শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়ফাইনালে আর্জেন্টিনা

ফাইনালে আর্জেন্টিনা

ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে চলে গেল আর্জেন্টিনা। বুধবার রাতে টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ফিলিপ লামের জার্মানির মুখোমুখি হলেন লিওনেল মেসিরা। নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময়ে খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হয়েছিল। আর্জেন্টিনা কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলা বলেছিলেন, ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচ দেখে তিনি হুশিয়ার হয়ে গেছেন। রক্ষণ আলগা করে তিনি আক্রমণে যাবেন না। মাঠে তার প্রমাণও মিলেছে।
আর আর্জেন্টিনার দেখাদেখি নেদারল্যান্ডসও হয়তো ধরেছিল একই পথ। ফলে দুই ফুটবল জায়ান্টের প্রথমার্ধটা হয়েছিল নিতান্তই পানসে। মাঝমাঠে আটকেপড়া খেলাটা তাই মোটেই জমেনি। দু’দলের আক্রমণগুলোই প্রতিপক্ষের হাফসীমানায় গিয়ে বাধা পেয়েছে। যেন দাবার ছকে দুই প্রতিপক্ষ পরস্পরকে মেপে দেখার চেষ্টা করছে। কড়া পাহারায় ছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। পুরো প্রথমার্ধ মেসির সঙ্গে আঠার মতো সেঁটে ছিলেন ডাচ ডিফেন্ডার ব্রুনো মার্টিনস ইন্ডি। তার সঙ্গে তাল দিয়েছেন আরেক ডিফেন্ডার রন ফ্লার।  নেদারল্যান্ডস কোচ লুইস ফন গল বলেছিলেন, মেসির খেলা বন্ধের চাইতে তিনি মেসির বল পাওয়ার সাপ্লাই লাইন বন্ধ করতে চান। মাঠে ডাচ খেলোয়াড়রা প্রথমার্ধে কোচের সেই নির্দেশই পালন করার চেষ্টা করেছেন। তাই চেনা মেসিকে অন্তত প্রথমার্ধে দেখা যায়নি। খেটে খেলেছেন এজেকুয়েল লাভেজ্জি এবং গনজালো হিগুয়েন। দুই প্রান্ত দিয়ে তারাই গোটা
কয়েক আক্রমণ করেছেন প্রথমার্ধে। কিন্তু ফল শূন্য। যা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে-অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে কতটা দরকার ছিল। তার অভাবে মেসি কিছুটা হলেও একা হয়ে গিয়েছিলেন!
ওদিকে নেদারল্যান্ডসের খেলাও তথৈবচ। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইতেও তারা পিছিয়ে ছিল। ডাচ তারকা আরিয়েন রবেন এদিন প্রথমার্ধে ছিলেন নিষ্প্রভ। মাঠের দুই প্রান্ত দিয়ে দ্রুতগতিতে কাট করে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের আশপাশে ঢুকে যাওয়া চিরচেনা রবেনকে দেখা যায়নি। ওয়েসলি স্নেইডারও হেঁটেছেন রবেনের পথে। আর একমাত্র স্ট্রাইকার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা রবিন ফন পার্সির অভ্যাস তো সবার জানা। যেদিন তিনি খেলবেন, সেদিন দুর্ধর্ষ। আর যেদিন নিজের সেরাটায় থাকবেন না, সেদিন মাঠে নিতান্তই পথচারী। অন্তত প্রথমার্ধটা তিনি ছিলেন তাই। গোটা কয়েক ক্রস ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করে গেছেন। ব্যস, পার্সির কাজ শেষ। বরং ডার্ক কাউট তার ফর্ম ধরে রেখে ডাচদের কিছুটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়েছেন। তার সঙ্গে চেষ্টা করে গেছেন ডালি ব্লাইন্ড এবং নাইজেল ডি লং।
প্রথমার্ধের ঘটনাহীন ম্যাচে সেরা সুযোগটা এসেছিল মেসির সামনেই। সেটা ১৪ মিনিটে। ডি-বক্সের সামনে বাঁদিক থেকে ফ্রি-কিক পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির জন্য আদর্শ সুযোগ। তা আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ডাচ দেয়ালের ফাঁক গলে দুরন্ত শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ বাধা নেদারল্যান্ডস গোলকিপার ইয়েসপার সিলেসেনকে পরাস্ত করতে পারেননি। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে চমত্কার একটি সেভই করেছেন ডাচ গোলকিপার। প্রথমার্ধে আরেকটি গোলের হাফ চান্স এসেছিল আর্জেন্টিনার সামনে। ৩৪ মিনিটে লাভেজ্জির নিচু ক্রসে সময়মতো পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন হিগুয়েন। বল তার আগেই ক্লিয়ার করেন ডাচ ডিফেন্ডার।
আর প্রথমার্ধে তো আর্জেন্টিনা গোলকিপার সার্জিও রোমেরোর তেমন কোনো পরীক্ষাই নিতে পারেনি ডাচরা। ভাবা যায়, গোটা প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার গোলে তেমন কোনো জোরালো শটও নেই রবেন, পার্সি, স্নেইডারদের। বারদুয়েক কয়েকটি ক্রস এসেছে সেগুলো পাঞ্চ করে বিপদমুক্ত করেছেন রোমেরো। বাকি সময়টা পোস্টের নিচে মোটামুটি নির্ভার তিনি। কারণ পাবলো জাবালেতা, মার্কোস রোহো এবং ইজিকুয়েল গ্যারে মিলে রক্ষণটা বরাবরই মজবুত রেখেছেন। অতএব প্রথমার্ধ শেষ গোলশূন্যভাবেই।
দ্বিতীয়ার্ধে যেন দু’দলেরই ঘুম ভাঙে। প্রথমার্ধের জড়তা ছেড়ে দু’দলই এ অর্ধে আক্রমণে ঝাঁপিয়েছে। ফলে খেলার গতিও বেড়ে গিয়েছিল। সঙ্গে গোলের সুযোগও। কিন্তু দু’দলের আঁটসাঁট রক্ষণভাগ তাদের দায়িত্ব এতটুকু অবহেলা না করায় গোল নামের পরম কাঙ্ক্ষিত ‘বস্তুটির’ দেখা মিলছিল না। ৫৮ মিনিটে গোল পেতেই পারত আর্জেন্টিনা। ফের লাভেজ্জির ক্রস, কিন্তু হিগুয়েন যে ঠিকমতো হেড করতে পারেননি। এর খানিকবাদেই ডার্ক কাউট চমত্কার ক্রস  করেছিলেন আর্জেন্টিনার গোলমুখে। কিন্তু পার্সির হেডের আগেই বল বের করে দেন গ্যারে। ৭৫ মিনিটে আর্জেন্টিনা যে সুযোগটি পেয়েছিল সেটি কীভাবে হিগুয়েন মিস করেছেন সেটা তিনিই জানেন। এনজো পেরেজ মাপা ক্রস করেছিলেন। প্রায় ফাঁকা পোস্টে সেই বলে হিগুয়েন পা ছোঁয়ালেও তা সাইড নেটে আঘাত হানে। নির্ধারিত সময়ের শেষ ১০ মিনিট দু’দলই মরিয়া হয়ে গোলের খোঁজে নেমেছিল। তাতে সেরা সুযোগটা পেয়েছিল ডাচরাই। ৯০ মিনিটের মাথায় একটি আক্রমণ থেকে ব্যাকহিল করে রবেনকে বল দিয়েছিলেন স্নেইডার। কিন্তু ডি-বক্সে ঢুকেও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি রবেন। দুর্দান্ত দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে তা বাঁচান হাভিয়ের মাসচেরানো। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্যভাবেই শেষ হয়
আরও পড়ুন

সর্বশেষ