রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপপ্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতে পারবেন না ব্যাংকাররা

প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিতে পারবেন না ব্যাংকাররা

প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়া যাবে না। আর পেশাগত দায় তৈরি হয় এমনক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উপঢৌকন নেওয়া নিষিদ্ধ। এমনকি পোশাগত সুবিধা আদায়ে রাজনৈতিক বা পর্ষদের প্রভাবও কাজে লাগানো যাবে না। এছাড়া কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ছাড়া কেউ অন্য কোন কাজ বা ব্যবসাও করতে পারবে না। অর্থাত্ স্বার্থের সংঘাত থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যাংকারদের জন্য তৈরি করা আচরণবিধিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

‘কোড অব কন্ডাক্ট ফর ব্যাংকস অ্যান্ড নন-ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস’ শীর্ষক এ নীতিমালা গত সোমবার প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতিমালার আলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজস্ব আচরণবিধি তৈরি করতে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী বছরের প্রথম দিন থেকে ব্যাংকের তৈরি নিজস্ব আচরণবিধি পালন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

সরকার প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালাটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সততা, নৈতিকতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পেশাগত পরিচয় বা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ব্যাংকাররা অন্য কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক বা অন্য কোনো সুবিধা নিতে পারবেন না। এমনকি বাড়িভাড়া, গাড়ির লাইসেন্স গ্রহণ বা নবায়ন এবং ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সম্পত্তি ক্রয়ের মতো ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও পেশাগত পরিচয় বা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ব্যবহার তাদের জন্য নিষিদ্ধ। যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যাংকার অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এমন কোনো উপহারসামগ্রী গ্রহণ করবেন না, যাতে তার নিজের পেশাগত দায় সৃষ্টি হয়। এমনকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিজ পরিবারের সদস্যদেরও এ ধরনের উপহার গ্রহণ করতে দেবেন না ব্যাংকার। পোস্টাল বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যদি এ ধরনের কোনো উপহারসামগ্রী আসে, তাহলে ব্যাংকার তা গ্রহণ করবেন ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই প্রাতিষ্ঠানিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ওই উপহারসামগ্রী হস্তান্তর করতে হবে।

ব্যাংকারদের পেশাগত দায় তৈরি করে, এমন কোনো ঘটনা প্রতিষ্ঠানের নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়। এছাড়া কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রধান বা তার প্রতিনিধি কোনো ব্যাংকারকে উপহার দিতে চাইলে, কোনো ধরনের অবমাননা করা ছাড়াই তা এড়ানোর প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি যদি এড়ানো সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ব্যাংকারদের।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের খরচে ব্যক্তিগত উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিগত সুবিধাসংশি­ষ্ট কোনো ধরনের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠানকে এমন কোনো উপদেশ, পরামর্শ বা নির্দেশনা দেওয়াও যাবে না, যা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্য থেকে শেয়ার ধারণ, মুনাফা ভাগাভাগি অথবা কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি নেওয়া যাবে না নিজের বা পরিবারের স্বার্থ উদ্ধারে প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরিচয় গোপন রেখে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক বা অনৈতিক সুবিধাও। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো চাকুরে যদি নিজস্ব ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালাতে চান, সেক্ষেত্রে তা অবশ্যই শুধু চাকুরের নিজ পরিবারের সদস্যদের দিয়ে পরিচালিত হতে হবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করার পাশাপাশি নিজস্ব ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পূর্ণ ঘোষণাসংবলিত তথ্য দিতে হবে।

গ্রাহক তথ্যের নিরাপত্তার ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য ও লেনদেনের যেকোনো বিবরণ সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। উপযুক্ত ও আইনসিদ্ধ কর্তৃপক্ষ বা আদালতের আদেশ ছাড়া এ ধরনের তথ্য প্রকাশ কিংবা বিনিময় করা হলে তা হবে নৈতিক মানদণ্ডের গুরুতর লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা হবে চুক্তিভঙ্গের শামিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ