রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......স্ত্রীর করা মামলায় আরেফিন রুমি কারাগারে

স্ত্রীর করা মামলায় আরেফিন রুমি কারাগারে

বিনোদন ডেস্ক (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

স্ত্রীকে পেটানোর দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে শিল্পী আরেফিন রুমিকে।যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে প্রথম স্ত্রী’র দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক আরফিন রুমিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত।

শনিবার দুপুরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। আদালত বাদী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে রুমির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই আদেশে রুমির ভাই ইয়াসিন রনিকেও জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে রুমির প্রথম স্ত্রী লামিয়া ইমলাম অনন্যা বাদী হয়ে তার স্বামী আরফিন রুমি, ভাসুর এসএম ইয়াসিন রনি এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩০, মোহাম্মদপুর থানা।

পরে এই মামলার প্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের নিজ বাসা থেকে শনিবার সকাল ৭টার দিকে এসআই আমিনুল ইসলামের তাকে গ্রেপ্তার করে। সঙ্গে মামলার অপর আসামি রুমির বড় ভাই এসএম ইয়াসিন রনিকেও গ্রেফতার করা হয়। তবে মামলার অপর আসামি আরেফিন রুমির মা’কে বাসায় পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এসআই আমিনুল ইসলাম।

তিনি জানান, মামলার বাকি আসামি গ্রেফতারের জন্য শিগগিরই অপারেশন চালানো হবে।

তিনি আরও বলেন, কণ্ঠশিল্পী রুমির প্রথম স্ত্রী অনন্যা শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানায় এসে তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় রুমির পাশাপাশি অপর দুই আসামি ইয়াসিন রনি ও মা নাসিমা বেগম রোজি।

অনন্যা তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, অনেকদিন ধরেই রুমি তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। একই সঙ্গে ২০ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ শুক্রবার তার মা-ভাইসহ তাকে কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এরপর তিনি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নেবার পর মেডিকেল সনদপত্রসহ মামলা এজাহার করেন।

এদিকে শনিবার দুপুরে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদী রুমির প্রথম স্ত্রী অনন্যা বলেন, ২য় বিয়ের পর থেকেই রুমির পরিবর্তন চোখে পড়ে। সে অনেকদিন ধরেই আমার ও আমার  ছেলে আরিয়ান (আড়াই বছর)-এর ভরণ-পোষণ দিচ্ছেনা। উল্টো আমার কাছে যৌতুক দাবি করে। গেল ৮ই অক্টোবর আমেরিকা থেকে আসার পরই সে এবং তার বড় ভাই ও মা আমাকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এরপর আমি বাধ্য হয়ে মামলা করি। এছাড়া, আমার কোন উপায় ছিল না।

এদিকে মামলা-গ্রেফতার-জেলহাজত প্রসঙ্গে রুমির পারিবারের বিশেষ কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরেফিন রুমি ২০০৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল ভালবেসে বিয়ে করেন পুরান ঢাকার মেয়ে অনন্যাকে। দু’জনার পরিচয় গানের মধ্য দিয়ে। তখন রুমি স্টেজ শোতে গান করতেন অনন্যাকে সঙ্গে নিয়ে। বিয়ের পর সংসার এবং রুমির অনাগ্রহের কারণে গান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। দুই বছরের মাথায় এই সংসারে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। নাম তার আরিয়ান।

এরপর অনন্যা গান ছেড়ে স্বামীর যৌথ সংসারের হাল ধরলেও একই সময়ে হাবিব-ফুয়াদের হাত ধরে আরেফিন রুমি নিজেকে বিকশিত করেন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রথমে হাবিবের সুরে বেশকিছু বিজ্ঞাপন জিংগেল, এরপর ফুয়াদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন আরেফিন রুমি।

মূলত ২০১০ সাল থেকে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ধারাবাহিক সফলতার মধ্য দিয়ে পথ চলতে শুরু করেন। এসময় অডিও অ্যালবাম এবং চলচ্চিত্রের গানে দারুণ সফলতা অর্জন করেন শিল্পী-সুরকার-সংগীত পরিচালক হিসেবে।

এসময় একক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি অন্যতম সদস্য হয়ে নিয়মিত কাজ করেন শহীদের ‘দূরবীন’ ব্যান্ডে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে টানা দুই বছরে আকাশ ছুঁই সফলতা অর্জন করেন আরেফিন রুমি।

২০১০ থেকে ২০১২, এ দুই বছরে তার গুরুতুল্য হাবিব-ফুয়াদকেও জনপ্রিয়তার বিচারে অনেকাংশে টপকে যান। তার করা জনপ্রিয় গানের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শতাধিক ছাড়িয়েছে এরই মধ্যে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগ সংগীত শিল্পী-সুরকার আরেফিন রুমিকে অনুকরণ করেই পথ চলছেন। মাঝে মধ্যে তার গানে-সুরে নকলের অভিযোগ উঠলেও জনপ্রিয়তার বিচারে সেসব অভিযোগ ছিল সময়ের বিচারে অনেকটাই দুর্বল।

তবে আরেফিন রুমির এই আকাশ ছোঁয়া অবস্থান হুট করেই নড়বড়ে হয়ে যায় গেল বছর অক্টোবরের দিকে। তখন তিনি স্টেজ শো’র আমন্ত্রণে অবস্থান করছিলেন নিউ ইয়র্কে। সে সময় প্রকাশিত হয় আমেরিকা প্রবাসী কামরুন নেসা নামের এক ভক্তের সঙ্গে রুমির প্রেম-বিয়ের উড়ো খবর। একই মাসের ২৪ তারিখ তিনি সেই উড়ো খবরের সত্যতা প্রমাণ করে ঢাকায় পা রাখেন কামরুন নেসাকে সঙ্গে নিয়ে। ওই রাতেই সবাইকে চমকে দিয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার গুলবদন দরবার শরীফে (রুমির দাদার বাড়ি) দ্বিতীয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে রুমির প্রথম স্ত্রী অনন্যা, মা, বড় ভাইসহ উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

বিয়ের পর দুই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তোলা ছবি  ফেসবুক-পত্রিকায় প্রকাশ করে ব্যাপক সমালোচিত হন এই শিল্পী। তখন তিনি বলেছিলেন, বড় স্ত্রীর শতভাগ অনুমতি এবং সহযোগিতা নিয়েই তিনি ২য় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্মে চার বিয়ে পর্যন্ত নিয়ম আছে। সুতরাং প্রথম স্ত্রীর অনুমতিতে ২য় বিয়ে করা একজন মুসলমান হিসেবে এবং আইনের বিচারে অন্যায় কিছু নয়। সে জন্যই দুই স্ত্রীকে পাশে নিয়ে তিনি ছবি প্রকাশ করেছেন। মিডিয়ায় সৃষ্টি করেছেন অভিনব উদাহরণ!  এ কারণে তোপের মুখে পড়েন শ্রোতা-সমালোচকদের। সেই অজুহাতে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় ব্যান্ড ‘দূরবীন’ থেকে।

এদিকে গেল বছর ২৪শে অক্টোবর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর টানা চার মাস একই ফ্ল্যাটে দুই স্ত্রী, এক সন্তান, মা, বড় ভাই, ভাবিকে নিয়ে ভালোই চলছিল রুমির যৌথ সংসার। এরপর চলতি বছরের মার্চে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে রুমি উড়াল দেন আমেরিকায়। সেখান থেকে টানা সাত মাস পর কামরুন নেসাকে সঙ্গে নিয়ে চলতি মাসের ৮ই অক্টোবর পুরোনো ঘরে ফেরেন।

গেল এক বছর ধরে অনেকেই বলেছেন- অনন্যা আরেফিন রুমির এই ২য় বিয়ের পাগলামি মেনে নিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন অনন্যা অনেক বড় উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। যদিও একই সময়ে অনন্যার মা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ অসহায়ের সুরে বার বার অভিযোগ তুলেছেন তার মেয়ে গৃহবন্দি আছেন রুমির ঘরে। সেখানে নীরবে নির্যাতন সহ্য করছেন। তবে এ ব্যাপারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার কাছে মুখ খোলেননি অনন্যা। যার ফলে এ পর্যন্ত অনন্যার বিষয়টি রহস্যই থেকে গেছে সবার কাছে। তবে সব রহস্যের নতুন বাঁক এসেছে শনিবার ভোরে, অনন্যার মামলায় আরেফিন রুমির গ্রেফতারের খবরে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ