শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদটপযৌনক্ষমতা বৃদ্ধির অমৃত উপাদান

যৌনক্ষমতা বৃদ্ধির অমৃত উপাদান

বিনোদন  ডেস্ক (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি মানবজাতির এক অপার কৌতূহলের বিষয় যৌনতা। কীভাবে যৌনতাকে আরও উৎকর্ষ করে তোলা যায়। এ প্রশ্ন সার্বজনীন। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বৈদিক যুগের মুনি-ঋষি থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ নিয়ে বিস্তর মতবাদ আছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, ‘ যৌনতা বৃদ্ধির সেই অমৃত উপাদান আসলে কী?’

প্রাকৃতিক উপাদান: বাঘের দুধ বা গণ্ডারের শিং হতে তৈরি পাউডারের মতো দুষ্প্রাপ্য নমুনাও এসেছে এ ‘অমৃতে’র সূত্র ধরে। যদি এ উপাদানটির তালিকা তৈরি করা হয়, তবে তা কখনো শেষ করা যাবেনা। এ উপাদানগুলো কি আসলেই যৌনতার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে?
আসলে এগুলো কাজ করে কিনা সে সম্পর্কে কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানো হয়নি। সুতরাং আসল তথ্য সবার কাছে অজানা রয়ে গেছে। পুরো ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে অনুমান নির্ভর। যেমন- পুরুষাঙ্গের সাথে আকারে মিল আছে, এমন বস্তুর সঙ্গে যৌনতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হয়। কলা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক। খোঁজ নিলে আশেপাশে এ ধরনের হাজারো উদাহরণ পাবেন।  কিন্তু যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর এ কথিত উপাদানটিকে ঘিরে অস্পষ্টতা আর রহস্যময়তা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত নানান প্রবঞ্চনা আর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দেয়। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে পণ্যের যৌনতা বৃদ্ধির ক্ষমতার উদ্ধৃতি দেন প্রায়ই। দুর্বল মানব-মন ক্রমশ এর দিকে ঝুঁকতে থাকে। ক্রমে ক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়ায় প্রায় সব পণ্যই এর ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। এমন ঘটনা ঘটেছিল পাশ্চাত্যের বাজারে। ব্যাপারটা এতটা ব্যাপক রূপ নেয়, শেষ পর্যন্ত মার্কিন খাদ্য আর ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এফ ডি এ (ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন) কে এতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। ১৯৯০ সালের ৬ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দেয় যে কোনো ধরনের পণ্য তা ওষুধ বা খাবার যেমনটিই হোক তাতে ‘যৌনতা উদ্দীপক’ বা ‘যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিকারক’ এ জাতীয় কোনো মন্তব্য যেন লেখা না থাকে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হলো যৌনক্ষমতা সঠিকভাবে বাড়াতে পারে এ জাতীয় কোনো ওষুধ লোশন বা উপাদান এখনো তৈরি হয়নি।
অবশেষে সমাধান: সিফিলিস! এক নামেই সবার কাছে পরিচিত। যৌনবাহিত রোগ বিধায় এটিকে ঘিরে সবারই কমবেশি কৌতূহল। এ রোগের ইতিহাস বেশ পুরনো। ইউরোপিয়ানরা পঞ্চদশ শতাব্দী হতে এর সাঙ্গে পরিচিত হয়ে আসছে। যৌনসংগম দ্বারা যে এ রোগ ছড়ায় এটি তাদের ধারণা ছিল কিন্তু এটি যে এক ধরনের জীবাণু ঘটিত সেটি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। সে সময়ে সিফিলিসকে ঘিরে ইউরোপিয়ান নানান দেশের মাঝে একটা সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। এ রোগটির জন্য তারা একেক জন একেক জনকে দোষারোপ করতে থাকে, কেউ এর দায়িত্ব নিতে চায় না।
মজার ব্যাপার হলো- সিফিলিস নামকরণের আগে রোগটিকে ইউরোপের একেক দেশে একেক নামে ডাকা হত। ফরাসীরা এ রোগটির নাম দিয়েছিল নেপলস রোগ। সে সময়ে ইতালির সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহরটির নাম ছিল নেপলস। ইতালীয়রা বলতেন ফ্রান্স ডিজিস নামে। ইতালি আর ফ্রান্সের এ পারস্পারিক কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির মত অবস্থা ছিল সেপন আর ইংল্যান্ডের মধ্যেও।
জাতিগত এ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি অবশ্য বেশি দিন ছিল না। এক ইতালীয় কবি এ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটান। অবশ্য তিনি নিজে মাথা পেতে নেননি বা আর কারোর উপর চাপাননি। তিনি ১৫৩০ সালে মেষ পালককে নিয়ে একটা কবিতা রচনা করেন। ঐ মেষপালকের নাম ছিল সিকাইলাম। কবিতার ঘটনা ছিল- দেবতা এপেলোকে অপমান করার কারণে, দেবতা এই মেষপালককে এ রোগের অভিশাপ দেয়। রাখাল সিকাইলাম এ ধিক্কৃত রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। তখন থেকে এ রোগের নাম হয় সিফিলিস। যাক, অবশেষে তাহলে সবারই রক্ষে!
অবিশ্বাস্য সূত্র: আমরা এতদিন শুনে এসেছি আমাদের মনের যে যৌন শিহরণ বোধ তার মূল উৎস হল সেক্স হরমোন। পুরুষদের বেলাতে টেস্টোস্টেরন আর মহিলাদের বেলাতে এস্টোজেন প্রজেস্টেরন। পুরুষ আর মহিলাদের বেলাতে যথাক্রমে শুক্রাশয় আর ডিম্বাশয় এ সেক্স হরমোনের ক্ষরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ সেক্স হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর দেহে সেকেন্ডারি সেক্স বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে। যৌবনের বন্যা বয়ে যায়। এটি একদম স্বতঃসিদ্ধ।
সাম্প্রতিক গবেষকরা এর পাশাপাশি এক অভিনব নতুন তথ্য দিচ্ছেন। আমাদের মনের যৌনতাড়না বোধ বা লিবিডো এর মূল নিয়ামক হলো এ টেস্টোস্টেরন বা টেস্টোস্টেরনজাত ক্ষরণগুলো। শেষোক্তগুলোকে এন্ডোজেনও বলা হয়। এটি পুরুষ আর মহিলা দু’জনার বেলাতেই প্রযোজ্য। লিবিডো শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলো যৌন কামনা বাসনা। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড এ লিবিডোকে মানবের মূল চালিকা শক্তি বলে এমন অভিমতও করেছিলেন। পুরুষ দেহে না হয় শুক্রাশয় হতে ক্ষরিত হয়ে সহজাতভাবে বর্তমান থাকে এ টেস্টোস্টেরন। মহিলা দেহে টেস্টোস্টেরন বা এন্ড্রোজেন আসবে কোথা হতে? তাহলে মহিলাদের লিবিডো নিয়ন্ত্রিত হয় কিভাবে? গবেষকরা মহিলাদের রক্তস্রোতে সূক্ষ্ম মাত্রার এন্ড্রোজেনের উপস্থিতি দেখেছেন- এর মাত্রা পুরুষদের তুলনায় হাজার ভাগেরও কম।
গবেষকদের ব্যাখ্যা মহিলা দেহে ক্ষরিত টেস্টোস্টেরন আর এন্ড্রোজেন মাত্রা কম হতে পারে, কিন্তু মহিলার দেহের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। একারণে সূক্ষ্ম মাত্রাও অনেক বেশি শারীরবৃত্তীয় প্রভাব তৈরি করে থাকে, মহিলা দেহের এড্রেনাল কর্টেক্স নামের হরমোন গ্রন্থ্থি হতে এ এন্ড্রোজেন ক্ষরিত হয়। (পুরুষ আর মহিলা উভয়ের বেলাতে ডান বা বাম উভয় বৃক্কের উপরিভাগে এড্রেনাল কর্টেক্স হরমোন গ্রন্থ্থি  বিদ্যমান।) পাশাপাশি ডিম্বাশয় নিজেও সামান্য মাত্রার টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ করে থাকে।
কীভাবে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়?
পঞ্চাশের দশক হতে আলফ্রেড কিসে মানুষের যৌনাবরণের উপর যে গবেষণা শুরু করেছিলেন, তা আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত নানান নতুন নতুন তথ্য উন্মোচিত করছে। তা আমাদেরকে এমন সব তথ্যের মুখোমুখি করছে যার অনেকগুলো আমরা কখনো কল্পনাতেই আনিনা। হোমোসেক্সুয়ালিটি বা সমকামিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা কি? সবারই একদম বদ্ধমূল বিশ্বাস সমকামীরা পায়ুকাম চর্চা করে থাকে আর এটিই তাদের একমাত্র যৌনতা।
যৌন-সমীক্ষকদের চালানো গবেষণাতে দেখা গেছে, পায়ুকাম কিন্তু সমকামীদের মুখ্য বা একমাত্র যৌনতা নয়, যে যৌনতা তাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হল মাস্টারবেশন প্রক্রিয়াতে পরস্পরকে উত্তেজিত করে তোলা। এটিকে যৌন বিজ্ঞানের পরিভাষাতে ‘মিউচুয়াল মাস্টারবেশন’ বলা হয়। সমীক্ষণে আরেকটি লক্ষণীয় দিক হলো পায়ুকাম চর্চা কেবলমাত্র সমকামীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, সাধারণ দম্পতিদের অনেকেই এটির কমবেশি চর্চা করে থাকেন। অন্তত গবেষণাতে এটি দেখা গেছে। সমকামীদের যে পারসপরিক স্বমেহন বা মিউচুয়াল মাস্টারবেশনে- এটিতো পুরুষ আর নারী সমকামী দু’জনার বেলাতে সমভাবেই চর্চা করতে দেখা যায়। নারী সমকামীদের বেলায়তো পায়ুকামের কোনো অবকাশ নেই, সুতরাং ওদের নিয়ে আমাদের ধারণাটি নিয়ে পুনর্বার বিবেচনা করা উচিত।
গবেষক নারী যৌনাঙ্গের যোনি গাত্রে লুকানো অতিমাত্রায় সংবেদনশীল জায়গা খুঁজে পান। যখন যৌনাঙ্গের এ অংশটি উদ্দীপিত করা হয় তা নারীর মাঝে চরমপুলকের অনুভূতি আর শিহরণ জাগায়। গবেষকরা এর অবস্থানের একদম সূক্ষ্ম হিসেব বাতলে দিয়েছেন-এটি যোনির অগ্রবর্তী গাত্রের মাঝে অবস্থান করে যা মুখ হতে পাঁচ সেঃমিঃ পরিমাণ ভেতরে থাকে। আকারে শিমের বিচির মত হলেও যৌন উত্তেজনায় এর আকার বেড়ে যায়। এ স্পটের আবিষ্কার এতদিনকার প্রচলিত নানা তত্ত্বকে পাল্টে দিয়েছে।
মনে রাখবেন আমাদের দেশে যৌনক্ষমতার বিষয়টিকে প্রায়ই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। বাজার, ফুটপাতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় হরেক রকম উত্তেজক বৃদ্ধির ওষুধের। এসব ভণ্ড ব্যবসায়ীরা বিক্রেতা পেলেই তাকে বিভিন্নভাবে হতাশ করে তোলেন। আসলে যৌনতার স্থায়িত্ব ৯৮ ভাগ নির্ভর করে আপনার মানসিক অবস্থার উপর। তাই হতাশ হবেন না। খুব বেশি সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি মানসিক ডাক্তার দেখাতে পারেন। কিন্তু ফুটপাতের কোনো ওষুধের ওপর ভরসা করবেন না।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ