শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনদক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হট্টগোল উত্তেজনা

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হট্টগোল উত্তেজনা

বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্য ঘিরে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হট্টগোল ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মূলত বাঁশখালী উপজেলার সাংগঠনিক রিপোর্ট দেওয়ার সময় স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিংকে কেন্দ্র করে হট্টগোল শুরু হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করায় সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি মোস্তাফিজ। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এমপির দিকে পানির বোতল ও কেক ছুড়ে মারেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

নগরীর ষোলশহরে এলজিইডি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, বর্ধিত সভায় পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী উপজেলার নেতাদের কাছ থেকে সাংগঠনিক বিষয়ে জানতে চান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। এ সময় বাঁশখালীতে গঠনতন্ত্র অমান্য করে ইউনিয়ন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বাদ দিয়ে সম্মেলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর। সেসব সভায় সাধারণ সম্পাদক যাচ্ছেন না বলে সভাকে অবহিত করেন তিনি।

আবদুল গফুরের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঞ্চে উপস্থিত মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেন, উনি (আবদুল গফুর) যেটা বলেছেন সেটা ঠিক না। এ পর্যন্ত বাঁশখালীতে আমরা প্রায় ওয়ার্ডে সম্মেলন শেষ করেছি। সাধারণ সম্পাদক কোনো সম্মেলনে যাননি।

তখন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, সম্মেলনের ব্যানারে সাধারণ সম্পাদকের নাম ছিল না। সাধারণ সম্পাদক কেমনে যাবে?

বাঁশখালীর সাংগঠনিক টিমের প্রধান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইদ্রিসও একই কথা জানান। এমপির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গফুর যেটা বলেছে সেটাই ঠিক। বাঁশখালীতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাঁশখালীতে সবগুলো ওয়ার্ড সম্মেলন সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে একতরফাভাবে হয়েছে। বাঁশখালীর ওয়ার্ড সম্মেলনের অনিয়ম নিয়ে পত্রিকায় নিউজও হয়েছে।

তখন সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সব সমস্যার মূলে হচ্ছে একটি পত্রিকা। ওই পত্রিকার মালিক বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিকে টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছেন। উনি এগুলো করাচ্ছেন। এ সময় তিনি আব্দুল গফুরসহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করলে সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ ব্যাপারে জানার জন্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, দলের বর্ধিত সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে এই ধরনের কথা কাটাকাটি হতে পারে। এটা কোনো বিষয় না। তবে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মতো দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যারা সংগঠনের সিদ্ধান্ত মানেন না, সংগঠনকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে চান, সভায় উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন, এদের কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো আমরা দলীয় হাই কমান্ডকে জানাব। এদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

মফিজ বলেন, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বাঁশখালীতে ওয়ার্ড সম্মেলন গঠনতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন। আজকের বর্ধিত সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন ভাই (সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন) সাংগঠনিক নিয়ম মেনে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বর্ধিত সভায় হট্টগোলের বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর বলেন, বাঁশখালীতে ওয়ার্ড সম্মেলন শেষে কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অথচ আমাকে কোনো সম্মেলনে ডাকা হয়নি। ওয়ার্ড সম্মেলনে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি থাকবেন। ইউনিয়ন সম্মেলনে উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি থাকবেন। অথচ প্রতিটি ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে উনি (সাংসদ মোস্তাফিজ) গিয়ে সভাপতিত্ব করে একতরফা কমিটি করে দিয়েছেন। আজকের বর্ধিত সভায় আমি সাংগঠনিক এই অনিয়মের বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন ভাইকে জানিয়েছি। সম্মেলনে আমার না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমি বলেছি সেখানে গঠনতন্ত্র মানা হচ্ছে না। ইউনিয়নের বৈধ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে সম্মেলন করা হচ্ছে। আমি এমন বক্তব্য দিতেই এমপি ক্ষেপে গেছেন। এ সময় জেলার কয়েকজন নেতা এবং আমাকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বললে মঞ্চের সামনে থাকা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে উনার বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন এবং উনাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
তিনি বলেন, বাঁশখালী উপজেলার বিষয়ে গত বছরের ৯ জুন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ভাই এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভাইয়ের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে উনারা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন একতরফাভাবে কোনো ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন সম্মেলন করা যাবে না। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে যৌথ স্বাক্ষরে কমিটি হতে হবে। কিন্তু এমপি সেটা মানছেন না।
বর্ধিত সভায় বাঁশখালীর সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখার সময় কেন হট্টগোল হয়েছিল জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যেহেতু দলের বর্ধিত সভা, স্বাভাবিকভাবেই সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে একটু বাক্‌বিতণ্ডা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজ ভাইয়ের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের সাংগঠনিক কিছু বিষয় নিয়ে একটু বাক্‌বিতণ্ডা হয়েছিল। আমাদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন ভাইয়ের হস্তক্ষেপে সেটা সমাধান হয়েছে। তবে সংগঠনের যারা দায়িত্বশীল তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাঁশখালী উপজেলার সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বক্তব্য রাখার সময় বাঁশখালীর এমপি একতরফাভাবে সম্মেলন করছেন বলে অভিযোগ করলে সাথে সাথে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ভাই তার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজে বক্তব্য রাখার সময় কিছু আপত্তিকর কথা বলেন। সাথে সাথে সভায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ সময় সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভাই সবাইকে শান্ত করান।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী, মোহাম্মদ ইদ্রিস, আবুল কালাম, হাবিবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ