শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউগাড়ি বিলাসে নামছেন এমপিরা

গাড়ি বিলাসে নামছেন এমপিরা

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

গাড়ি বিলাসে নামছেন এমপিরা। শপথ নেয়ার ৫ মাসের মধ্যেই কিনতে যাচ্ছেন প্রায় কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি। পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জাপানের টয়োটা মোটর করপোরেশনের ডিজেল চালিত জিপ ও টয়োটা ল্যান্ড ক্লুজার। ৪৫০০ সিসির এসব গাড়ির দাম ৫৬ থেকে ৭২ লাখ টাকা। অথচ হলফনামায় দেয়া সম্পদের তথ্য অনুযায়ী এমন মূল্যের গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। কিভাবে গাড়ি কিনবেন প্রশ্নে বেশির ভাগ এমপিরই উত্তর আগের তুলনায় আয় বেড়েছে। ব্যবসাও ভাল চলছে। তাই কোটি টাকার গাড়ি কিনতে কোন অসুবিধা হবে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটা এমপিদের লাভজনক ব্যবসা। নিজেরা চড়বেন কম দামের গাড়িতে। আর এমপি কোটার গাড়ি বিক্রি করবেন ধনাঢ্য কোন ব্যবসায়ীর কাছে। বছরের পর বছর এ রেওয়াজই চলছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) এটাকে অনৈতিক সুযোগ নিয়ে প্রত্যক্ষ দুর্নীতি বলে মন্তব্য করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১০ জন এমপি স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে গাড়ি কেনার আবেদন করেছেন। আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন শতাধিক এমপি। গাড়ির জন্য আবেদন করা ১০ এমপির হলফনামা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগেরই এ ধরনের বিলাসবহুল গাড়ি কেনার আর্থিক সামর্থ্য নেই। বগুড়া-৩ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদারের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। পেশায় আইনজীবী এ এমপি আবেদন করেছেন ৭০ লাখ টাকা দামের ডিজেল চালিত জিপের। হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষিজাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ১০ হাজার টাকা, আইন পেশা থেকে আয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নগদ টাকা ১ লাখ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২ লাখ, স্ত্রী ও নির্ভরশীলের নামে ১২ হাজার করে ২৪ হাজার টাকা, অলঙ্কার রয়েছে ১ লাখ ২৫ টাকা মূল্যের, আসবাবপত্র ৩ লাখ, ৩২ হাজার টাকা দামের একটি কম্পিউটার। এছাড়া স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৮ হাজার টাকার। এই সম্পদ দিয়ে কিভাবে ৭০ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনবেন প্রশ্নে নুরুল ইসলাম তালুকদার  বলেন, কোন অসুবিধা নেই। জমি বিক্রি করবো। পেশায় আইনজীবী। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আমার হাতে বড় বড় মামলা আসছে। বেশি পয়সা পাচ্ছি। কিশোরগঞ্জ-২ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি সোহরাবউদ্দিন আবেদন করেছেন ৭২ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা জিপের। তিনি বলেন, আমার যা টাকা আছে তা দিয়ে ওই গাড়ি কেনা সম্ভব। এরপরও হাতে টাকা থাকবে। ময়মনসিংহ-৯ থেকে নির্বাচিত এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ৬ই মে গাড়ির জন্য আবেদন জমা দেন। তবে তিনি গাড়ির দাম উল্লেখ করেননি। আওয়ামী লীগ দলীয় এ এমপি তার হলফনামায় আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত মোট আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন প্রায় ১৯ লাখ টাকা। গাড়ির আবেদন করা অপর এমপিরা হলেন ঢাকা-১৯ থেকে নির্বাচিত ডা. মো. এনামুর রহমান, নাটোর ২-এর শফিকুল ইসলাম শিমুল, সিলেট ২-এর ইয়াহইয়া চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ ২-এর হাবিবে মিল্লাত, নরসিংদী ২-এর কামরুল আশরাফ খান, বগুড়া ৭-এর এডভোকেট মুহা. আলতাফ আলী ও ময়মনসিংহ ৭-এর এম এ হান্নান।

এ প্রসঙ্গে সংসদ ও সংসদ সদস্যর কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, এমপিরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এ ধরনের সুবিধা আদায় করছেন। এটা অনৈতিক। এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করা রাজনৈতিক ও নৈতিক বিবেচনায় কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আলটিমেটলি এর বোঝাটা পড়ছে জনগণের ওপর। কারণ তাদের ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নবম সংসদে ৩৫০ এমপির মধ্যে ৩১৫ জনই শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা গ্রহণ করেন। এতে সরকার ১৫৮৮ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। এর আগে এত সংখ্যক এমপি একসঙ্গে এই সুবিধা নেননি। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৩৫ এমপি শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেন। তাতে রাজস্ব ক্ষতি হয় ৫৪৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে সপ্তম জাতীয় সংসদে এই রাজস্বের পরিমাণ ছিল পৌনে ২০০ কোটি টাকা, অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্যরা ২৭৫টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২৮০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেন। এমপিদের জন্য শুল্কসহ যাবতীয় করমুক্ত গাড়ি আমদানির প্রথম সুযোগ দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ। তার শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪শে মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ নিয়ে সার্কুলার জারি করে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের এমপিরা যেখানে সরকারি নিয়মে ব্যবহার করেন ১৩০০ সিসির গাড়ি, সেখানে বাংলাদেশের এমপিরা গড়ে ব্যবহার করছেন ৩০০০ সিসি থেকে ৫৫০০ সিসির বিলাসবহুল গাড়ি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এমপিদের বিনাশুল্কে আনা গাড়ি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা কিনে নিলেও চার বছর গাড়ির কাগজপত্র এমপির নামেই থাকে। বেশির ভাগ এমপিই চড়েন তুলনামূলক কম দামের গাড়িতে। নতুন এমপিরা শপথের পরপরই প্রথম দফা এবং পুরনো এমপিরা ৮ বছর পর দ্বিতীয় দফায় শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার সুযোগ পান। নতুন এমপি হলে গাড়ির ডিলাররাও ছুটে যান তাদের কাছে। শুরু হয় প্রতিযোগিতা, কার আগে কে অফার দেবেন, কে কত টাকা বাড়তি দেবেন- এ নিয়ে চলে দর কষাকষি। দফায় দফায় এমপি হওয়ার সুবাদে শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে অনেকে কোটিপতি বনেছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ