ষ্টাফরিপোর্টার (বিডিসময়২৪ডটকম)
দুই বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির জাতীয় সম্মেলন হয় না চার বছর ধরে। গত মার্চে হওয়ার কথা থাকলেও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর সে সময় স্থগিত হয়ে যায় সম্মেলন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে যেনতেন হলেও এবার সম্মেলন করতে চায় দলটি।
সম্মেলনে নেতৃত্ব পর্যায়ে কে আসবেন, না আসবেন তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত না হলেও চমক থাকছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাদ পড়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির নেতারা জানান, ঈদের পর সম্মেলন করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন তারা। এরই মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতির উপ-কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা হয়েছে।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুই বছর পর পর সম্মেলনের বিধান রাখে বিএনপি। এরপর জরুরি অবস্থা উঠে গেলে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ বিএনপি তাদের সম্মেলন করে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন (আরপিও) অনুযায়ী ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির সম্মেলন করার কথা ছিল।
তবে এক আবেদনে নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে সম্মেলনের জন্য চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এরপর ১৯ মার্চ সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করেও তা স্থগিত করে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সম্মেলনের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকে তবে ঈদের পরেই সম্মেলন হবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী সম্মেলন আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ না হয়ে অনেকটা বর্ধিত সভার মতো হবে। তবে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটেই নেতৃত্ব ঠিক করে শুধুমাত্র ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘আগামী রমজান মাসকে আমরা সাংগঠনিক মাস হিসেবে ঘোষণা করেছি। এই সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিরসন করা হবে। কারণ এখন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কে হচ্ছেন মহাসচিব: ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এবার ভারমুক্তি হবেন কি না, সে নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিএনপি। দলের একটি অংশ তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে দেখতে চাইলেও দলের আরেকটি বড় অংশই তার বিরোধী। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির বেশ কজন নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল না। তারা মির্জা ফখরুলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
চেয়ারপারসনের অনুরোধ বিষয়ে তারেক রহমানের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘তারেক রহমান মহাসচিব পদে বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ কাউকে চাইছেন। এক্ষেত্রে তার প্রথম পছন্দ স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য তরিকুল ইসলাম।’
এ নিয়ে তারেক রহমান তরিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথাও বলেছেন বলে বিএনপির সূত্র জানিয়েছে। তবে এই পদ নিতে রাজি হননি তরিকুল ইসলাম।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, মহাসচিব পদে খালেদা জিয়ার এখন পর্যন্ত পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছেন মির্জা ফখরুল। রাজনৈতিক মহলে মির্জা ফখরুলের একটি ইতিবাচক ভাবমুর্তি আছে বলে মনে করেন খালেদা জিয়া।
স্থায়ী কমিটিতে রদবদল: আসন্ন সম্মেলনে মহাসচিব পদ ছাড়াও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে। জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির প্রবীন সদস্য এম. শামসুল ইসলাম অসুস্থ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধে জেলে থাকায় তাদের স্থানে ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ, আবদুল্লাহ-আল নোমান ও ওসমান ফারুক অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
এর বাইরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে ভাইস-চেয়ারম্যান করা হবে। পরিবর্তন আসতে পারে দলের যুগ্ম মহাসচিব পদেও। বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক রহুল কবির রিজভীকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হতে পারে। আরেক যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানকে কেন্দ্রীয় কমিটির আরো উপরের দিকে নিয়ে আসার চিন্তা করছে বিএনপি।
নতুন করে যুগ্ম মহাসচিব পদে আসতে পারে বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। প্রবীণরা সরে যাবেন নতুনদের জন্য।