শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়আমার হাতে যে চুড়ি দুটো এগুলো আপনাদের দেওয়া উপহার। এত বড় সম্মান...

আমার হাতে যে চুড়ি দুটো এগুলো আপনাদের দেওয়া উপহার। এত বড় সম্মান কখনও পাইনি

সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তাদের সবাইকে বসতঘর করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, একটা ঠিকানা যে মানুষের জীবন বদলে দেয় তা আমি জানি, বাসস্থানের ব্যবস্থা অবশ্যই করে দেব।  শনিবার বিকালে আগের ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। চার জেলার শ্রমিকরা চা বাগানে জড়ো হয়ে সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যের একপর্যায়ে হাতের চুড়ি দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার হাতে যে চুড়ি দুটো এগুলো আপনাদের দেওয়া উপহার। এত বড় সম্মান কখনও পাইনি। আপনারা পাই-পয়সা জমিয়ে এ চুড়ি আমাকে দিয়েছেন। তাই হাতে রাখি। এ সময় চা বাগান শ্রমিকরা নিজেদের ভূমির অধিকার দাবি করেন। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া চা বাগান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলা, সিলেট সদরের লাক্কাতুরা এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিকরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

আবেগঘন পরিবেশে শ্রমিকদের দুর্দশার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহা কী যে কষ্ট এরা করে! পাত্রখোলার সোনামনি রাজবংশী, চন্ডিছড়ার শিমুল রানী রায়, শ্যামলী গোয়ালাসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক ভূমির মালিকানা, বাসস্থান, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা এবং সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থার দাবি জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সাথে কথা বলে অনেক কিছু জানলাম। সবই আমি ব্যবস্থা করব। যারা শ্রম দেয়, কষ্ট করে, তাদের দিকে তাকানো আমাদের দরকার। আমার বাবা কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য এ দেশ স্বাধীন করেছেন। তারাই এ বাংলাদেশে কষ্টে থাকবে এটা মেনে নিতে পারি না।

চা শ্রমিকদের ব্রিটিশরা এনে অমানবিক খাটাত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা তাদের ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। তারা ভূমিহীন থাকবে এটা হতে পারে না। সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করব। তারা কোনোদিকে তাকায় না। শুধু পরিশ্রম করে। চা শ্রমিকরা অবহেলিত থাকবে, এটা হতে পারে না। প্রত্যেকটি পরিবার তাদের অধিকার যেন তাদের মাটিতে থাকে সে ব্যবস্থা করব।

চা শ্রমিকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাগানের শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা আমি করে দেব। সবাইকে ঘর করে দেব, যেন ভালোভাবে থাকতে পারেন। আপনাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। আপনারা যেটা করেছেন (আন্দোলন) বাঁচার তাগিদে করেছেন, সেটা আমি বুঝি। তাই আগেই মালিকদের সাথে কথা বলেছি। চা শিল্প কোনোভাবে ধ্বংস যেন না হয়, সে প্রচেষ্টা থাকবে। যেটা বলেছি মালিকরা মেনে নিয়েছে। আশা করি, তারা শ্রমিকদের যত্ন নেবে।

মতবিনিময়কালে সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা নিশ্চিত করার যে দাবি তুলেন শ্রমিকরা, সেই প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জানি মালিকরা বাগানে স্কুল করে। তবে এখানে শ্রমিকরা বলেছেন, সব বাগানে স্কুল-কলেজ হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করব, যাতে স্কুলগুলো জাতীয়করণ হয়, যাতে আমরা পরিচালনা করতে পারি। স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বাগানের কাছাকাছি আছে কিনা খবর নিব। পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালে কাজ করা কঠিন। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হওয়া ন্যায্য। গ্র্যাচুইটি তো দেবার কথা, কেন দেয় না আমি দেখব। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারা দেশে কাজ করছি। এক বোন বললেন, শুধু তিন কেজি আটা দেয়। পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিযুক্ত খাবার যেন পায়, দেখব। যেখানে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ব্যবস্থা করা হবে।

চা শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যে আমার ওপর এত ভরসা রেখেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ। চা শ্রমিকরা বারবার নৌকায় ভোট দেয়। দেশ উন্নত হবে আর একটা শ্রেণি অবহেলিত থাকবে, তা হতে পারে না। একটা ঠিকানা যে মানুষের জীবন বদলে দেয় তা আমি জানি, বাসস্থানের ব্যবস্থা অবশ্যই করে দেব।

প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার চা শ্রমিক ও পরিবারের সদস্যরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠকে শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করা হয়। পাশাপাশি বাড়তি চা পাতা তোলা, উৎসব বোনাসসহ অন্যান্য সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে তারা কাজে ফিরেন। দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ