সিয়াম-সাধনার মাস রমজান শুরু হলো। রোজা এলেই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। সেই স্থবিরতা কাটাতে এবং দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে দলের নেতারা ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হবে ‘ইফতার রাজনীতি’। প্রতিবারের ন্যায় এবারও চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা আলাদা আলাদাভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করছেন। তবে এবার বিএনপি নেতারা ইফতার পার্টির আড়ালে আগামী নির্বাচনের মহড়াও দেবেন।
কার ইফতার পার্টি কতটা জমজমাট হবে, কোন নেতা কার ইফতারে গেলেন আর কে গেলেন না তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে একটা চাপা গুঞ্জন ও দলীয় কর্মীদের আগ্রহের কমতি থাকে না। চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও দলাদলির প্রেক্ষাপটে তাদের ইফতার পার্টিগুলোর প্রতি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তো বটেই সাধারণ মানুষেরও কৌতূহল থাকে।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এবার ইফতার পার্টির আড়ালে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা চালাবেন। তাই এবার ইফতার পার্টির আয়োজন হবে জৌলুসপূর্ণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারীরা আগামী ১৪ জুলাই পাঁচলাইশ কিং অব চিটাগাংয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করছেন। অন্যদিকে নগর বিএনপির রাজনীতিতে আমীর খসরুর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রতিবারের ন্যায় এবারও পৃথকভাবে ইফতার পার্টি দেবেন। তবে গতকাল পর্যন্ত তার দিনক্ষণ ঠিক করেননি। নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও তার অনুসারীদের জন্য আলাদাভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি হাটহাজারী-জালালাবাদ আসন থেকে (চট্টগ্রাম-৫) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা নিয়ে সেখানকার কর্মী-সমর্থকদের জন্য একাধিক ইফতার পার্টি দিচ্ছেন। শুধু মীর নাছির নন, আগামী নির্বাচনে নগরীর কোতোয়ালী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিন্তা মাথায় রেখে নগর বিএনপির সহসভাপতি শামসুল আলমও ঢাকঢোল পিটিয়ে নেতাকর্মী-সমর্থকদের জন্য ইফতার পার্টি দিচ্ছেন। তবে এখনও শিডিউল ঠিক হয়নি।
আলাদাভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন সম্পর্কে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আলাদা কর্মসূচিতে কোন্দল বাড়ে আবার রাজনীতিও চাঙ্গা হয়। তাছাড়া নেতারা দীর্ঘদিন ধরে এটা করে আসছেন। তবে কর্মীরা সব জায়গাতেই যাচ্ছেন।’
শুধু নগর নেতারা নন, জেলা বিএনপির নেতারাও আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ইফতার পার্টির আড়ালে নির্বাচনী শোডাউন দেবেন।
জানা গেছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল প্রতিবারের ন্যায় এবারও পৃথকভাবে জাঁকজমকপূর্ণ ইফতার পার্টি দিচ্ছেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান এবার নগরী ও বোয়ালখালীতে তার অনুসারীদের নিয়ে দুটি পৃথক ইফতার পার্টির শোডাউন দেবেন। আগামী নির্বাচনে বোয়ালখালী-চাঁন্দগাও আসন (চট্টগ্রাম-৭) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। সাবেক এমপি সারোয়ার জামাল নিজামও এবার ইফতার পার্টির শোডাউন দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে আনোয়ারা- পশ্চিম পটিয়া আসন থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই এবার ওই দুই এলাকায় তার অনুসারীদের জন্য তিনি ইফতার পার্টির আয়োজন করছেন। বিষয়টি স্বীকার করে সুপ্রভাত বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন তো আমাদের রাজনীতির একটা অংশ। তাছাড়া আমি তো আগেও নির্বাচন করেছি। স্বাভাবিকভাবে এবারও করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জন্য আমি আগেও ইফতার পার্টি দিয়েছি। সামনে যেহেতু নির্বাচন তাই এবার একটু বড় করে করব।’
ইফতার রাজনীতির জৌলুস বইবে উত্তর জেলাতেও। উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম আলাদা আলাদাভাবে তাদের অনুসারীদের নিয়ে ইফতার পার্টি দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকারও প্রতিবারের ন্যায় এবারও তার অনুসারীদের নিয়ে ইফতার পার্টি দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন তাই এবার ইফতার পার্টি অধিকতর গুরুত্ব রাখে। যত বেশি ইফতার পার্টি হবে ততই আমাদের কর্মী-সমর্থক বাড়বে। এটাকে আমি বিভক্তি হিসেবে মানতে নারাজ। কেননা, প্রত্যেক নেতাই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় তার কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে ইফতার পার্টি দেয়ার অধিকার রাখেন।’