বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়পেঁয়াজে সয়লাব খাতুনগঞ্জ

পেঁয়াজে সয়লাব খাতুনগঞ্জ

চট্টগ্রাম অফিসঃ (বিডিসময়২৪ডটকম)

পাঁচ দেশের পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো। লাল, সোনালি, সাদা রঙের বিভিন্ন আকারের পেঁয়াজ মিলছে হাত বাড়ালেই। দেশীয় আর ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে এবার বাজারে এসেছে মায়ানমার, চীন ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের চালান।
এতদিন গোলাকার সৌন্দর্য আর কড়া ঝাঁঝের কারণে দেশি ও ভারতের নাসিক-দক্ষিণী পেঁয়াজের কদর ছিল বেশি। এখন ঝাঁঝের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ঝুঁকছেন কম দামের পেঁয়াজের প্রতি। বিশেষ করে বিয়ে, মেজবান আর খাবার হোটেলেই বেশি চলছে এসব পেঁয়াজ। প্রতিদিন রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি এমনকি পিক-আপ বোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ।
সরবরাহ বাড়লেও আশানুরূপ দাম কমছে না কেন -এমন প্রশ্নের জবাবে খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘দৃশ্যত দাম না কমলেও কাজের কাজ যেটা হয়েছে তা হলো লাগাম টেনে ধরেছে। চীন, মায়ানমার ও পাকিস্তানের কমদামি পেঁয়াজ সময়মতো না ঢুকলে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতো।’
তিনি জানান, গতকাল বিকেলে ভারত সীমান্তে পেঁয়াজের দাম ৭০-৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ওই পেঁয়াজ চট্টগ্রামে আনতে পরিবহন ও অন্যান্য অদৃশ্য খরচ মিলে কেজি প্রতি যোগ করতে হবে ৪ টাকা। তাই খাতুনগঞ্জে ভারতের পেঁয়াজ গতকাল ৮০ টাকা ছুঁয়েছিল। অবশ্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির দিকে মনোযোগী হয়েছেন। পাকিস্তান ও চীন থেকে আনা তাদের কিছু পেঁয়াজ বাজারে ঢুকেছে। আজ রাতেও কয়েক গাড়ি পেঁয়াজ ঢুকবে।’
বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজের মান, ক্রেতাদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মায়ানমারের পেঁয়াজের মান তো দেশি বা ভারতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এবার বেশকিছু পাকিস্তানি পেঁয়াজ এসেছে ভালো মানের। সচরাচর সোনালি রঙের সাদা চীনা পেঁয়াজের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও কাকতালীয়ভাবে এবার লাল রঙের বড় আকারের এবং ছোট আকারের স্পেশাল কিছু পেঁয়াজ এসেছে। সব মিলে পেঁয়াজের যে জোগান তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে গুজবে কান দিয়ে একসঙ্গে বেশি পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকলে পাইকারি বাজারে চাপ কমবে।’
মেসার্স বদর আউলিয়া ভাণ্ডারের ম্যানেজার নুরুচ্ছফা জানান, লাল রঙের বড় আকারের চীনা পেঁয়াজ ৫০ টাকা, পাকিস্তানি ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ টাকা, একটু নিম্নমানের ৪৫ টাকা, মায়ানমারের ৬৪-৬৫ টাকা, ভারতের বড় আকারের ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। রং ও পরিপক্বতার কারণে এবার চীনা পেঁয়াজের চাহিদা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
হামিদউল্লাহ মিয়া মার্কেটের মেসার্স বাচা মিয়া সওদাগরের ম্যানেজার মো. আইয়ুব বলেন, ‘ভারতে পেঁয়াজের মজুদ কমে আসায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে এখানে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। তবে মায়ানমার, চীন ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো হওয়ায় চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ রয়েছে। ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ২০০ পেঁয়াজের ট্রাক ঢুকতো এখন সেখানে ৪০-৫০ গাড়িতে নেমে এসেছে। তাই বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।’
ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জে গতকাল নতুন দেশি আদা ৫০ টাকা, চীনা আদা ৮০-১০৫ টাকা ও চীনা রসুন ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
আন্দরকিল্লার সিটি করপোরেশন গেটের বিপরীতে ভাসমান পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. করিম গতকাল চীনা বড় পেঁয়াজকে বলছিলেন পাকিস্তানি পেঁয়াজ। দাম হাঁকেন ৭০ টাকা। এ ছাড়া পাঁচমিশালি পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৭৫ টাকা কেজি। অলিগলির খুচরা দোকানিরা এখন মাঝারি আকারের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৭৫-৮০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের মুখপাত্র হুমায়ুন কবির গতকাল রাত সোয়া ১০টায়  বলেন, ‘ব্যাঙ্গালুর থেকে আমদানি করা ১০০ টন পেয়াজ আগামী কাল (আজ) থেকে রাজধানী ঢাকায় এবং পরশু (কাল) থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে।’
কোরবানির আগে নতুনভাবে পেঁয়াজ আমদানি ও খোলাবাজারে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই টিসিবি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানিতে সরকার সহযোগিতা করবে। ইতিমধ্যে চীন ও পাকিস্তানের কমদামি পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। আশাকরি, পেয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ