শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিশহীদ জিয়ার কাছে আওয়ামী লীগের কৃতজ্ঞ থাকা প্রয়োজন : খালেদা জিয়া

শহীদ জিয়ার কাছে আওয়ামী লীগের কৃতজ্ঞ থাকা প্রয়োজন : খালেদা জিয়া

দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, বিচার বিভাগকে পুরো নিয়ন্ত্রণে নিতেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের অধীনে নেওয়া হচ্ছে। সোমবার রাতে নিজের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস- চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ দাবি করেন।

মতবিনিময়ে অংশ নেন রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় ৫৮ উপজেলায় নির্বাচিত বিএনপির ২৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ২৪ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান এবং জামায়াতের ৮ জন চেয়ারম্যান, ৩০ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১১ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান। এসময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, দেশে আজ দু‘রকমের বিচার। আওয়ামী লীগের লোকজন দোষ করলেও কোনো বিচার হয় না। অথচ বিরোধী দলের নির্দোষ হলেও রেহাই নেই। তিনি বলেন, দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগকে পুরো নিয়ন্ত্রণে নিতেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের অধীনে নেওয়া হচ্ছে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে এবং দেশ স্বাধীন না হলে শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে বের হতে পারতেন না বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন,  এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। সুতরাং এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এই সরকার ‘অবৈধ’ সরকার। এই ‘অবৈধ’ সরকার যত আইন করুক, কোনো আইন টিকবে না। তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার কাছে আওয়ামী লীগের কৃতজ্ঞ থাকা প্রয়োজন, কারণ জিয়া এই হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বিডিআর বিদ্রোহে শেখ হাসিনা ও তার দলের লোকজন জড়িত অভিযোগ করে খালেদা বলেন, কেন সেদিন হাসিনা সুধাসদন থেকে হেয়ার রোডে এসে বসলেন? কেন তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন? কেন তিনি চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বিডিআরের ডিনারে অংশ নিলেন না? কেন সেনাবাহিনীকে উদ্ধার অভিযানে যেতে দেওয়া হলো না? তিনি বলেন, সময়মত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্ধারে অভিযান চালালে এতগুলো সেনাকর্মকর্তাদের জীবন দিতে হতো না।

খালেদা বলেন, আমরা বলেছি আন্দোলন হবে। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। আমরা কখনও বলিনি আন্দোলন সহিংস হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করি, আর আওয়ামী লীগ বোমা মারে, মানুষ পোড়ায়। তিনি বলেন, হাসিনা কি আন্দোলনের নামে মানুষ মারেননি? হাসিনা কি লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে হত্যার হুকুম দেননি। হাসিনার নির্দেশে গান পাউডার দিয়ে বাস জ্বালিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়নি? বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, হেফাজতে ইসলামের নিরীহ আলেমদের এরা নির্বিচারে হত্যা করেছে। তারা যদি হত্যা না করতো তাহলে কেন বাতি নিভিয়ে দেওয়া হল?

তিনি বলেন, আজকে এই ‘অবৈধ’ ও ‘খুনি’দের দোস্ত হয়েছেন ইনু ও মতিয়া। এই ইনু ২ হাজার লোককে হত্যা করেছেন। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর বলেছিলেন মুজিবের লাশ কবর না দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল। মতিয়া চেয়েছিলেন শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগ বলে বিএনপির সঙ্গে নাকি জনগণ নেই। বিএনপি নাকি আন্দোলন করতে পারবে না। কিন্তু আমি বলছি-সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আড়ালে নিজেদের দলীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ছাড়া মাঠে আসুন। আমরাও খালি হাতে মাঠে আসি। দেখি জনগণ কার সঙ্গে থাকে।

উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন মতবিনিয়ময়ে অংশ নেওয়া জনপ্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফল আরও ভাল হতো। কিন্তু এ অবৈধ সরকার কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে দেয় না। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। তারা শুধু মিথ্যা কথা বলে। তারা আছে খুন, দুর্নীতি ও লুটপাট নিয়ে। তারা গণতন্ত্র চায় না। তারা চায় শুধু লুটপাট।

তিনি বলেন, আপনারা এত দূর থেকে এসেছেন কত কষ্ট করে। রাস্তাঘাটের কী যে দূরাবস্থা। ঢাকা শহরের রাস্তার কী বেহাল দশা। কিন্তু একটি রাস্তা ঠিক করে না সরকার। ১০ বছর ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন দেয় না। প্রশাসক দিয়ে চালায়। তারা ব্যস্ত লুটপাট নিয়ে। এজন্য ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। ঢাকা এখন বিশ্বের দুর্গন্ধময় চার নম্বর শহর। আর দেশ দুর্নীতিতে এক নম্বর।

বিএনপি চেয়ারপারসন উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রকৃত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি উল্লেখ করে বলেন, আপনারাই প্রকৃত জনপ্রতিনিধি। কারণ আপনারা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আর ওরা (সরকার) সত্যিকার জনপ্রতিনিধি নয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ