সরকারের একগুঁয়েমি নীতি সুন্দরবনের সুরক্ষাকে বিপন্ন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, সরকার নাছোড়বান্দার মতো দেশের পরিবেশ, জলবায়ু এবং মানুষকে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রুহুল কবির। গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ‘সুন্দরবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলে’র দাবিতে করা সমাবেশে চালানো হামলার বিষয়টি উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। আন্দোলনকারী সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী হামলা চালায় বলে মন্তব্য করেন তিনি। দলের পক্ষ থেকে এ হামলার নিন্দাও জানান তিনি।
রুহুল কবির বলেন, ‘কয়লা পুড়িয়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে জাগ্রত দেশবাসী প্রতিবাদমুখর। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মানববসতি অনিবার্য ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য নির্মূল হয়ে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের বিশ্বঐতিহ্য চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।’
এর পরও সরকার নাছোড়বান্দার মতো দেশের পরিবেশ, জলবায়ু এবং মানুষকে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের যে মহাদুর্নীতি, সেটির আরেকটি বড় সুযোগ সৃষ্টি হবে এই রামপাল প্রকল্পে, সে জন্য সরকার এখন মরিয়া হয়ে প্রতিবাদকারীদের ওপর চালাচ্ছে নিষ্ঠুর উৎপীড়ন। রক্ত ঝরাচ্ছে, দেশ ও পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারীদের ওপর।’
একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ-পদোন্নতি কমিটির যিনি প্রধান, তিনি গণবদলি ও পদোন্নতির ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইসির নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ বিষয়ে ইসির সচিবকে নোট দিয়েছেন। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা দেশবাসীর মধ্যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এতে স্বয়ং ইসির অনেক কর্মকর্তাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
এ ঘটনায় কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কমিশনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ডিসেম্বর থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রাক্কালে অশুভ উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পিত গণবদলি ও পদোন্নতির ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি-না, সেটি নিয়ে সবার মনে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের এ ব্যাপক পরিবর্তন একটি ‘সুদূরপ্রসারী নীল-নকশার অংশ’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনগুলো প্রভাবিত করার জন্যই একটা চক্রান্ত জাল বিস্তারের আলামত কি-না, সেটাই দেশের ভোটারদের এখন ভাবিয়ে তুলেছে।’
সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কয়েক দিন আগে সিলেটের এক সভায় মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারে আমরাও দায়ী।’ সেই তিনিই গতকাল সংসদে বলেছেন, ‘সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার হয়নি, লেনদেন হয়েছে।’ আবার তিনি এও বলেছেন যে, ‘তবে সামান্য কিছু অর্থ পাচার হয়েছে।’”
এ ধরনের ‘স্ববিরোধী বক্তব্য’ আওয়ামী লীগ নেতাদের চিরাচরিত টেকনিক বলে উল্লেখ করেন রিজভী আহমদ। তিনি বলেন, ‘আসলে ক্ষমতাসীনদের উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতারাই এই লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারে জড়িত বলে তাদের চাপেই অর্থমন্ত্রীকে আগের কথা থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হয়েছে, তাঁকে আবারও বলির পাঁঠা করা হয়েছে। এটা সর্বজনবিদিত যে, সরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাটে শূন্য হয়ে গেছে। সরকারের লুটপাট আর দুর্নীতিতে তাঁরা এখন টালমাটাল হয়ে গেছেন। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, লুটপাটের জন্য একদিন আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বাজেটকে ‘জাহাজমার্কা বাজেট’ উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যে ফাঁকা, ফাঁপা শূন্যগর্ভ তা দেশ-বিদেশের কারো নিকট অজানা নয়। তাই যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেন না কেন, তাতে লাভ হবে না।’