বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিবাগ্‌যুদ্ধে বিএনপি-জাপা

বাগ্‌যুদ্ধে বিএনপি-জাপা

সংসদীয় গণতন্ত্রমতে জাতীয় পার্টি (জাপা) এখন বিরোধী দল। আবার সরকারেও আছে দলটি। ফলত সংসদের বাইরে রাজপথে জাপার কোনও সরকারবিরোধী আন্দোলন নেই। উল্টো অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলটিকে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে সমর্থকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না-যাওয়ায় একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। তাতে কী? বিরোধী দল বলতে যত-না জাপাকে, তারচেয়ে বেশি বিএনপিকেই বোঝে মানুষ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরোধী টার্গেটও বিএনপি। মেয়াদ পূর্ণ করতে হলে আরও চার বছরের বেশি সময় বিএনপিকে সামলে রাখতে হবে সরকারকে। তাহলে এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকে শক্তিহীন হয়ে পড়বে দলটি। বিষয়টি কঠিন হলেও সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে কিছুটা সহজ করে দিয়েছে জাপা। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু দলটির মহাসচিব হওয়ার পর শুধু আওয়ামী লীগই নয়, জাপাও এখন বিএনপির প্রতিপক্ষ। নতুন প্রতিপক্ষকে সামলাতে গিয়ে বিএনপির সরকারবিরোধী অবস্থান এখন আরও নড়বড়ে। আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির মনোযোগ এখন জাপার দিকে।
গত কদিনে জাপানেতাদের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে জাপার  চেয়ারম্যান এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মধ্যে পাল্টাপাল্টি তর্ক এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। দেখেশুনে মজা লুটছে আওয়ামী লীগ- ফেলছে স্বস্তির নিঃশ্বাস; ধরে নিচ্ছে, খালেদা জিয়া-ঘোষিত ‘ঈদের পর কঠোর আন্দোলন’ স্রেফ কথার কথা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতারা একাধিকবার বলেছেন, এরশাদ খুনি ও স্বৈরশাসক। জোর করে ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি জিয়া ও মঞ্জুরহত্যার আসামি। সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই ঢাকায় ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাবের ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, জাসদনেতা ও এরশাদসহ খুনিরা সব একাত্ম হয়েছে। ওই দিনই রংপুরের একটি অনুষ্ঠানে এরশাদ বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি ও জোট সরকার ৩ বার সরকারে ছিল। কিন্তু তখন তারা জিয়া ও মঞ্জুরহত্যা নিয়ে কোনও কথা বলেনি। এখন আমাকে জড়িয়ে কথা বলছে। তার মানে, তারা এখন আমাকে ভয় পায়। বিএনপি আমাকে দালাল বলে। আমি দালালও নই, রাজাকারও নই। আমি যদি হত্যাকারী হতাম, তাহলে খালেদা জিয়া আমার কাছে জমি নিলেন কেন? টাকা নিলেন কেন? বাড়ি নিলেন কেন?
দুদলেরই মহাসচিবও এখন বাগ্যুদ্ধে ব্যস্ত। গত রোববার এক বিবৃতিতে জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনকালে সংঘটিত সব হত্যাকা-ের জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছেন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং অসংখ্য সেনাকর্মকর্তা-মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সিঁড়ি বেয়ে। এর পরদিনই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা বিবৃতিতে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যার জন্য এরশাদের প্রকাশ্যে বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। গত ১২ জুলাই এরশাদকে ক্ষমা চাইতেও বলেন ফখরুল। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত এরশাদের কলামের তীব্র সমালোচনা করে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মিথ্যাচারের জন্য এরশাদকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ১৩ জুলাই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদও জিয়াউর রহমান ও মঞ্জুরহত্যার সঙ্গে এরশাদের জড়িত থাকার কথা দাবি করে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এরশাদ নির্লজ্জ, ভ- ও মোনাফেক। মিথ্যাবাদী এরশাদ বহু রক্তপাতকে পেছন থেকে উসকে দিয়েছেন। তার জীবনই কেটেছে লোভ, হত্যা-খুন আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব যখন জাপা ও এরশাদের বিষোদগারে ব্যস্ত, তখন মির্জা ফখরুলের বাবার দলীয় পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরেন জাপার মহাসচিব। মির্জা ফখরুলকে জাপার ঘরের ‘ছেলে-ভাতিজা’ সম্বোধন করে গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল তার বাবা মির্জা রুহুল আমিনের কথা কি ভুলে গিয়েছেন? তিনি তো এরশাদের মন্ত্রিসভার ভূমিমন্ত্রী ও জাপার একজন সদস্য ছিলেন। জাপার ঘরের সন্তান মির্জা আলমগীরের মুখে পিতৃনিন্দা শুনে আমি একটুও অবাক হইনি। কারণ, গোয়েবলসীয় বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি নিজের বাবার রাজনৈতিক পরিচয়ও ভুলে গেছেন। সে কারণেই তার বিবৃতিতে বলতে পেরেছেন, এরশাদ তার কেনাবেচার রাজনীতিতে কিছু উচ্ছিষ্ট কিনতে পেরেছেন। এরশাদ যদি ক্ষমতায় আসার জন্য ষড়যন্ত্র করে থাকেন, তাহলে সেই ষড়যন্ত্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ছিলেন মির্জা ফখরুলের বাবাসহ বিএনপির নেতারা।
উল্লেখ্য, এর আগের দিন মির্জা ফখরুল সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, এরশাদ বিভিন্ন কূটচালে রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতা-শ্রমিকনেতাসহ অনেককেই কিনতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কয়েকজনকে ছাড়া এরশাদের কেনাবেচার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরশাদ যেমন কেনাবেচা করতে পারেন, ঠিক তেমনিভাবে নিজেও কেনাবেচার পণ্য হন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি-জাপার এই বাগ্যুদ্ধে লাভবান হচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে সামলাতে তাদের এখন কম মনোযোগ ব্যয় করতে হচ্ছে। কিছু লাভ জাপার গোলায়ও উঠছে। বিএনপির মতো বড় দলকে বিতর্কের মাঠে নামিয়ে হৃত ইমেজ ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত এখন দলটি। লোকসান যদি কিছু হয়, সেটা বিএনপিরই। লক্ষ্য ছেড়ে বারংবার উপলক্ষে গড়ানোর ফলে দলটি এখন সংসদে নেই, মাঠের আন্দোলনেও দানা বাঁধতে পারছে না।
  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ