বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া টাকা নির্ধারিত খাতে ব্যয় করেনি রিজেন্ট টেক্সটাইল

পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া টাকা নির্ধারিত খাতে ব্যয় করেনি রিজেন্ট টেক্সটাইল

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া টাকা নির্ধারিত খাতে ব্যয় করেনি রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস। শেয়ারহোল্ডারদের এই টাকা তারা ব্যাংকে বিনিয়োগ করেছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছে কোম্পানি কতৃপক্ষ। কোম্পানি বলছে, আগামী এজিএমের নতুন করে অর্থ ব্যবহারের সময়সীমা বাড়াবে। সেই সময়ের মধ্যেই বিনিয়োগ করা হবে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এক কথা বলে টাকা নিয়ে এখন বিনিয়োগ করছে অন্য খাতে। ফলে বিনিয়োগকারীরা যে আশায় বিনিয়োগ করেলো তা পূরণ হয়নি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিৎ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা আইনের আওতায় এনে কোম্পানিটিকে শাস্তি দেওয়া। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো কোম্পানি এসব করতে না পারে।

চট্টগ্রামের হাবীব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট টেক্সটাইলস। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটি আধুনিকায়ন ও ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন করে একটি কারখানা তৈরির অঙ্গীকার করে পুঁজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। ৫ কোটি শেয়ারের বিনিময়ে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে এই টাকা নেয়। যা ব্যবহারের মেয়াদ ছিলো ৩১ অক্টোবর ২০১৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। যা শতাংশের হিসেবে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এখন মেয়াদও শেষ হয়েছে কিন্তু সেই অর্থ ব্যয় করেনি।

গত সেপ্টেম্বর মাসে আইপিও’র অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত ডিএসইকে পাঠোনো কোম্পানির চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়, কোম্পানি ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৯ টাকা ব্যয় করেছে। যা শতাংশের হিসেবে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর আইপিও’র ১১৯ কোটি টাকা গত দুই বছর আমানত হিসেবে ব্যাংকে বিনিয়োগ করেছে। এতে সুদ বাবদ কোম্পানির মুনাফা হয়েছে ১৪ কোটি ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮২৩ টাকা। সব মিলে ১৩৩ কোটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার ৪১১৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অথচ পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলনের সময় ৮২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকায় কোম্পানির আধুনিকায়ন, সংস্কার ও ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ৯৬২ টাকা ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নতুন করে তৈরি পোশাক কারখানা করার পেছনে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আর বাকি টাকা আইপিও’র খরচ বাবদ ব্যয় করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কোম্পানি সেই টাকা আর ব্যয় করেনি। বরং এখন তারা পরিকল্পনা করছে, আগামী জানুয়ারিতে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) আইপিও’র অর্থ ব্যয়ের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। শেয়ার হোল্ডারদের সম্মতিতে তা পাস করানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) অঞ্জন কুমার ভট্রাচার্য বলেন, এবছর হঠাৎ করেই চট্টগ্রামে অনেক বন্যা হয়েছে। বন্যার পর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে চার-পাঁচ মাস কোনো কাজ করতে পারিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, গ্যাস সাপ্লাই না দেওয়ার কারণে কোম্পানির মেশিনারিজগুলো বসানো হচ্ছে না। গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলেছিল ডিসেম্বরে গ্যাস সংযোগ দেবে। এখন বলছে আগামী বছরের এপ্রিলে দেবে।

তাই কোম্পানির আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নতুন করে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে। আশা করছি, সভায় সময় বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, আইপিওর টাকা ব্যবহার করতে পারিনি, এটা ঠিক। টাকা ব্যাংকে আছে। সময় মতো ব্যয় করা হবে। রিজেন্ট টেক্সটাইল রাস্তার কোম্পানি নয়, টাকা ব্যয় করবে না এমনটি ভাবা ঠিক না। আমাদের কোম্পানি ভুয়া নয়। কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতার কারণেই কোম্পানির এমন নাজুক দশা।

তিনি বলেন, কোম্পানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে কোম্পানির সুদক্ষ পরিচালনার ওপর। কিন্তু সেটা করতে তারা অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত সময় আইপিও’র অর্থ ব্যবহার না করার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হবে। এরপর স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করা হবে। বিএসইসি’র একাধিক কর্মকর্তারা জানান, কিছু কোম্পানি যে সময়মতো আইপিও টাকা কাজে লাগাচ্ছে না তা কমিশনের পর্যবেক্ষণে আছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কমিশন। – বাংলানিউজ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ