পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ হাউজগুলোকে ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা পুনঃঅর্থায়নের সিদ্ধাšত্ম অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ তহবিল থেকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে। ৩ বছরের মধ্যে পুনঃঅর্থায়নের অর্থ ফেরত দেয়ার শর্তে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এ অর্থ প্রদান করা হবে। গত সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এ সিদ্ধাšেত্মর ফলে মার্জিন লোন বাবদ এসব প্রতিষ্ঠানের আটকে থাকা ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ সক্ষম হবে। এ অবস্থায় বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক ব্রোকাররা বিনিয়োগে ফিরলে পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ হাউজ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ করেছে কেবল তারাই পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ পাবে। এদের মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ৬৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্টক ব্রোকাররা ৫৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) স্টক ব্রোকাররা ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ঋণ সুবিধা পাবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ হাউজগুলোকে পুনঃঅর্থায়ন করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মুনাফা থেকে সরকারকে যে অর্থ দেয়, তা থেকেই এ তহবিল গঠন করবে সরকার। সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি এ তহবিলের ব্যবস্থাপনায় থাকবে।
তবে এ দফায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবি, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, অগ্রণী ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট (অগ্রণী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) ও জনতা ক্যাপিটাল (জনতা ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাচ্ছে না। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যদের আগে সুদ মওকুফ করেছে। এদের মওকুফ করা মোট সুদের পরিমাণ ২৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
এদিকে ডিএসইর সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, বাজারে স্টক ডিলারদের ১ শতাংশ বিনিয়োগও নেই। তাই তিনি স্টক ডিলারদের বিনিয়োগে আসার আহ্বান জানান। কেননা দীর্ঘ মন্দার কারণে স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো উভয় দিক থেকে ক্ষতিগ্র¯ত্ম হয়েছে। একদিকে মার্জিন লোনের বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে যাওয়া, অন্যদিকে ক্রয়কৃত শেয়ারেও লোকসানে থাকা। ফলে বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যায় এসব প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া লোকসানের পরিবর্তে শতভাগ প্রভিশন থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন করে বিনিয়োগের পথও সংকীর্ণ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়ায় এখন এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে এটা অনুমোদনের ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি স্টক ডিলাররা বিনিয়োগে ফিরলে দৈনিক লেনদেন আরো গতি পাবে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও বিনিয়োগের প্রবণতা তৈরি হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ধসে ক্ষতিগ্র¯ত্ম ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অংশ হিসেবেই পুনঃঅর্থায়নের সিদ্ধাšত্ম নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সুদ মওকুফের জন্য ৯০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়নের আবেদন জানায় বিএমবিএ। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চাওয়া হলে পুনঃঅর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা সম্ভব নয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) এ ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুপারিশ করে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, এ পুনঃঅর্থায়ন অনুমোদনের ফলে স্টক ব্রোকাররা ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে স্বক্রিয় হবে। যা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।