আকস্মিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশনিং এবং পুনঃতফসিলের বিধান শিথিল করার পেছনে মহলবিশেষের চাপ রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। ব্যাংকগুলোকে স্বস্তিতে রাখতে এসব উদ্যোগ কাজে আসলেও ঋণ প্রদানে দুর্নীতি বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এখনই বিধান পরিবর্তন না করে সার্বিক পরিস্থিতি আরো পর্যবেক্ষণ করা যেতো বলে মনে করেন তারা।
গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি এবং পুনঃতফসিলের বিধান নমনীয় করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এর উপর ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন বিধান অনুযায়ী এখন থেকে কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর দুই মাস পার হলে তার বিপরীতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে না। অন্যদিকে পুনঃতফসিলের পর ঋণ পরিশোধের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। হঠাৎ করে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে এ নমনীয়তার পেছনে কোনো চাপ নেই বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হঠাৎ নমনীয়তার পেছনে প্রভাবশালী মহলের চাপ কাজ করে থাকতে পারে। এ সিদ্ধান্তের ফলে গুটিকয়েক বড় ঋণগ্রহীতা বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে দুর্নীতি বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা চাপের মুখে এটা করেছে। এটা করার ফলে ব্যাংকে যে একটা কড়াকড়ি সিরিয়াসলি ভাল ঋণ দেয়ার চেষ্টা করত, ঋণগুলো আদায় করার চেষ্টা করত; এখানে মন্থরগতি চলে আসতে পারে।’
অর্থনীতি বিশ্লেষকরাও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর লোকসানের মুখে এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে। তবে শুধুমাত্র এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নমনীয় হয়েছে, এমন কথা মানতে নারাজ তারা।
ব্যাংককার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, ‘ক্লাসিফিকেশনের সর্বশেষ সার্কুলারটির ফলে ব্যাংকগুলো কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে চাপ থেকে রক্ষা করা, বেতন বোর্ড গঠন করা, অ্যাডহক প্রমোশন দেয়া, নতুন পোস্ট খোলা এগুলো নির্বাচন বছরগুলোতে এসে যখন হয়, স্বাভাবিকভাবে আমরা মনে করতেই পারি জনপ্রিয়তার দিকেও সরকারের একটি লক্ষ্য রয়েছে।’
ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নমনীয় নয় বরং কঠোর অবস্থানে থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।