ে এ সরকার মানুষ ধরে নিয়ে হত্যা করে। এখনও পর্যন্ত আমাদের দলের ৩১০ জনকে হত্যা করেছে, ৩৬ জনকে গুম করেছে।’ তিনি এ সময় জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়েছিলেন কি দেননি?’ জনগণ এ সময় ‘না’, ‘না’ বলে জবাব দেন। খালেদা জিয়া এ সময় বলেন, ‘তাহলে কি করে এই অনির্বাচিত সরকার সংসদে বসে থাকে। তারা কিভাবে লম্বা লম্বা কথা বলে আর আইন পাস করে।’ বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে নিজের আসন গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। বক্তব্য রাখা শুরু করেন বিকেল সোয়া ৫টায় । প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি। জনসভার সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম।
খালেদার আগমন উপলক্ষ্যে সাড়া পড়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন সহ স্থানীয় ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাঝে।কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশের মূল ভেন্যু নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকা। খালেদার আগমন উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা এবং আশ-পাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলের আশ-পাশের সড়ক ও অলি-গলিতে তোড়ন, ব্যানার, ফেস্টুন ও বেলুন উড়িয়ে খালেদা জিয়ার আগমনকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা।
এছাড়া ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে রূপগঞ্জ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে প্রিয় নেত্রী স্বাগত জানাতে মহাসড়কের দুই ধারে রং-বেরংয়ের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। স্লোগানে-স্লোগানে ও ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তারা স্বাগত জানান খালেদা জিয়াকে। সন্ধ্যা ছয়টায় জনসভা শেষে সার্কিট হাউজে বিশ্রাম নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।