সোমবার, মে ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়মেঘনা ব্যাংক হবে বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান ব্যাংক

মেঘনা ব্যাংক হবে বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান ব্যাংক

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

সরকার নতুন যেসব ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে সেগুলোর মূলধন ৪০০ কোটি টাকা হওয়ায় গ্রাহকের আস’া থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নগরীর আগ্রাবাদে গতকাল দুপুরে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের সপ্তম শাখার উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
ব্যাংকটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে তিনি বলেন, ‘অতীতের মতো অল্প মূলধনে নতুন ব্যাংক খোলার দিন শেষ। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী এক বিন্দুও ছাড় দেননি। আমি আশা করি, নতুন ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতি দান করবে। আপনারা যে নাম পছন্দ করেছেন তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে লাগোয়া রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বিখ্যাত স্লোগান ছিল-পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা। আমি কামনা করি-মেঘনা ব্যাংক গ্রাহকের ঠিকানা হোক।’
গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা খোলার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামের মানুষ অনেক সচ্ছল এখন। আপনারা যদি সাহায্যের হাত বাড়ান তাহলে সেখানকার অর্থনীতি চাঙা হবে।’ অন্য ব্যাংকের তুলনায় ঋণের ওপর সুদহার কম রেখে গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা নববর্ষে দেখেছেন কোটি কোটি বাঙালি অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে উৎসব করেছেন। এবার নববর্ষে যেভাবে মানুষ কেনাকাটা করেছেন তা ঈদের বাজারকেও হার মানিয়েছে। বাঙালি চেতনা জাগ্রত হয়েছে তাই আমরা এগিয়ে যাবো।’ বেলা ১২টা ৫১ মিনিটে ফিতা কেটে মেঘনা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
ভিশন মিশন নিয়ে এসেছি আমরা
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি বলেন, ‘আমাদের জন্য সপ্তম শাখা হবে মাইলফলক। ভিশন মিশন নিয়ে এসেছি আমরা। অনেক পরে এলেও মেঘনা ব্যাংক হবে বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান ব্যাংক। দক্ষতা, মহানুভবতা, মেধা দিয়ে আমরা জয় করবো সব বাধা। গ্রাহকদের সুসময়ে যেমন পাশে থাকবো তেমনি দুঃসময়েও তাদের ফেলে দেবো না, সামনে এগোতে সাহায্য করবো।’
মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্ভব শ্রদ্ধার চোখে দেখেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি। আমাদের অসীম আকাঙ্ক্ষা, অসীম জনসংখ্যা কিন’ সম্পদ সীমিত। জটিল সমীকরণের ঘাটতি পূরণে আমাদের সুন্দর ব্যবস’াপনা দরকার। ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে থেকেও আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। আমি মনে করি, দক্ষতা, জ্ঞান ও আধুনিক ব্যবস’াপনা দিয়ে মুনাফার পাশাপাশি দেশের শিল্পকারখানাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবো আমরা।’
সুন্দর স্লোগান ও ‘সর্বক্ষণ সহযাত্রী’
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মিলনমেলায় পরিণত হওয়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেনক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, ‘সকালে খবরের কাগজে আপনাদের সুন্দর স্লোগান দেখলাম-মেঘনার পূর্ণতা মোহনায় তাই আমাদের পূর্ণতা চাটগাঁয়। চট্টগ্রাম থেকে যদি শুরু করতেন তাহলে বলতাম ঠিক হয়েছে। তারপরও লাকি সেভেন শাখাটি চট্টগ্রামে উদ্বোধন করলেন এটা ভালো হয়েছে।’
‘সর্বক্ষণ সহযাত্রী’ প্রতিপাদ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ব্যবসা। শুক্রবার, শনিবার বা ছুটির দিনও আপনাদের ব্যাংক ইন্টারেস্টের চাকা ঘুরে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টাই আপনারা সহযাত্রী!’
ব্যাংকের ব্যবস’াপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কাইসার এ চৌধুরীর বক্তব্যের সূত্র ধরে এম এ মালেক বলেন, ‘এখানে বলা হয়েছে-আপনারা এ পর্যন্ত ৩টি শাখা শহরে ও ৩টি শাখা গ্রামে করেছেন। আপনাদের সুবিধার জন্য বলে রাখি, চট্টগ্রামে আজ যে শাখার উদ্বোধন করছেন সেটিও গ্রামের শাখার মধ্যে ধরতে পারেন কারণ চট্টগ্রাম এখনো গ্রাম, এখনো শহরে পরিণত হয়নি!’
অনুষ্ঠানে উপসি’ত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, বিশিষ্ট শিল্পপতি মির্জা সালমান ইস্পাহানি, পিএইচপি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিনসহ বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম দেশের মূল চালিকা শক্তি
মেঘনা ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হালিম খান সেলিম বলেন, ‘একটু দেরিতে হলেও আমরা চট্টগ্রামে এসেছি। চট্টগ্রাম দেশের মূল চালিকা শক্তি অর্থনৈতিকভাবে। চট্টগ্রামবাসী সৌভাগ্যবান-আমরা লাকি সেভেন দিয়ে শুরু করলাম। আমাদের বোর্ডে ৬ জন পরিচালক চট্টগ্রামবাসী। তাই মেঘনা ব্যাংক চট্টগ্রামের ব্যাংক, চট্টগ্রামবাসীর ব্যাংক।’
এম এ মালেকের বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সর্বক্ষণ সেবা দিতে চাই। গ্রাহক যদি চান, শুক্র-শনিবারও আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেবা দিতে বাধ্য থাকবেন।’
সুদহার কমানোর অনুরোধ বোর্ডকে
ব্যাংকের পরিচালক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘এটি প্রগ্রেসিভ ব্যাংক। ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা ব্যাংক খাতে যেসব সমস্যা ফেস করি তা আপনারা সবাই জানেন। আমি সুদহার কমানোর জন্য বোর্ডকে অনুরোধ জানাবো কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্রান্তিকাল চলছে। আমরা মনে করি, ঋণখেলাপি হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী নন, এর পেছনে অনেক কারণ আছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আমরা জানি। তাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলে বোঝা যায় তারা ঋণখেলাপি ইচ্ছে করে হননি। তাই আমরা ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিতে চাই, আমরা আপনাদের জন্য নতুন কিছু করবো। আপনারা আমাদের সহায়তা করুন।’
ব্যাংক ছুটবে গ্রাহকের পেছনে
গত বছরের ৯ মে গুলশান শাখার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মেঘনা ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছে উল্লেখ করে কাইসার এ চৌধুরী বলেন, ‘ম্যানেজার ব্যাংকে বসে থাকবেন, গ্রাহক আসবে ব্যাংকে সেই দিন গেছে। এখন ব্যাংককে ছুটতে হবে গ্রাহকের পেছনে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তথ্য আপনারা জানেন, আমাদের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ এখনো ব্যাংক সেবা থেকে বঞ্চিত। সরকার চায় জনগণের দোরগোড়ায় ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিতে। চট্টগ্রামে এসে যেন আমরা আংশিক পূর্ণতা পেলাম। আমরা চট্টগ্রামের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হতে চাই। ক্রমান্বয়ে নতুন নতুন শাখা খুলবো।’
তিনি মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক কামাল উদ্দিন, তানভির আহমেদ, আলী আহসান খান, সাখাওয়াত হোসেন, লোকমান হাকিম, আশিকুর রহমান লস্কর, মো. মাহবুব সালাম, বেগম রেহানা আশিকুর রহমান, ইয়াসিন আলী, এম এ মালেক এমপি, জাহাঙ্গীর আলম, বেগম ফাতেমা, শেয়ার হোল্ডার সজিব কুমার সিংহ, মো. সাইফুল ইসলাম, রাশেদ রহমানকে পরিচয় করে দেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের ব্যাংকিং জীবনে একটি শাখা উদ্বোধনে এতো পরিচালকের উপসি’তি দেখিনি। তারা ম্যানেজমেন্টকে অনুপ্রাণিত করতেই এখানে এসেছেন।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস’াপক জাহেদুল ইসলাম, সহকারী কর্মকর্তা তানজিনা আইরিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ