১৫ হাজার বর্গফুট জায়গা আর ৩০ জন শিক্ষার্থী হলেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার বিধান রেখে একটি বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে একাধিক ক্যাম্পাস ও বিদেশে টাকা পাঠানোর বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে ওই খসড়া বিধিমালায়। সরকারের এ বিধিমালা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তা সনদবাণিজ্যকে আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ খসড়া চূড়ান্ত হলে উচ্চ শিক্ষার মানের বিপর্যয় ঘটবে বলে মন্তব্য তাদের। খসড়াটি চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে শিক্ষা সচিব বলেছেন, শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হবে এমন বিধিমালা সরকার করবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং মালয়েশিয়াভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৫৬টি শাখা রয়েছে বাংলাদেশে। নামে বেনামের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শাখাই সরকারের অনুমোদন নেই। সনদ বাণিজ্যসহ নানা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। উচ্চশিক্ষার নামে এসব প্রতারণা ও বাণিজ্য বন্ধে গত বছর ‘বিদেশি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত’ একটি বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে শাখা নিবন্ধনের শর্তে বলা হয়েছে ১৫ হাজার বর্গফুট জায়গা আর নূন্যতম ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, পাশাপাশি এই শাখা চাইলে যৌথ বা একাধিক শাখা পরিচালনা এমনকি এজেন্টরা বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থও পাঠাতে পারবে।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনায় সরকারের যেখানে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে এজেন্টদের মাধ্যমে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা স্থাপন কতটুকু যৌক্তিক এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সংগঠন-এপিইউবি আশংকা করছে এর ফলে উচ্চ শিক্ষার মানের বিপর্যয়ের পাশাপাশি সনদ নিয়ে বাণিজ্য হবে।
এপিইউবির ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার বলেন, ‘যেখানে শিক্ষার মান নিয়ে পিছিয়ে আছি আমরা সেখানে এই অনৈতিক কাজ করার জন্য আইনগত সুযোগ সুবিধা যখন দিয়ে দেয়া হবে তখন মান আরো নিম্নে চলে যাবে। কোনোভাবে সরকারে উচিত হবে না এতো সহজ এবং সাংঘর্ষিকভাবে এই বিদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে খুলে দেয়ার জন্য আইন করা। ’
খসড়া বিধিমালা সংশোধনের জন্য এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে এপিইউবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে খসড়া বিধিমালাটি পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষা সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষার মান কমে যায় এমন কোনো বিধিমালা করবে না সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো পর্যালোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত পাঠাব। যেহেতু এই পুরো বিষয়টাই এখন বিধিমালা অনুমোদনের পর্যায়ে আছে, বিধিমালাতে যা সন্নিবেশিত হবে তা পুরো বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেই করা হবে। আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিমালা হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ যাচাই-বাছাই শেষে আগামী ২ মাসের মধ্যে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সচিব।