সোমবার, মে ৬, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়ক্লাবগুলোকে অর্থ সাহায্যের কথা নাজমুল বলেননি/বলেছিলেন

ক্লাবগুলোকে অর্থ সাহায্যের কথা নাজমুল বলেননি/বলেছিলেন

স্পোর্টস ডেস্ক (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

যত দিন গড়াচ্ছে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে জটিলতা বাড়ছে। যে আসর শুরুর কথা মার্চে, তা জুলাইতেও মাঠে গড়ায়নি। আগস্টের একদম শেষ দিকে শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে; কিন্তু তা হবে কি না সন্দেহ। রাজ্যের সমস্যা এসে গ্রাস করেছে।
বার তিনেক পেছানোর পর ২৫ জুলাই দলবদলের কথা; কিন্তু তা নিয়েও জেগেছে বিস্তর সংশয়-সন্দেহ। ক্লাবগুলোর আপত্তি-ঈদের আগে দলবদল করলে মোটা টাকা অগ্রিম দিতে হবে। সে অর্থের জোগান দেবে কে? ক্লাবের নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই, যেখান থেকে টাকা দেওয়া সম্ভব। ঈদের আগে দাতারা অর্থ দিতে রাজি হবেন না। এ মুহূর্তে দলবদল করতে তাই বোর্ডের আর্থিক সাহায্য দরকার। গত ১০ জুলাই বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তথা বোর্ডের কাছে অর্থ সাহায্যের দাবিতে সিসিডিএমের সভা বয়কটের ঘটনাও ঘটেছে। ভাবা হচ্ছিল, তার পরপরই বরফ গলবে। হয়তো ঈদের আগেই ১২ ক্লাবকে অর্থ সাহায্য দেবেন বোর্ডপ্রধান। কিন্তু বাস্তব অবস্থা উল্টো। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাফ না-‘আমি অর্থ সাহায্যের এমন কোন প্রতিশ্রুতি দেইনি।’
ক্লাবগুলো এমনিতেই লিগ না খেলতে নানা ছলছুতো আঁটছে। তার মধ্যে বোর্ডপ্রধানের এমন মন্তব্যে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে ক্লাবপাড়ায়?
বিসিবি সভাপতি অর্থ সাহায্য দিতে না করার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। এ ইস্যুতে ১২ ক্লাবে পরিষ্কার বিভাজন। দুই জনপ্রিয় শিবির আবাহনী, মোহামেডান এবং আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়া, শক্তিশালী শেখ জামাল ধানমণ্ডি ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন একদিকে। এই পাঁচ শিবির বিসিবি সভাপতির পক্ষে। শেখ জামাল ধানমণ্ডির কর্ণধার মঞ্জুর কাদের, মোহামেডান লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, আবাহনী ক্রিকেট কমিটির অন্যতম শীর্ষ কর্তা আই এইচ মল্লিক ও ব্রাদার্সের ক্রিকেট সম্পাদক আমিন খান একই সুরে কথা বলেছেন। তাদের কথার সারমর্ম, ‘বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কখনই অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেননি। ক্লাবগুলো অর্থ সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু তিনি দেব এমন ওয়াদা করেননি।’ আর কলাবাগান, সিসিএস, খেলাঘর সমাজকল্যাণ ও প্রাইম দলেশ্বর বিপরীত অবস্থানে। এ ক্লাবগুলোর দাবি, বোর্ডপ্রধান অবশ্যই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারা এটাকে ওয়াদার বরখেলাপ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ বলে দাবি করছে।

শেখ জামাল ধানমণ্ডির ডিরেক্টর ইনচার্জ মঞ্জুুর কাদের সকালের খবরকে জানান-
‘আসলে ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে আমিই উদ্যোগী হয়ে বোর্ড সভাপতির কাছে অর্থ অনুদান চেয়েছিলাম। যুক্তি হিসেবে বলেছিলাম- ক্লাবগুলোর প্রকৃত ও যথার্থ আয়ের উত্স নেই। অথচ দল গড়তে দরকার বিপুল পরিমাণ অর্থের।  তাই বোর্ড সভাপতির কাছ থেকে সাহায্য বা অনুদান যাই বলুন না কেন, তা চেয়েছিলাম। তবে তিনি দেবেনই তা বলেননি। আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি হ্যাঁ বলেননি। তবে হাবভাব ও শরীরী অভিব্যক্তিতে বুঝিয়েছিলেন তার সম্মতি আছে। তবে কত দেবেন, আদৌ দেবেন কি না, দিলেও কবে দেবেন-তা কিছুই বলেননি। আমি ঠিক জানি না তিনি কী বলেছেন। আমি এখনও আশাবাদী, আমরা তার কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাব। খুব শিগগিরই বসব বোর্ড সভাপতির সঙ্গে। আশা করছি সেখানেই বিষয়টির সমাধান হবে।’

মোহামেডান লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুঁইয়া এই প্রসঙ্গে নিজের ব্যাখায় বলেন-
‘ক্লাবগুলো তো ইতোমধ্যেই ৭ লাখ টাকা অগ্রিম পেয়েছে। বিসিবি সভাপতির গত বৃহস্পতিবারের বক্তব্য সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করব না। কারণ তিনি বলেননি যে দেবেন না। তার কথার শেষ অংশে ছিল, বোর্ডে বিষয়টি তোলা হবে। যদি বোর্ড মনে করে তাহলে অবশ্যই দেওয়া হবে। আমারও মনে হয় বোর্ড সভায় বিষয়টি সর্বসম্মতভাবেই পাস হবে।’

ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর জানালেন-
‘আমিও ছিলাম ওই সভায়। সেখানে দলবদল ও লিগ নিয়ে বোর্ড সভাপতি আমাদের সঙ্গে অনেক খোলামেলা কথাই বলেছেন। আমরা বৃষ্টির মধ্যে লিগ খেলতে চাইনি। এক পর্যায়ে অর্থ সাহায্যের কথা উঠল। কিন্তু আমার যতটুকু মনে পড়ে নাজমুল হাসান পাপন কখনই বলেননি বোর্ড থেকে সব ক্লাবকে অত টাকা করে সাহায্য বা অনুদান দেওয়া হবে। তবে সরাসরি ক্লাবগুলোর দাবিকে অগ্রাহ্য করেননি। তার আকারে-ইঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছিল, ক্লাবগুলো কিছু টাকা পাবে।’

আবাহনী লিমিটেডের যুগ্ম ক্রিকেট সম্পাদক আই এইচ মল্লিক এ বিষয়ে তার ব্যাখায় বলেন-
‘ঠিক প্রতিশ্রুতি বলতে যা বোঝায় আমার মনে হয় না বিসিবি সভাপতি ক্লাবগুলোর কাছে তা করেছেন। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি টাকা দেবেন এমন কথা বলেননি। আমরা ক্লাবগুলো তার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তিনি বিবেচনা করে দেখার কথা বলেছিলেন। আমার মনে হয় ক্রিকেটারদের নিলাম ও রোটেশন সিস্টেমে ক্লাবগুলোর খরচ কমবে আরও। তাই আর সাহায্যের দরকার পড়বে না। বুধবার সিসিডিএম সভায় উপস্থিত থেকে অর্থের দাবি তোলা মামুন আমাদের ক্লাব প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন। কিন্তু তিনি ক্লাবের নীতিনির্ধারক নন। তাই তার মন্তব্য ধর্তব্য নয়।’

সিসিএসের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ চৌধুরী নিকু বললেন-
‘কত দেবেন, এটা ঠিক হয়নি। তবে বোর্ড সভাপতি অবশ্যই ক্লাবগুলোকে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমিও ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম। ক্লাবগুলোর নানা দাবির মুখে এক সময় তিনি ক্লাবগুলোকে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এটা ঠিক, কত করে দেবেন, তা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের মানে ক্লাবগুলোর দাবির মুখে তিনি অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথা বলেছেন। এখন বোর্ড সভায় সবার সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটাও অস্বাভাবিক ঠেকছে আমার কাছে। তিনি ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে বসে যে বৈঠকে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেখানে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির চারজন সদস্য ছাড়া নয়জন উপস্থিত ছিলেন। তারাই কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নন? এখন নতুন করে বোর্ড সভা ডেকে টাকা দেওয়ার চিন্তাভাবনা কেন বুঝতে পারছি না। বোর্ড সভাপতির মুখের কথাই বড় দলিল। এত বড় পদে থেকে কথা ঘোরানো ঠিক নয়। এটা অসততার শামিল। আমি জোর গলায় বলতে পারি, আমাদের ক্লাবগুলোর দাবির মুখে তিনি অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন না করার অর্থ মিথ্যাচার। বিসিবি সভাপতি পদের একটা মর্যাদা আছে। তার কথার নড়চড় হওয়া ঠিক নয়।’

কলাবাগানের ক্রিকেট সম্পাদক রিয়াজ বাবু বলেন-
‘নাজমুল হাসান পাপন সাহেব দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দ্বৈত আচরণ করে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার আবার তার প্রমাণ মিলল। তিনি ক্লাবকর্তাদের সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েও এখন তা অস্বীকার করছেন। অথচ আইসিসির সভায় যোগদানের আগে ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছিলেন-যতটুকু পারা যায় ক্লাবগুলোকে ততটা সাহায্য করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখন তিনি বেমালুম অস্বীকার করছেন। তার মতো মানুষের কাছ থেকে এমন মিথ্যাচার মোটেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, রোটেশন সিস্টেমে ক্লাবগুলোর অর্থ খরচ কম হবে। এটা পুরোপুরি সত্য ও যৌক্তিক নয়। আমরা যারা মাঝারি মানের দল গড়ি, তাদের আগেও গড়পড়তা প্রায় কোটি টাকা লাগত। এবারও বিদেশি ক্রিকেটারের পেমেন্ট মিলে এক কোটি টাকাই খরচ হবে। আমরা হিসাব কষে দেখেছি। হ্যাঁ, অর্থ কম লাগবে মোহামেডান, আবাহনী ও শেখ জামালের। বোর্ডের সাহায্য না পেলে ঈদের আগে দলবদল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া কঠিন হবে। কারণ ২৫ জুলাই অকশনে অর্থ না লাগলেও তার পরপরই ক্রিকেটাররা অগ্রিম অর্থ দাবি করবে। যেহেতু আগস্টের প্রথমভাগেই ঈদ। তাই ঈদের আগে ক্রিকেটারদের অগ্রিম অর্থ দিতেই হবে। সেই অর্থ আসবে কোত্থেকে? এখন ডোনারদের কাছে টাকা চাইলে পাওয়া যাবে? কোনো কোনো ডোনার যারা প্রায় সবাই ব্যবসায়ী, তারা এখন টাকা দিতে রাজি হবেন কী? সে ক্ষেত্রে ঈদের পর দলবদল দিতে হবে।’

খেলাঘর সমাজকল্যাণ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মো. রুহুল আমিন বলেন-
‘বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অবশ্যই কমিটমেন্ট করেছিলেন। আমিও ছিলাম ওই সভায়। কথা প্রসঙ্গে তিনি অর্থ সাহায্যের কথা বলেছিলেন।
৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ছিল তার কণ্ঠে। তার ওই প্রতিশ্রুতির কথা শুনেই আমরা একটু নড়েচড়ে বসেছিলাম। আশা ছিল ভালো দল গড়ার। কিন্তু এখন দেখি তিনি না করছেন। এটা দুঃখজনক। এতে করে আমরা পড়েছি বিপাকে।  এদিকে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতিই শুধু নয়, বিসিবিপ্রধান আমাদের আরও একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা হল বিভিন্ন ক্লাব  ক্রিকেটারদের যে অগ্রিম অর্থ দিয়েছে তা ফেরতের সমুদয় ব্যবস্থা  নেবে বোর্ড। ওই সমস্যার সুরাহা না হলে লিগ হওয়া কঠিন।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ